ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

হাতে-পায়ের জয়েন্টে ব্যথা হলে কি করবেন

প্রকাশিত: ০৭:৩৪, ১৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৭:৩৫, ১৮ জুন ২০২৫

হাতে-পায়ের জয়েন্টে ব্যথা হলে কি করবেন

সংগৃহীত প্রতীকী ছবি

হাতে-পায়ে জয়েন্টে ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা, যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমন - আঘাত, প্রদাহ, বাত, অতিরিক্ত ওজন, বা বয়সজনিত ক্ষয়। ব্যথার কারণ এবং তীব্রতার ওপর এর প্রতিকার নির্ভর করে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ঘরোয়া উপায় এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন এনে ব্যথা কমানো যেতে পারে। যদি ব্যথা তীব্র হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রাথমিকভাবে যা করবেন:

১. বিশ্রাম: যে জয়েন্টে ব্যথা হচ্ছে, সেটিকে বিশ্রাম দিন। অতিরিক্ত নড়াচড়া বা চাপ দিলে ব্যথা বাড়তে পারে।

২. ঠান্ডা বা গরম সেঁক: * ঠান্ডা সেঁক (Ice Pack): ব্যথা এবং ফোলা কমাতে এটি খুব কার্যকর। একটি কাপড়ে মোড়ানো বরফের প্যাক ১৫-২০ মিনিটের জন্য আক্রান্ত স্থানে লাগান। দিনে ২-৩ বার এটি করতে পারেন। * গরম সেঁক (Heating Pad/Warm Bath): শক্ত হয়ে যাওয়া জয়েন্ট বা পেশী শিথিল করতে গরম সেঁক ভালো কাজ করে। গরম তোয়ালে বা হিটিং প্যাড ব্যবহার করতে পারেন, অথবা গরম পানিতে গোসল করলেও উপকার পাবেন।

৩. হালকা ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং: ব্যথা না থাকলে হালকা ব্যায়াম বা মৃদু স্ট্রেচিং জয়েন্টের নমনীয়তা এবং গতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি জয়েন্টের চারপাশে রক্ত ​​সঞ্চালন বাড়ায়। হাঁটা, যোগা বা সাঁতারের মতো হালকা ব্যায়াম উপকারী হতে পারে।

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন হাঁটু, কোমর এবং পায়ের অন্যান্য জয়েন্টে অতিরিক্ত চাপ ফেলে। স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখলে জয়েন্টের ব্যথা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে।

৫. সঠিক জুতা ব্যবহার: আরামদায়ক এবং সাপোর্ট দেয় এমন জুতা পরিধান করুন, বিশেষ করে যদি পায়ে বা হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা থাকে।

৬. পর্যাপ্ত হাইড্রেশন: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা জয়েন্টের তরল পদার্থ (সাইনোভিয়াল ফ্লুইড) বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা জয়েন্টের মসৃণ নড়াচড়ার জন্য জরুরি।

৭. অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাবার: কিছু খাবার প্রাকৃতিক প্রদাহরোধী হিসেবে কাজ করে। আপনার খাদ্যতালিকায় এগুলো যোগ করতে পারেন: * আদা ও হলুদ: এই দুটি উপাদানই প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আদা-হলুদ চা পান করতে পারেন অথবা রান্নার সময় ব্যবহার করতে পারেন। * রসুন: রসুনে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ রয়েছে। প্রতিদিন সকালে কুসুম গরম পানির সঙ্গে ২-৩ কোয়া রসুন খেলে উপকার পেতে পারেন। * অলিভ অয়েল: ভার্জিন অলিভ অয়েলে অলিওক্যানথাল নামক উপাদান থাকে, যা জয়েন্টের ব্যথা উপশমে কার্যকর। এটি দিয়ে ম্যাসাজও করতে পারেন। * মেথি: মেথি গুঁড়ো করে গরম জলে মিশিয়ে বা সারা রাত জলে ভিজিয়ে রাখা মেথি সকালে খেলে উপকার পেতে পারেন।

৮. ম্যাসাজ: আক্রান্ত জয়েন্টে হালকা ম্যাসাজ করলে পেশী শিথিল হয় এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, যা ব্যথা কমাতে সহায়ক। সরিষার তেল হালকা গরম করে তাতে রসুন ভেজে নিয়ে এই তেল দিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন।


কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?

সাধারণত বিশ্রাম, হালকা ব্যায়াম এবং ঘরোয়া প্রতিকারে জয়েন্টের ব্যথা কমে আসে। তবে যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

  • ব্যথা তীব্র হয় এবং কয়েক দিনের বেশি স্থায়ী হয়।
  • জয়েন্ট ফুলে যায়, লালচে হয় বা স্পর্শ করলে গরম লাগে।
  • জয়েন্টের নড়াচড়া সীমাবদ্ধ হয়ে যায়।
  • জ্বর বা অন্যান্য উপসর্গ থাকে।
  • ব্যথা কোনো আঘাতের কারণে হয়।

চিকিৎসক ব্যথার কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা দেবেন, যেমন - ব্যথানাশক ওষুধ, ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি বা কিছু ক্ষেত্রে সার্জারি। ইউরিক অ্যাসিড, ডায়াবেটিস বা অন্যান্য লুকায়িত স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণেও জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে, যা পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা জরুরি।

সাব্বির

×