ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

খামার ব্যবসা করে স্বাবলম্বী দুই ভাই 

আরিফুর রহমান, খুলনা

প্রকাশিত: ১৪:৫৪, ৩১ মে ২০২৫

খামার ব্যবসা করে স্বাবলম্বী দুই ভাই 

ছবি: জনকণ্ঠ

শহরে চাকরির পেছনে না ছুটে নানান জটিলতা কাটিয়ে দাঁড় করিয়েছেন নিজেদের পরিচয়। খামার করার পরিকল্পনা থেকে ২০২২ সালে মাত্র তিনটি গরু নিয়ে যে পথচলার শুরু, আজ তার পরিণতি ২২টি গরুর একটি পূর্ণাঙ্গ খামার। খামারের নাম দিয়েছেন ইনসান এগ্রো। এ সংগ্রামের গল্প খুলনার দুই ভাই জোবায়ের আব্দুল্লাহ ও জুনায়েদ আব্দুল্লাহ’র। দুই ভাইয়ের মধ্যে জোবায়ের বয়সে বড় এবং জুনায়েদ ছোট। যাঁরা নিজেদের উদ্যম ও শ্রমের মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন স্থানীয় তরুণদের অনুপ্রেরণা।


সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ইনসান এগ্রো খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার মল্লিকের মোড় নামক স্থানে অবস্থিত। প্রায় এক বিঘা জায়গার ওপর এ খামার তৈরী করা হয়েছে। গরুর গোয়াল ঘর রয়েছে, পয়নিস্কাসণ ব্যবস্থা রয়েছে, গরুর খাবার প্রস্তুতের জন্য আলাদা ঘর রয়েছে, খামারে থাকার জন্য আলাদা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।

জোবায়ের আব্দুল্লাহ এবং জুনায়েদ আব্দুল্লাহ জানান,  প্রথমদিকে সঞ্চয় এবং কিছু ঋণের মাধ্যমে ছোট পরিসরে তিনটি গরু নিয়ে খামার শুরু করেন তারা। সেই সময় গরুর খাবার, ওষুধ এবং আবাসনের ব্যবস্থা করতে গিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। কিন্তু পিছু পা হননি তারা। জটিলতা কাটিয়ে ধাপে ধাপে পূর্নাঙ্গ খামার গড়ে তুলেছেন তারা। বর্তমানে খামারে একটি পরিবারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে।

চ্যালেঞ্জ এখনো পিছু ছাড়েনি:
জোবায়ের আব্দুল্লাহ বলেন, প্রথম বছরটা অনেক কষ্টে গেছে। গরুর খাবারের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। বাজার থেকে গরু কিনতে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হয়। সবকিছু ম্যানেজ করতে গিয়ে আমরা প্রায় ঋণের বোঝায় পড়ে যাই। গ্রামের আশপাশে পশু চিকিৎসার জন্য ভালো ডাক্তার না থাকায় অনেক সময় গরু অসুস্থ হলে ঠিক সময়ে চিকিৎসা মেলেনি। এর ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়তে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এরপর ধাপে ধাপে ইউটিউব দেখে শিখে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। তারপর একটা সময় নিজেদের সুবিধা মতো খামারের ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেছি। নিজেরাই ইউটিউব ও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনা, প্রজনন ও চিকিৎসার বিভিন্ন দিক শিখেছি। পরবর্তীতে খামারটি ধীরে ধীরে আধুনিক করতে পেরেছি। বর্তমানে আমাদের খামারে ২২টি গরু রয়েছে। যার মধ্যে সব গরু কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে প্রস্তুত করা হয়েছে। যার প্রত্যেকটির ওজন গড়ে ১৫০—৪৫০ কেজি।

জুনায়েদ আব্দুল্লাহ বলেন, প্রতিটি গরু আমরা যত্ন করে বড় করেছি। বিভিন্ন জায়গা ঘুরে গরু কিনে এনেছি। খাবার, পানি, পরিচ্ছন্নতাসহ যাবতীয় সবকিছুর ওপর জোর দিচ্ছি। সময়মতো খাবার দেয়া, গোসল করানো এবং পরিচর্যা করা হয়। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। গরুর বাসস্থান নিয়মিত পরিস্কার করা হয়। খামারের আশেপাশে রোজ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়। কিন্তু ২০২২ সালে শুরুর সময় খামারের বিষয়টা আমাদের কাছে অনেক কঠিন ছিলো। তবে হাল ছাড়িনি। লেগে থাকতে থাকতে একটা সময় সবকিছুই আমাদের কাছে সহজ হয়ে ওঠেছে। 
জুনায়েদ আরো বলেন, ব্যবসার থেকে বড় বিষয় হলো দায়িত্ব। দায়িত্ব নিয়ে গরু লালন পালন করছি বলে আজ আমাদের কাছে খামার ব্যবসা এবং গরু পালন সহজ মনে হচ্ছে। বর্তমানে খামারের সব গরু এবার কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।


প্রত্যাশা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
জোবায়ের আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের স্বপ্ন খামার আরো বড় করা। স্বয়ং সম্পূর্ন খামার গড়ে তুলতে পারলে অনেক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে। পাশাপাশি নিজেদের স্বচ্ছলতাও ফিরে আসবে। তিনি আরো বলেন, সরকার সহযোগিতা করলে খামার ব্যবসা আরো গতি পাবে। বিশেষ করে খামার ব্যবসায় গরুর খাবার কিনতে খামারিরা হিমশিম খেয়ে যান। গরুর খাবারে ভতুর্কি দিলে অনেকটা লাভের মুখ দেখতে পাবেন খামারিরা। এছাড়া ভালো পশু ডাক্তার এবং প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করে দেয়া হলে  আরও বড় পরিসরে খামার গড়ে তুলতে পারবে উদ্যোক্তরা।
জুনায়েদ আব্দুল্লাহ বলেন, খামার ব্যবস্থাপনাকে আরো আধুনিকায়ন করার ইচ্ছা আছে। অনেকে খামার ব্যবসায় আগ্রহ দেখালেও ব্যবস্থাপনার অভাবে হোচট খেয়ে পড়েন। যা একটি প্রতিবন্ধকতা। এ কারনে সামনে আরো বড় পরিসরে ব্যবস্থাপনা এবং জনবল কাজে লাগিয়ে বড় পরিসরে খামারকে রুপান্তর করব।

ইনসান এগ্রোতে কর্মরত মো. শাহেদুল গাজী বলেন, তিনি পরিবার নিয়ে খামারেই থাকেন। ২৪ ঘন্টা গরু দেখভাল করেন। প্রথমে এ কাজ একটু কঠিন মনে হলেও এখন গরু পরিচর্যার কাজ তাকে অনেক আনন্দ দেয়। 
তিনি বলেন, সকালে ৯টার মধ্যে গরুদের খাবার দেন। এরপর দুপুর একটার মধ্যে দুপুরের  খাবার ১টার মধ্যে দেন। তারপর বিকাল ৪ টা থেকে সন্ধ্যার ভিতর রাতের খাবার দিয়ে দেন। এছাড়াও অনেক গরম পড়লে গরুর গাঁ মুছিয়ে দেয়া এবং নিয়মিত গোসল করানো হয়।

মল্লিকের মোড়ের স্থানীয় বাসিন্দা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, খামার ব্যবসা খুব ভালো। বাসার কাছে হওয়ায় মাঝে মধ্যে ঘুরতে ইনসান এগ্রোতে যাই। দুই ভাইয়ের উদ্যোগ খুব ভালো লাগছে। বিশেষ করে খামারে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকটা খুব সুন্দর। অনেক খামার থেকে দুর্গন্ধ আসে। কিন্তু এখানে তা পেলাম না। তবে তরুনরা উদ্যোগি হলে সকলের জন্যই ভালো। 

বটিয়াঘাটা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ তরিকুল ইসলাম, ইনসান এগ্রো ফার্মসহ বেশকিছু খামার সম্প্রতি পরিদর্শন করা হয়েছে। তারা নিয়ম কানুন মেনেই খামারে গরু লালন পালন করছেন। এছাড়া ভ্যাক্সিন দেয়া এবং খামারিদের জরুরি প্রয়োজনে আমরা সার্বক্ষণিক কাজ করছি।

সাব্বির

×