
কানাডার ম্যানিটোবা প্রদেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া দাবানলের কারণে প্রায় ১৭,০০০ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দুর্গম এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের উদ্ধার করতে সামরিক বিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে দমকল কর্মীরা ক্রমবর্ধমান আগুনের মুখোমুখি হচ্ছেন। আগামী কয়েক দিন তাপদাহ ও শুষ্ক আবহাওয়া অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
সরকারি তথ্যমতে, বর্তমানে কানাডাজুড়ে ১৮৮টিরও বেশি দাবানল সক্রিয় রয়েছে, যার ধোঁয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। ম্যানিটোবা ও সাসকাচুয়ান উভয় প্রদেশেই এক মাসের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
শনিবার পর্যন্ত সাসকাচুয়ানে ১৭টি দাবানল সক্রিয় ছিল, যার মধ্যে আটটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কানাডিয়ান ইন্টারএজেন্সি ফরেস্ট ফায়ার সেন্টার (CIFFC) সাসকাচুয়ানের পরিস্থিতিকে ‘চরম’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
সাসকাচুয়ানের প্রিমিয়ার স্কট মো সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বর্তমানে ৮,০০০ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে তা ১০,০০০ জনে পৌঁছাতে পারে।
“পরবর্তী চার থেকে সাত দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যতক্ষণ না পর্যন্ত আবহাওয়ার ধারা পরিবর্তিত হয় ও উত্তরাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হয়,” বলেন তিনি।
আলবার্টা ও ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বিভিন্ন এলাকাও দাবানলের কারণে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।ম্যানিটোবার উত্তরাঞ্চলের ফার্স্ট নেশন সম্প্রদায় পুকাটাওয়াগান থেকে লোকজন সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় এক কর্মকর্তা জানান, পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। কানাডিয়ান আর্মড ফোর্সেস, ম্যানিটোবা ওয়াইল্ডফায়ার সার্ভিস এবং ম্যানিটোবার হেভি আরবান সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিম সামরিক বিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে লোকজনকে সরিয়ে নিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেন, “এই বিমান অভিযানের ব্যাপকতা এবং জটিলতা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন — এবং এতে অংশ নেওয়া দলগুলোর অদম্য নিষ্ঠাও।”
ম্যানিটোবার ফ্লিন ফ্লন শহরে (আনুমানিক ৫,০০০ জনের বসতি), বর্তমানে কেবল দমকলকর্মী ও জরুরি সহায়তা কর্মীরা অবস্থান করছেন। প্রদেশটির ফায়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, ম্যানিটোবায় বর্তমানে ২৫টি সক্রিয় দাবানল রয়েছে, যার মধ্যে ১১টি নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
উইনিপেগ ভিত্তিক পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সংস্থার আবহাওয়াবিদ ড্যানিয়েল ডেজারডিনস জানান, সাসকাচুয়ান ও ম্যানিটোবার আবহাওয়ার পূর্বাভাস আশাব্যঞ্জক নয়।
একটি শীতল ফ্রন্ট কিছু এলাকায় আঘাত হানলেও, এটি দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে স্বস্তি দেবে না।
“এই ফ্রন্টের খারাপ দিক হলো এটি প্রচণ্ড বাতাস নিয়ে আসবে,” বলেন ডেজারডিনস। গরম, বাতাস এবং বৃষ্টির অভাব দাবানল বিস্তারের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করেছে।
এই দাবানলের ধোঁয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ সপ্তাহান্তে বায়ু দূষণ সতর্কতার আওতায় এসেছে। মিনেসোটার উত্তরাঞ্চলে বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে যে, বাতাসের গুণমান সকলের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। রাজ্যের বাকি অংশে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য বায়ু দূষণ সতর্কতা জারি আছে, যা সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
২০২৩ সালে কানাডায় দাবানলের সবচেয়ে ভয়াবহ মৌসুম রেকর্ড হয়েছিল, তখন ৪২ মিলিয়ন একর (১৭.৩ মিলিয়ন হেক্টর) জমি পুড়ে যায়।
প্রাকৃতিকভাবে দাবানল অনেক অঞ্চলে ঘটে থাকে, তবে জাতিসংঘের জলবায়ু সংস্থা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দাবানল ছড়ানোর উপযোগী আবহাওয়া এখন আরও ঘনঘন এবং তীব্র হয়ে উঠছে। চরম তাপদাহ মাটি ও গাছপালার আর্দ্রতা শুষে নিচ্ছে, যা দাবানলের বিস্তারকে আরও সহজ করে তোলে।
Jahan