
আমরা হাঁটাচলার সময় হঠাৎ অসমান জায়গায় পা পড়লে কিংবা সিঁড়ি দিয়ে উঠানামার সময় অসাবধানতাবশত পা স্লিপ করলে বা খেলাধুলা করার সময় এবং মহিলারা হাই হিলসহ জুতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রায়শই পা মচকে যাওয়ার ঘটনা ঘটে যাকে মেডিকেল ভাষায় স্প্রেইন বা স্ট্রেইন বলা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পায়ের এঙ্কেল জয়েন্টে এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায় যাকে আমরা মেডিকেল পরিভাষায় এঙ্কেল স্প্রেইন বা স্ট্রেইন বলা হয়।
এঙ্কেল জয়েন্টটি যেহেতু আমাদের শরীরের সম্পূর্ণ ভর বহন করে তাই এই জয়েন্টিকে স্ট্যাবল করার জন্য বেশ কিছু লিগামেন্ট থাকে যা এই জয়েন্টকে শক্ত করে ধরে রাখে যখন কোন কারণে এই লিগামেন্টগুলো আঘাত প্রাপ্ত হয় তখন কিছু উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন -
১. পায়ের এঙ্কেল জয়েন্টে ব্যথা
২. পা ফুলে যাওয়া
৩. পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে না পারা
৪. সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করতে অসুবিধা হয়
৫. নিচে বসা কিংবা নামাজের মতো বসতে অসুবিধা হয়।
পরীক্ষাঃ
এই ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন ও রোগীর ইতিহাস খুবই গুরত্বপূর্ণ তবে এর পাশপাশি হাড়ের অবস্থা দেখার জন্য এক্স-রে ও লিগামেন্ট বা সফট টিস্যুর আঘাত বোঝার জন্য আক্রান্ত স্থানের এম আর আই করার প্রয়োজন পড়তে পারে।
চিকিৎসাঃ হঠাৎ পা মচকে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, যাতে ব্যথা কমানো এবং ক্ষতি রোধ করা যায়।
১. প্রাথমিক চিকিৎসা (RICE পদ্ধতি)
RICE পদ্ধতি হলো পা মচকে গেলে নেওয়া সঠিক ও কার্যকরী পদক্ষেপ।
• Rest (বিশ্রাম) :
মচকে যাওয়া পায়ে কোনো ধরনের ওজন বা চাপ দেবেন না। হাঁটা বা দৌড়ানোর চেষ্টা করবেন না।
• ওপব (বরফ) :
মচকে যাওয়া স্থানে একটি কাপড়ে মোড়ানো বরফ বা ঠান্ডা কম্প্রেস ১৫-২০ মিনিটের জন্য ব্যবহার করুন। প্রতি ১-২ ঘণ্টা পর এই প্রক্রিয়া পুনরাবৃত্তি করুন। তবে সরাসরি বরফ লাগাবেন না, কারণ এটি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
• Compression (চাপ প্রয়োগ) :
মচকে যাওয়া অংশে একটি ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ দিয়ে হালকা পেঁচিয়ে রাখুন। তবে অতিরিক্ত চাপ দেবেন না, যাতে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়।
• Elevation (উঁচু করে রাখা):
পা মচকে গেলে পা উঁচু করে রাখুন। শুয়ে বা বসে পায়ের নিচে একটি বালিশ দিন, যাতে এটি হৃদপিণ্ডের উচ্চতার উপরে থাকে। এটি ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।
২. ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ
যদি ব্যথা খুব বেশি হয়, তাহলে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ নিতে পারেন। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করবেন।
৩. কখন চিকিৎসকের শরোনাপন্ন হবেন
নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন:
ক. ব্যথা বা ফোলাভাব ২-৩ দিনের মধ্যে কমছে না।
খ. হাঁটার সময় প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে।
গ. সংজ্ঞাহীন বা অস্বাভাবিক আকারে পা ফুলে গেলে ।
৪. কিছু কিছু ক্ষেত্রে পা প্লাষ্টার করার প্রয়োজন পড়তে পারে এবং ক্ষেত্র বিশেষে লিগামেন্ট ছিড়ে গেলে অস্ত্রপ্রচারের প্রয়োজন হতে পারে ।
৫. আঘাত পরবর্তী পুনর্বাসন চিকিৎসা
ক. কয়েকদিন বিশ্রামের পর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ধীরে ধীরে হালকা ব্যায়াম শুরু করতে হবে
খ. ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে ব্যথা কমানোর পাশপাশি স্ট্রেন্থেনিং এক্সারসাইজ প্রোগ্রামের মাধ্যমে
মাংসপেশি শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে ।
সতর্কতাঃ
ক. সঠিক জুতা ব্যবহার করুন।
খ. হাই হিল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন ।
গ. অনুশীলনের আগে ওয়ার্ম আপ ও মাংসপেশি স্ট্রেচিং করুন।
ঘ. অসমান বা পিচ্ছিল জায়গায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন।
লেখক: চেয়ারম্যান ও চীফ কনসালটেন্ট,
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল।
ধানমন্ডি,ঢাকা। ০১৭৮৭১০৬৭০২