ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সম্প্রীতির বারতায় শহীদ মিনারে পথনাটক উৎসব 

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:১৯, ২ মার্চ ২০২৩

সম্প্রীতির বারতায় শহীদ মিনারে পথনাটক উৎসব 

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পথনাটক উৎসবে প্রাচ্যনাট পরিবেশিত ‘নাইওর’ নাটকের দৃশ্য

যারা মিলনায়তনের বাইরে খোলা আঙিনায় নাটক দেখতে পছন্দ করেন তাদের জন্য আয়োজনটি বিশেষ গুরুত্ববহ। সমকালীন বিবিধ বিষয়কে উপজীব্য করে পরিবেশিত হচ্ছে নাটক। আর প্রতিটি নাটকই দর্শকের জন্য  খুলে দেবে নতুন দিগন্ত। কারণ, বিভিন্ন নাট্যদল নির্মাণ করেছে ৩৫টি নতুন নাটক। আগে কোথাও প্রদর্শিত হয়নি এমন নাটকগুলো নিয়ে সাজানো হয়েছে উৎসব।

সে সব নাটক নিয়ে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সম্প্রীতির উচ্চারণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে চলছে বাংলাদেশ পথনাটক উৎসব। পথনাটক পরিষদের আয়োজনে সম্প্রীতির সংস্কৃতি আনবেই মুক্তি স্লোগানে ছয় দিনব্যাপী এ উৎসবের সূচনা হয় বুধবার। আগামী সোমবার পর্যন্ত চলমান এ উৎসবে প্রতিদিন বিকেল সাড়ে চারটা থেকে শুরু হবে নাট্য প্রদর্শনী।  
বসন্ত বিকেলে ভাষা শহীদদের স্মৃতির সাক্ষ্যবহ শহীদ মিনারে উৎসবের সূচনা হয়। শুরুতে পুষ্পাঞ্জলির অর্পণের মাধ্যমে  মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে শহীদদের প্রতি শ্রদ্বা নিবেদন করা হয়। এরপর এক মিনিটের নীরবতা শেষে জাতীয় সংগীতের সুরটি কণ্ঠে তুলে নেন বহ্নিশিখার শিল্পীরা। সকলে মিলে গেয়ে শোনায় সেই প্রাণের গানÑ আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...।  পরের পরিবেশনাতেও স্বদেশের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশে উচ্চারিত হয়Ñ  সোনা নয় তত খাঁটি/বলো যত খাঁটি/তার চেয়ে খাঁটি বাংলাদেশের মাটি...। 
বর্ণিল বেলুন উড়িয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে পথনাটক পরিষদের আয়োজনে প্রদর্শিত হয়েছে এমন নাটকের নাট্যকারদের সম্মান জানানো হয়। সেই তালিকায় ছিলেন মামুনুর রশীদ, কাজী রফিক,  মাসুম রেজা, নিরঞ্জন অধিকারী, তৌফিক হাসান ময়না, জাহাঙ্গীর হোসেন, রতন সিদ্দিকী,  মো. শাহ  নেওয়াজ, আব্দুল হাই দুর্বার, সৈয়দ মহিদুর রহমান, তপন দাশ, কানাই চক্রবর্তী, মাজহারুল হক পিন্টু, মোস্তফা হীরা, আব্দুল হালিম আজিজ, ম. আ. সালাম, অলোক বসু, আসাদুল ইসলাম, সগীর মোস্তফা, খন্দকার আনারুল ইসলাম, চঞ্চল সৈকত, হাসান ইমাম ডালিম, শাজাহান শোভন, আশিক সুমন, রশিদুল ইসলাম রাজা, মঞ্জুরুল আলম সিদ্দিকী, তোসাদ্দেক হোসেন মান্না, সাইফ উদ্দিন আহাম্মেদ, ফয়সাল আহাম্মেদ, আসমা আক্তার লিজা, নাসির আহাম্মেদ দুর্জয়, সাজ্জাদ লিপন ও  সামসুদ্দিন শাকিল।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। আলোচনায় অংশ নেন পরিষদের সহ-সভাপতি ড. রতন সিদ্দিকী, জোটের সহ-সভাপতি ঝুনা চৌধুরী,  গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল চন্দন রেজা ও জাহাঙ্গীর হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ গিয়াস। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রহমান। 
উদ্বোধনী বক্তব্যে মামুনুর রশীদ বলেন, পথনাটক যারা করেন তাদের অনেকেই হীনম্মন্যতায় ভোগেন। অথচ পথনাটক থেকেই নাটকের উৎপত্তি হয়েছে। পথনাটক লিখেই সফোক্লিস, ইডিপাসসহ বড় বড় নাট্যকারের উদ্ভব হয়েছে। পথনাটকের অনেক পরে মঞ্চনাটকের জন্ম হয়েছে। উল্টোদিকে মঞ্চের বদলে খোলা আঙিনায় পরিবেশনের কারণে মঞ্চনাটকের চেয়ে পথনাটকের উপস্থাপন কঠিন বিষয়।

তাই পথনাটকের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে- এমনটা ভাবার প্রয়োজন নেই। সমাজের সমস্যাকে চিহ্নিত করে সেগুলোকে মেলে ধরতে হবে পথনাটকে। দুর্নীতির বিরুদ্ধেও সোচ্চার ভূমিকা রাখতে হবে পথনাটকের মাধ্যমে। সর্বোপরি নতুন চিন্তাকে ধারণ করে শৈল্পিকভাবে পথনাটককে উপস্থাপন করতে হবে। সে জন্য মানসমৃদ্ধ অভিনয় ও ভালো পা-ুলিপির গুরুত্ব দিতে হবে। 
উৎসবের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন শিকানুল ইসলাম শাহীন। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আমাদের এই পথনাটক উৎসব সাংস্কৃতিক জাগরণের চেষ্টা মাত্র। সেই জাগরণে পথনাটকের মাধ্যমে অন্যায়, অবিচার ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে মানুষের চেতনাকে শাণিত করে। ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে বিষবাষ্পকে প্রতিরোধ করে সম্প্রীতির স্বদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে পথনাটক। ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের ভেদাভেদ ভুলে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে এই শিল্পমাধ্যমটি। 
আলোচনা শেষে শুরু হয় নাট্য প্রদর্শনী। প্রথম দিন প্রদর্শিত হয় তিনটি পথনাটক। নাট্যদল প্রাচ্যনাটক পরিবেশন করে নাইওর শীর্ষক নাটক। কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন রচিত প্রযোজনাটির নির্দেশনায় ছিলেন জগন্ময় পাল। একেএ কবির রচিত ও নির্দেশিত বাঁচার লড়াই শীর্ষক নাটক পরিবেশন করে খেয়ালি নাট্যগোষ্ঠী। মো. শামসুদ্দিন শাকিল রচিত ও নির্দেশিত অভিশপ্ত ছায়া শীর্ষক নাটক উপস্থাপন করে বৃত্ত নাট্যদল। 
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় শুরু হবে দ্বিতীয় দিনের প্রদর্শনী। অবয়ব নাট্যদল উপস্থাপন করবে মাহফুজুর রহমান সবুজ রচিত ও নির্দেশিত নাটক চক্কর। নাদিম মোড়লের রচনা ও নির্দেশনায় গাজীপুরের চন্দ্রবিন্দু থিয়েটার পরিবেশন করবে বিমল দাস এমএ শিরোনামের নাটক। এ ছাড়া প্রদর্শিত হবে যশোরের তির্যকের নাটক ভুল সবই ভুল, বাঙলা নাট্যদলের নাটক রুদ্র ডাঙ্গার পাখি ও অনুরাগ থিয়েটারের নাটক সূর্যোদয়ের হুঙ্কার।

×