৩। কমল সাহেব তার মেয়ে শিল্পীকে নিয়ে একটি জাদুঘর দেখতে গেল। জাদুঘরটিতে গিয়ে শিল্পী দেখতে পেল রাজা-বাদশাদের ব্যবহার করা নানা দ্রব্য ও হাতির দাঁতের কারুকাজ করা শিল্পদ্রব্য। এছাড়াও নাটোরের জমিদারদের ব্যবহার করা নানা দ্রব্য।
ক) নাটোরের জমিদার প্রাসাদের বর্তমান নাম কী?
খ) ঔপনিবেশিক যুগে সোনারগাঁওয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা দাও।
গ) শিল্পীর দেখা জাদুঘরটি সম্পর্কে ব্যাখ্যা কর।
ঘ) তুমি কি মনে কর উদ্দীপকের জাদুঘরের পাশাপাশি অন্যান্য জাদুঘরেও বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভূমিকা রয়েছে? বিশ্লেষণ কর।
ক) উত্তর ঃ নাটোরের জমিদার প্রাসাদের বর্তমান নাম ’উত্তরা গণভবন’।
খ) উত্তর ঃ সুলতানি আমলে বাংলার রাজধানী ছিল সোনারগাঁও। পরবর্তীতে এর গুরুত্ব কমে গেলেও মসলিম শাড়ির উৎপাদন ও ব্যবসাকে কেন্দ্র হিসেবে এর যথেষ্ট সুনাম ছিল। এই মসলিম শাড়ির খ্যাতি ও কদর ছিল বিশ্বব্যাপী। এছাড়াও স্থাপত্য নির্মাণেও সোনারগাঁও বিখ্যাত ছিল।
গ) উত্তর ঃ শিল্পীর দেখা জাদুঘরে রাজা-বাদশাদের ব্যবহার করা নানা দ্রব্য ও হাতির দাঁতের কারুকাজ করা শিল্পদ্রব্য এবং নাটোরের জমিদারদের ব্যবহার করা নানা দ্রব্য,যা জাতীয় জাদুঘরকেই নির্দেশ করে। জাতীয় জাদুঘরের গ্যালারিতে সংরক্ষিত রয়েছে বাংলার নবাব,জমিদার, ইংরেজ শাসনকাল এবং মুক্তিযুদ্ধকালের বেশ কিছু প্রত্ন সম্পদ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজা-বাদশাদের ব্যবহার করা নানা দ্রব্য ও হাতির দাঁতের কারুকাজ করা শিল্পদ্রব্য। বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর সংগ্রহ থেকে আনা পোশাক, হাতির দাঁতের নানা কারুকাজ, ঢাল-তলোয়ার। এছাড়া এখানে নাটোরের জমিদারদের ব্যবহার করা নানা দ্রব্য,পোশাক,ঢাল-তলোয়ার ও সিংহাসন এবং ঢাকার নওয়াবদের ব্যবহার করা কারুকার্যখচিত পোশাক ও জিনিসপত্র এবং বিভিন্ন সময়ে প্রচলিত মুদ্রা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধাদের পোশাক,কলম,ডায়রি, সনদপত্র । এছাড়াও রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি, নানা দ্রব্য, পোশাক, চেয়ার ইত্যাদি।
ঘ) উত্তর ঃ জাতীয় জাদুঘরের পাশাপাশি অন্যান্য জাদুঘরেও বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভূমিকা রয়েছে বলে আমি মনে করি। উদ্দীপকে জাতীয় জাদুঘরের কথা বর্ণিত হয়েছে। তবে জাতীয় জাদুঘর ছাড়াও বাংলাদেশে আরো জাদুঘর রয়েছে। জাতীয় জাদুঘরের পাশাপাশি এসব জাদুঘরও দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভূমিকা রেখেছে। ইতিহাসের বিভিন্ন যুগের মানুষের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্রের সংগ্রহে গড়ে উঠেছে জাতীয় জাদুঘরসহ দেশের অন্যান্য জাদুঘর। এসব জিনিসপত্রের মধ্যে রয়েছে সেসব যুগের শিল্পকর্ম, ভাস্কর্য, অলঙ্কার, মুদ্রা, মূল্যবান অসবাবপত্র, পোশাক-পরিচ্ছেদ, ঢাল-তলোয়ার, আলোকচিত্র ইত্যাদি। এগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন যুগের মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা, জীবনযাত্রা, বিশ্বাস, সংস্কার, রুচি বা দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা লাভ করা যায়। আমাদের অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। এছাড়া জাদুঘরে রক্ষিত ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো যাচাই-বাচাই করে ইতিহাসের সত্যতা নিরূপণ করা যায়। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে জাতীয় জাদুঘসহ অন্যান্য জাদুঘর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।