ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৫০ বছরে সোনালী ব্যাংক

প্রকাশিত: ২১:১৬, ২৪ মার্চ ২০২২

৫০ বছরে সোনালী ব্যাংক

রহিম শেখ ॥ ১৯৭২ সালের ২৪ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই সোনালী ব্যাংকের নামকরণ করেন। ব্যাংক ব্যবসার সম্প্রসারণ এবং পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে অপামর জনগণের মধ্যে ব্যাংকিং সেবা ছড়িয়ে দেয়াই ছিল এ ব্যাংকের লক্ষ্য। পরবর্তীতে কোম্পানি আইন ১৯৯৪ অনুযায়ী ২০০৭ সালের ৩ জুন সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম শুরু করে। আজ ৫০ বছর উদ্যাপন করতে যাচ্ছে সোনালী ব্যাংক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক কন্টাকলেস ব্যাংকিং তথা ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের অনেক দূর এগিয়েছে। গত দুই বছর বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বাসায় বসে প্রান্তিক মানুষের ব্যাংকিংয়ে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে সোনালী ব্যাংক অন্যান্য সরকারী ব্যাংকের তুলনায় এগিয়ে। সোনালী ব্যাংকের বর্তমান সিইও এ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোঃ আতাউর রহমান প্রধান ২০১৯ সালে রাষ্ট্র্রায়ত্ত এই ব্যাংকটিতে যোগদান করার পর থেকে বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা চালু করার উদ্যোগ নেন যাতে করে ঘরে বসেই বিভিন্ন সেবা পেতে পারেন এর লক্ষ কোটি গ্রাহক। ব্যাংকটির দেয়া তথ্য মতে, ১৯৭২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সোনালী ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৭৩ কোটি টাকা। গতবছর শেষে ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ১৯৭২ সালে সোনালী ব্যাংক নিট মুনাফা করে ২৪ লাখ টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির মুনাফা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত যে কোন ব্যাংকের চেয়ে বেশি। ১৯৭২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সোনালী ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৫ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকের ঋণ ও অগ্রীমের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার কোটি টাকা। ১৯৭২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সোনালী ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ২৩৯ কোটি টাকা। ২০২১ সাল শেষে ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। দেশের অভ্যন্তরে ১২২৭টি এবং দেশের বাইরে ২টি শাখা নিয়ে বর্তমানে এটি দেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক ব্যাংক। ব্যাংকটির সব শাখাই অনলাইন ব্যাংকের আওতায়। দেশের বৃহত্তম এই ব্যাংকটিকে একটি আদর্শ ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২০ সালের মার্চ মাসে সোনালী ই-সেবা এ্যাপ চালু করা হয়। বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের এই এ্যাপস চালুর পর থেকে জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত মোট ৯৯ হাজার ৩৩টি হিসাব খোলা হয়েছে। এছাড়া ২০২০ সালে চালু করা হয় সোনালী ই-ওয়ালেট যার মোট হিসাব সংখ্যা ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮১টি। বর্তমানে সরকারী এই ব্যাংকে, ছোটখাট ট্রান্সজেকশন করতে এবং হিসেব খুলতে গ্রাহকদের আর ব্যাংকে আসতে হয় না। সোনালী ব্যাংকের ব্লেজ এ্যাপ ব্যবহার করে প্রবাসী গ্রাহকেরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ মাত্র ৫ সেকেন্ডের মধ্যে তাদের হিসেবে জমা করতে পারেন। দেশের সবচেয়ে বড় এই ব্যাংকের সবগুলো শাখা এখন অনলাইন। এই ব্যাংকের আইটি খাতের নীরবচ্ছিন্ন সার্ভিস দিতে ৩০১ জন কর্মী নিয়োজিত রয়েছে। সোনালী ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে গড়ে প্রতিদিন ৬,০০০টি ট্রান্সজেকশন হচ্ছে। দেশের ব্যাংকিং জগতের পরিচিত মুখ বর্তমানে সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক ব্যাংকটির সিইও এ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোঃ আতাউর রহমান তার ব্যাংকের ডিজিটালাইজেশন সম্পর্কে বলেন, বিশ্বে পেপারলেস ব্যাংকিং একটি জনপ্রিয় ধারণা। বাংলাদেশও এতে পিছিয়ে নেই। বর্তমানে সব মানুষই স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। এই কোভিডকালীন সময়ে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের ফলে গ্রাহকরা ঘরে বসেই সব ধরনের সেবা পাচ্ছেন, বিশেষ করে বয়োঃবৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধা, সিনিয়র সিটিজেনরা যারা সরকারী এই ব্যাংক থেকে ভাতা নেন তাদের জন্য এটি একটি নিরাপদ মাধ্যম। তিনি বলেন, সময় এখন ভার্চুয়াল এ্যান্ড স্মার্ট ব্যাংকিংয়ের। কোর ব্যাংকিং সলিউশনের মাধ্যমে এখন নন-স্টপ ব্যাংকিং সার্ভিস দেয়া হচ্ছে সোনালী ব্যাংকে। অনলাইন ব্যাংকিং সফটওয়্যার যুগোপযোগী করে আমরা ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছি। অচিরেই সরকারী সব ভাতাসমূহ আমরা ডিজিটালি প্রদান করব, আর আমরা অচিরেই ইন্টারনেট ও এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করব বৃহত্তর পরিসরে। করোনাকালীন সময়ে বেশিরভাগ ব্যাংক বন্ধ রাখলেও দেশের আপামর মানুষের কথা চিন্তা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস করেছেন এই সময়ে। গতবছর সোনালী ব্যাংক শুধু সেবা নয় মুনাফায় ও শীর্ষে ছিল ২০২১ সালে রেকর্ড ২ হাজার ২০৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে ব্যাংকটি। ২০২০ সাল শেষে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ২১৫৩ কোটি টাকা। সরকারের সামাজিক খাতের ৩৭টি সেবা সোনালী ব্যাংক দিচ্ছে কোন রকম কমিশন ছাড়াই। এসব ভাতাসমূহ উত্তোলনের জন্য যাতে ভাতাভোগীদের আর ব্যাংকে না আসতে হয়।
×