
ইসরাইলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান (বাঁয়ে), ইরানের হামলায় তেল আবিবের কাছে বিধ্বস্ত একটি ভবন
ইরানে ইসরাইলের হামলার পর এখন দুই দেশ পাল্টাপাল্টি হামলা চালাচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচ দফায় ইসরাইলে দেড় শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে তেহরান।
ইসরাইলের মোট তিনটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে তেহরান। পাশাপাশি দুই ইসরাইলি পাইলটকে আটক করারও দাবি করা হয়েছে। ইরানের সংবাদমাধ্যম তেহরান টাইমসের খবরে সেনাবাহিনীর বিবৃতির বরাতে দাবি করা হয়েছে, সর্বশেষ শনিবার ভূপাতিত করা হয়েছে একটি যুদ্ধবিমান। ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের আকাশে ইসরাইলি ওই যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়।
এ ছাড়া শুক্রবার দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়। ইসরাইলের আয়রন ডোম বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যর্থ করে তেল আবিবে প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরে হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান। ইরানের পাল্টা হামলায় নিহত হয়েছেন ৫ ইসরাইলি। আহত হয়েছেন ৬৩ জন।
ইরানের সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পশ্চিম ইরানের আকাশে ইসরাইলি ওই যুদ্ধবিমান অবৈধ অনুপ্রবেশ করে। পরে সৈন্যরা ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ইসরাইলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেন। ওই যুদ্ধবিমানের পাইলটকে জীবিত আটক করা হয়েছে।
তেহরান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ এই যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার মাধ্যমে ইরান এখন পর্যন্ত ইসরাইলের অন্তত তিনটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে। বাকি দুটি বিমানের একটির পাইলট নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া অপর পাইলটকেও ইরানি বাহিনী আটক করেছে।
শুক্রবার তেহরানের বিভিন্ন আবাসিক ভবন, সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। এর জবাবে ইসরাইলি ভূখ-ে সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে পাঁচ ধাপে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইরানের সামরিক বাহিনী বলেছে, ইরানি হামলায় ইসরাইলের বিভিন্ন অঞ্চলের ১৫০টিরও বেশি সামরিক ও গোয়েন্দা স্থাপনা ধ্বংস কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শনিবারও ইসরাইলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে কামিকাজে ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালায় ইরান।
এর আগে ইরানে শুক্রবার ভোররাতে বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় হামলার পর শনিবার ইসরাইল দেশটিতে কয়েক দফা হামলা চালায়। আলজাজিরা জানিয়েছে, ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন বলেছেন, ইরানের ৪০টির বেশি সামরিক স্থাপনায় ৭০টি বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এসব স্থাপনার মধ্যে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং কমান্ড অবকাঠামোও রয়েছে। এ পর্যন্ত ইসরাইলের হামলায় ইরানে ৮০ জন নিহত এবং ৩২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহত হয়েছেন আরও তিন পরমাণু বিজ্ঞানী।
এদিকে ইরান তার নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের নাগরিকদের সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে শনিবার জারি করা এক আদেশে খামেনি মেজর জেনারেল মজিদ মোসাভিকে ইরানের বিমান বাহিনী প্রধান নিয়োগ করা হয়েছে। ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে দ্বিতীয় দিনের মতো পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে ইসরাইলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কার্তজ বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ না করলে তেহরান জ্বলবে। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরাইলের চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ইসরাইলকে সহায়তার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে সতর্ক করেছে ইরান। উভয় পক্ষকে থামার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
ইরানের আরও তিন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত ॥ ইসরাইলের হামলায় ইরানের আরও তিন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। শনিবার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এ নিয়ে ইসরাইলের হামলায় ইরানের ৯ জন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হলেন। ইরানের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইহুদিবাদী সরকারের সন্ত্রাসী হামলায় দেশটির তিনজন পরমাণু বিজ্ঞানী আলী বেকাই করিমি, মনসুর আসগারি এবং সাঈদ বোরজি শহীদ হয়েছেন।
ইরানি গণমাধ্যম এর আগে জানিয়েছিল যে ইসরাইলি হামলায় আরও ছয়জন নিহত হয়েছেন। এর আগে ইসরাইলি হামলায় নিহত হওয়া পরমাণু বিজ্ঞানী ফেরেইদুন আব্বাসি ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইরানের পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সংসদ সদস্য হিসেবেও দায়িত্বরত ছিলেন তিনি। ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের মাধ্যমে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পক্ষপাতী ছিলেন আব্বাসি।
চলতি বছরের মে মাসে ইরানের টিভি চ্যানেল এসএনএনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি পরমাণু অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। ইসরাইলি হামলায় নিহত মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি তেহরানের আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ছিলেন। আবদুল্লাহামিদ মিনৌচেহর ইরানের শহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ছিলেন। এ ছাড়া আহমেদ রেজা জোলফাঘারি শহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন এবং আমির হোসেইন ফেকহি শহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।
অপরদিকে আইআরজিসির এরোস্পেস ফোর্স বা বিমান ও মহাকাশ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর প্রধান ছিলেন আমির আলি হাজিযাদেহ। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট কর্মসূচির একজন শীর্ষ কর্মকর্তাও ছিলেন তিনি। ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্সেস, আইডিএফ জানিয়েছে, আইআরজিসির বিমানবাহিনীর বেশ কয়েক কমান্ডারের সঙ্গে মাটির নিচে একটি ঘাঁটিতে অবস্থান করছিলেন আমির আলি হাজিযাদেহ। আইডিএফের বিবৃতিতে তারা দাবি করেছে, গত বছরের অক্টোবর ও এপ্রিলে ইসরাইলে যে মিসাইল হামলা করেছিল ইরান, তার নির্দেশদাতা ছিলেন আমির আলি হাজিযাদেহ।
ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরাইলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ॥ ইসরাইলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তেল আবিব দাবি করেছে, তারা কিছু ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে পেরেছে, তবে ক্ষতির মাত্রা উল্লেখযোগ্য। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে অন্তত চার ইসরাইলি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধ শতাধিক। ইসরাইলের তেল আবিব, জেরুজালেমসহ বিভিন্ন শহরে বিস্ফোরণ শোনা গেছে। বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।
রিশন লেজিওন ও আশপাশের এলাকায় মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে। জরুরি উদ্ধাকারী বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ দফায় ইসরাইলের দিকে দেড় শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে তেহরান। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং ইরানি মিডিয়ার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট ও রয়টার্স।
এদিকে, ইরানি হামলায় ইসরাইলের একাধিক সামরিক ঘাঁটি ও বিমান ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। তা ছাড়া তেহরান হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, তারা হামলা আরও জোরালো করবে ও ইসরাইলকে রক্ষার চেষ্টাকারী যে কোনো দেশের ঘাঁটি তাদের লক্ষ্যবস্তু হবে। তবে ইসরাইলি বিমান বাহিনী (আইএএফ) বেশিরভাগ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র আকাশপথেই ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করেছে। এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ফার্স নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে ইরানের ওপর ইসরাইলি হামলার জবাব শেষ হয়নি।
বরং ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের হামলা চলবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ইরানের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে ইরান ওই অঞ্চলে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোও লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।
ইসরাইলের সহায়ক তিন দেশকে সতর্ক করলো ইরান ॥ ইসরাইলকে সহায়তার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে সতর্ক করেছে ইরান। বলা হয়েছে, ইসরাইলকে লক্ষ্য করে চালানো ইরানি হামলা প্রতিহত করতে সাহায্য করলে তাদের এই অঞ্চলে থাকা ঘাঁটি ও জাহাজ লক্ষ্যবস্তু করা হবে। ইরান সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যদি কোনো দেশ ইরানের হামলা প্রতিহত করতে ইসরাইলকে সহায়তা করে, তবে সেই দেশের পারস্য উপসাগরীয় ঘাঁটিসহ আঞ্চলিক সব সামরিক স্থাপনা, জাহাজ ও নৌবাহিনীর ওপর আঘাত হানা হবে।
এই হুঁশিয়ারি এমন এক সময়ে দেওয়া হলো যখন মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেন, যে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের দিকে ছোড়া ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে সহায়তা করেছে। ইসরাইলের নজিরবিহীন হামলার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে তেহরান ব্যাপক প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়। যদিও যুক্তরাজ্যের কোনো সক্রিয় সামরিক সহায়তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার তেহরানে তাদের দূতাবাস কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সম্ভাব্য প্রতিশোধের আশঙ্কায় নজরদারি জোরদার করেছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা তেহরানে তাদের দূতাবাস সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে।
ইরানের নতুন বিমানবাহিনী প্রধানের নাম ঘোষণা ॥ ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) নতুন এয়ারস্পেস কমান্ডারের নাম ঘোষণা করেছে ইরান। ইসরাইলের হামলায় শুক্রবার বিমানবাহিনী প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলি হাজিজাদেহ নিহত হওয়ার পর নতুন এই কমান্ডার নিয়োগ দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। শনিবার জারি করা এক আদেশে খামেনি মেজর জেনারেল মজিদ মোসাভিকে এ পদে নিয়োগ দেন। তিনি নিহত আমির আলী হাজিকাদেহর স্থলাভিষিক্ত হলেন।
ইসরাইলের হামলায় নিহত ৬০ ॥ ইরানের রাজধানী তেহরানে একটি আবাসিক কমপ্লেক্সে ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৬০ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ২০ জন শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। তবে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত শুক্রবার (১৩ জুন) জানিয়েছেন, ইসরাইলের প্রথম দফার হামলায় ৭৮ জন নিহত ও ৩২০ জন আহত হয়েছেন। তেহরান তার নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইরানের নাগরিকদের সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
শান্ত থাকার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের ॥ মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরাইলের চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এক্সে (পূর্বে টুইটার) দেওয়া এক বার্তায় গুতেরেস লিখেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলের বোমাবর্ষণ, আর তেল আবিবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা- যথেষ্ট হয়েছে। এবার থামার সময়। শান্তি ও কূটনীতির জয় হোক। এদিকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েনও এই সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজকের সঙ্গে কথা বলে তিনি ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করেছেন, তবে পাশাপাশি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার গুরুত্বও তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, আমি সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছি। উত্তেজনা হ্রাসে সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা রাখা জরুরি।
মার্কিন দূতের বারবার জায়গা বদল ॥ ইসরাইলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি ইসরাইলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার রাতটি উত্তেজনাপূর্ণ এবং কঠিন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, সারারাত ধরে তাকে পাঁচবার বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হয়েছে। তেহরান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে হাকাবি লিখেছেন, আজ শাব্বাত। কিন্তু এখন এখানে কঠিন সময়। চুপ থাকা উচিত। পুরো জাতিকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শনিবার ইহুদিদের সাপ্তাহিক বিশ্রামের দিনটি শাব্বাত নামে পরিচিত।
হাকাবি বলেন, শাব্বাত সাধারণত শান্তিপূর্ণভাবে কাটে, কিন্তু এবার সম্ভবত তা হবে না। ইসরাইলের কঠোর সমর্থক হাকাবি চলতি সপ্তাহের শুরুতে বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব সমন্বয় বা অনুমোদন ছাড়া ইসরাইল ইরানের ওপর সামরিক হামলা চালানোর সম্ভাবনা কম। ইসরাইলে নিযুক্ত এই মার্কিন দূত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত পাঁচবার নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। ইসরাইলে ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে বার বার জায়গা বদল করতে হয়েছে তাকে।
সুরক্ষিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে থাকতে হয়েছে। ইরানে ইসরাইলের হামলার দুদিন আগে গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা বিভাগ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত অনেক কর্মীকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। যেসব কর্মী জরুরি কাজে নিযুক্ত নন তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়।
হামলা বন্ধ না হলে তেহরান জ্বলবে ॥ ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কার্তজ বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ না করলে তেহরান জ্বলবে। সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে হামলার বিষয়ে আলাপ-আলোচনার পর কার্তজ বলেন, ইরানি স্বৈরশাসক ইরানের নাগরিকদের জিম্মিতে পরিণত করছেন এবং এমন একটি বাস্তবতা তৈরি করছেন যেখানে ইসরাইলি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর অপরাধমূলক হামলার জন্য তেহরানের বাসিন্দাদের চরম মূল্য দিতে হবে।
ইসরাইলি বিমানবন্দর বন্ধ ॥ ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দ্বিতীয় দিনের মতো পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার বিমানবন্দরের মুখপাত্র লিসা ডাইভার বলেন, বিমানবন্দরটি কবে বা কোন দিনে আবার চালু হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এ ঘোষণা ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার চলমান উত্তেজনাপূর্ণ সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে এলো, যেখানে দু’দেশই একে অপরের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
পরমানু কর্মসূচির আলোচনা অনিশ্চিত ॥ এদিকে ইসরায়েল হামলা চালানোর পর সেই হামলার ‘সহযোগী’ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার ‘কোনো অর্থ নেই’ বলে মন্তব্য করেছে ইরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেছেন, ‘আরেক পক্ষ (যুক্তরাষ্ট্র) এমনভাবে আচরণ করেছে, যাতে সংলাপের কোনো মানে থাকে না। আপনি একদিকে সংলাপের কথা বলবেন, আর অন্যদিকে ইসরায়েলকে দিয়ে ইরানের ভূখ-ে হামলার সুযোগ করে দেবেন, এটা একসাথে চলতে পারে না।’