ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

আগামী সপ্তাহে অনুমোদন

তৃতীয় কিস্তিতে আইএমএফ  দেবে ১১৫ কোটি ডলার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১৭, ৯ মে ২০২৪

তৃতীয় কিস্তিতে আইএমএফ  দেবে ১১৫ কোটি ডলার

আইএমএফ কাছ থেকে তৃতীয় কিস্তিতে ১১৫ কোটি ডলারের বেশি পাওয়া যাবে

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে তৃতীয় কিস্তিতে ১১৫ কোটি ডলারের বেশি পাওয়া যাবে। ঋণের কিস্তি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নীতিমালা নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। চুক্তিটি আগামী সপ্তাহ নাগাদ ওয়াশিংটনে আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডসভায় অনুমোদন হতে পারে। আর ঋণের কিস্তি চলতি মাসের শেষ নাগাদ কিংবা জুনের প্রথম সপ্তায় পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আইএমএফের এই কিস্তি দেশে আসার পর বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভকে শক্তিশালী করবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া আমদানি-রপ্তানিসহ সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে চাপ রয়েছে তা প্রশমিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরির্বতনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় জোর দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি মনে করে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এদিকে এখনই সরকারকে আরও বেশি নজর দিতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

এদিকে, আইএমএফ ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই বলে জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। তিনি জানান, আইএমএফের দেওয়া প্রায় সব শর্ত পূরণ করা হয়েছে। তাই কিস্তি পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। তবে শর্ত পূরণ করতে গিয়ে মানুষের জন্য ভোগান্তি হয়-এমন কোনো পদক্ষেপ নিবে না সরকার। আইএমএফের ঋণ এ দেশ ও মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা হবে এবং হচ্ছে।

অন্যদিকে, আইএমএফ নির্বাহী বোর্ডের অনুমোদন পেলেই আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রতিনিধি দলের প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউ। বুধবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা সফররত ওই প্রতিনিধি দলের প্রধান। ক্রিস পাপাগেওর্জিউ বলেন, আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির ঋণ পেতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল।

এ ছাড়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএমএফ জানিয়েছে, আইএমএফের একটি দল ইসিএফ, ইএফএফ, আরএসএফ ব্যবস্থাপনার আওতায় দ্বিতীয় পর্যালোচনা শেষ করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে স্টাফ লেভেল চুক্তিতে পৌঁছেছে। চুক্তিটি ওয়াশিংটনভিত্তিক ঋণদাতার নির্বাহী বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে হবে এবং আগামী সপ্তাহে হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় পর্যালোচনা শেষ হলে এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ)/এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটির (ইএফএফ) আওতায় প্রায় ৯৩২ মিলিয়ন ডলার এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় প্রায় ২২০ মিলিয়ন ডলার পাবে বাংলাদেশ। অর্থাৎ বোর্ডের অনুমোদন পেলে বাংলাদেশ প্রায় ১১৫ কোটি ডলারের বেশি পাবে। উল্লেখ্য, ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বাধীন আইএমএফের মিশন টিম ১৫ দিনের বাংলাদেশ সফর শেষে তৃতীয় কিস্তি নিয়ে বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে।

তাদের সফরকালে কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যালোচনার প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক ও আর্থিক নীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রায় ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে প্রতিনিধিদলটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে। বিদায়ের আগের দিন বুধবার অর্থ প্রতিমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফের প্রতিনিধিদলটি। পরে সন্ধ্যায় আইএমএফের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রেসব্রিফিং করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার প্রতিনিধিদলটির ওয়াশিংটনে ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট মাইক্রো ইকোনমিক্স ডিভিশনের এই প্রধান বলেন, আইএমএফ-সমর্থিত কর্মসূচির আওতায় গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত সংস্কার করেছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য ফর্মুলাভিত্তিক জ্বালানি মূল্য সমন্বয় নীতি তারা বাস্তবায়ন করেছেন। মূল্যস্ফীতিসহ নানা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বিনিময় হার পুনর্বিন্যাসে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলোকে স্বাগত জানিয়েছে আইএমএফ।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান জানান, আইএমএফ নতুন করে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আয় বাড়ানো, সুদহারের বিষয় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছে। জলবায়ু ও দুর্যোগ মোকাবিলার পরামর্শ অনুসরণ করে চলতি বছরই কাজ শুরু করবে সরকার। আইএমএফ প্রতিনিধিদল অর্থ প্রতিমন্ত্রীর কাছে ঋণের শর্ত ও সংস্কারের কতটা অগ্রগতি এবং আরও কতটা করতে হবে সেই সুপারিশের মূল বিষয়গুলো তুলে ধরেন। 

করের হার বা আওতা বাড়ানোর যে আলোচনা আছে, তাতে মানুষের কষ্ট বাড়বে কি না? সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শর্ত পূরণ করতে গিয়ে মানুষের যেন ভোগান্তি না হয় সে বিষয়ে নজর রাখবে সরকার। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে আইএমএফ বিদ্যুতের দাম বছরে চারবার বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া কর ও ভ্যাট আদায়ে সর্বোচ্চ জোর, কর অবকাশ সুবিধা তুলে দেওয়াসহ নানা রকম পরামর্শ দিয়েছে। তবে সংস্থাটি সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জোর দিয়েছে। আইএমএফের প্রতিনিধিদলের সফর নিয়ে অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার বলেন, ১০টি শর্তের মধ্যে বাংলাদেশ কেন একটি পূরণ করতে পারেনি তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ পক্ষ। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে জুনে রিজার্ভে যোগ হতে পারে তৃতীয় কিস্তির টাকা।

বাজেটের আকার, রাজস্ব আয়, যৌক্তিক ভর্তুকি নির্ধারণ ও নিট রিজার্ভ নিয়ে নতুন করে লক্ষ্যমাত্রা ও সুপারিশ দিয়েছে এই প্রতিনিধিদল। বাংলাদেশ পক্ষ বলছে, রিজার্ভ ছাড়া যেহেতু শর্তের অন্যান্য দিক পূরণ করা হয়েছে সেহেতু ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। 

×