
বলিউড এমন এক অঙ্গন যেখানে বক্স অফিসই অধিকাংশ সময় একজন অভিনেতার ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এই ব্যবস্থার বাইরে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন একজন মানুষ মিঠুন চক্রবর্তী। যিনি শুধু সিনেমার ব্যর্থতাকে উপেক্ষা করেননি, বরং সেটাকেই পেছনে ফেলে গড়ে তুলেছেন এক অনন্য জীবনী। বলা হয়, বলিউডে লিড চরিত্রে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ফ্লপ ছবির রেকর্ড মিঠুনের দখলে। তবুও তার আলো নিভে যায়নি, বরং তিনি দেখিয়েছেন স্থায়িত্ব, সংকল্প ও আত্মবিশ্বাসই একজন তারকার প্রকৃত পরিচয়।
১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সময়টা ছিল মিঠুন চক্রবর্তীর জীবনের অন্যতম কঠিন অধ্যায়। এই সময়ে তার একের পর এক ৩৩টি ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। অনেকের ক্যারিয়ার এমন ধাক্কায় একেবারেই থেমে যেত। কিন্তু মিঠুন ছিলেন অন্য ধাতুর মানুষ। এই দুঃসময়ের মধ্যেও তিনি উপহার দিয়েছেন চিতা (১৯৯৪), জল্লাদ (১৯৯৫) ও রাবণ রাজ: আ ট্রু স্টোরি (১৯৯৫)-এর মতো জনপ্রিয় সিনেমা, যা প্রমাণ করে তিনি কখনোই দর্শকদের হৃদয় থেকে মুছে যাননি।
মিঠুন চক্রবর্তীর ক্যারিয়ার এমন এক যাত্রা যেখানে বারবার ব্যর্থতা তাঁকে পরাজিত করতে চাইলেও তিনি উঠে দাঁড়িয়েছেন আরও দৃঢ়ভাবে। একদিকে যেমন তিনি ছিলেন প্রধান চরিত্রের নায়ক, অন্যদিকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্বচরিত্রের অনন্য মুখ। গুরু, ওএমজি: ওহ মাই গড!, হাউসফুল ২, দ্য তাসখন্দ ফাইলস প্রভৃতি ছবিতে তাঁর ফিরে আসা দেখিয়েছে যার অভিনয়ে প্রাণ আছে, তাঁর জন্য পর্দার দরজা কখনোই বন্ধ হয় না।
তবে শুধু জনপ্রিয়তা নয়, মিঠুন তার প্রতিভার জন্য পেয়েছেন জাতীয় স্বীকৃতিও। মৃগয়া (১৯৭৭) ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মান, তাহাদের কথা (১৯৯৩)-এর জন্য আবারো শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, আর বিবেকানন্দ (১৯৯৮)-এ পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। পাশাপাশি, ১৯৮২ সালের কালজয়ী ছবি ডিসকো ড্যান্সার তাঁকে দিয়েছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতি, বিশেষত রাশিয়া ও সোভিয়েতভুক্ত দেশগুলোতে, যেখানে তিনি হয়ে ওঠেন এক সাংস্কৃতিক আইকন।
২০২৪ সালে ভারত সরকার তাঁকে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ-এ ভূষিত করে, যা প্রমাণ করে চলচ্চিত্র শিল্পে তাঁর দীর্ঘস্থায়ী অবদান কখনো অস্বীকার করা যায় না। সর্বশেষ তাঁকে দেখা গেছে শ্রীমান ভার্সেস শ্রীমতী ছবিতে। সামনে রয়েছে আরও দুটি আকর্ষণীয় প্রজেক্ট বিখ্যাত পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীর দ্য দিল্লি ফাইলস এবং একটি তেলেগু ছবি ফৌজি, যা মুক্তি পাবে আগামী বছর।
মিঠুন চক্রবর্তীর জীবন শুধুই একজন তারকার গল্প নয়, এটি এক সংগ্রামী শিল্পীর অনুপ্রেরণামূলক অধ্যায়। যেখানে বারবার পড়ে গিয়েও উঠে দাঁড়ানো, নিজেকে বদলে ফেলা, এবং কখনোই হার না মানার মানসিকতাই তাঁকে গড়ে তুলেছে বলিউডের এক চিরসবুজ কিংবদন্তি।
সূত্র:https://tinyurl.com/44vejkjf
আফরোজা