ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

২০২৫ সাল হোক নির্বিঘ্ন

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ১৮:৩৫, ২ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২২:১৩, ২ জানুয়ারি ২০২৫

২০২৫ সাল হোক নির্বিঘ্ন

ছবি : সংগৃহীত

২০২৪ সালের বিদায় সার্বিক সমাজ ব্যবস্থার নানামাত্রিক পটপরিবর্তন যা আগত বছরের নব দিগন্ত উন্মোচনে শুভযাত্রাপথ। কত চড়াই-উতরাই ডিঙিয়ে বছরটার শেষ সময় হরেক পালাক্রমের ভিন্নমাত্রার এগিয়ে চলা। বিশেষ করে জুলাইয়ের উদীয়মান প্রজন্মের লড়াকু অভিগমনে নতুন সরকার গঠন জাতির জন্য পরম আকাক্সিক্ষত বিষয়ও বটে। শেষ হয়ে গেল গোটা একটা বছরের ঘাত-প্রতিঘাত, নতুন পরিস্থিতিতে আধুনিকতার নব সংযোজন সবই যেন বিনি সুতার মালায় গাঁথা। সমসংখ্যক নারী লড়াকু অভিগমনের নির্ভীক যাত্রীর ভূমিকায় নিজেদের প্রমাণ করতে মোটেও পিছু হটেনি। সেখানে সম্ভাবনাময় নতুন বছরের নবযাত্রায়ও যৌক্তিক, প্রাসঙ্গিক আর আদর্শিকভাবে এগিয়ে চলারও দৃপ্ত অঙ্গীকারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। 
তবে সামনে চলার যাত্রাপথ নারী সমাজের জন্য কখনো নির্বিঘ্ন কিংবা নিষ্কণ্টক থাকেনি। ভাঙা গড়ান অবিমিশ্র যাত্রা হয়েছে দুঃসাহসিক মনোবল আর পারিবারিক নির্মল, বিশুদ্ধ আবহে। চিরায়ত প্রবাদবাক্যে সব সময় যে বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের আক্রান্ত নতজানুই শুধু নয় মানুষের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকাকেও প্রশ্নবিদ্ধের অন্তরালে চলে যায়। বৈষম্যপীড়িত সমাজে মূল পার্থক্যই সৃষ্টির ঊষাকাল থেকে যা নারী-পুরুষের ফারাক। তা যেন জন্মদাত্রী মায়ের গর্ভ থেকে পৃথিবী আলো দেখার সময়েও হরেক বিভাজনের সূতিকাগার। শুধু কি পুত্র-কন্যার ফারাক? সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যায় মানুষের মানসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার অদম্য লড়াইও। উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান ধারায় নানামাত্রিক বৈষম্য স্খলন সমাজ সভ্যতার ন্যায্যতা হলেও তা কোনোভাবেই বাস্তবে দৃশ্যমান হতে ক্রমান্বয়ে পিছু হটাও সময়ের চরম বিপরীত স্রোত। যা আজও ঠেকানো সাধ্যই হলো না কারোরই। আগত নতুন বছরের সূচনা পর্বেও উচ্চারিত হচ্ছে সহিংসতার আঁচড়ে পৃষ্ঠ নারীর মুক্তি কবে মিলবে? সেখানেও নতুন কোনো সম্ভাবনাই নয় বরং বহুবার উচ্চারিত, আলোচিত মান্ধাতা আমলের চিরায়ত সংস্কার। বরাবরের মতো ২০২৫ সালের শুভযাত্রায় এসে যাচ্ছে পরিবারই প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যেখানে সমতাভিত্তিক আঙিনায় নারী মানুষের কাতারে জন্মাবে। বেড়ে উঠবে, নিজেকে সহোদর ভাইয়ের মতো দৃপ্ত অঙ্গীকারে তৈরিও করবে। সমাজের বিশিষ্টজনদের আলোচনা সভার গোলটেবিলে এমন চিরস্থায়ী এক বেদনাসিক্ত অপসংস্কারকে খণ্ডানোর ওপর জোরালো মতামত উপস্থাপিত হয়। সেখানে পরিবারকে প্রধানতম সংগঠন বিবেচনায় শুরু থেকেই শিশু কন্যাটিকে সমতার মর্যাদায় গড়ে তোলার উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়। নতুন বছরে নবউদ্দীপনায় পুনরায় পুরনো বিধি সংস্কারকে ঝেড়ে ফেলে আধুনিকতার বরমাল্যে সমসংখ্যককে অভিষিক্ত করার আন্তরিক আবেদনে গোলটেবিল বৈঠক প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। নারী নেত্রী থেকে বিদেশী রাষ্ট্রদূত, সঙ্গে আইনশৃঙ্খলার পুলিশ কর্মকর্তা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেন ক্ষুদ্র পারিবারিক আঙিনা থেকেই বৈষম্য দূর করতে না পারলে বৃহত্তর সামাজিক বলয়ে তার সুফল পাওয়া আসলে কঠিন এক বাতাবরণ। সেখান থেকে যদি কন্যা শিশুরা শুধু সন্তান হিসেবে বড় হতে হরেক মাত্রার বিপন্নতার সম্মুখীন হয় তা হলে পরবর্তী যাত্রা পথও অবারিত আর স্বাচ্ছন্দ্য হবে না। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ব্র্যাকের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রতীয়মান হয় একজন কন্যা শিশু সর্বপ্রথম পারিবারিক আবহেই তার সহোদর ভাইয়ের সঙ্গে সমতার আদলে বড় হতে পদে পদে হোঁচট খায়। বিশেষ করে মাই তার পুত্র-কন্যার বিভেদটা কেমন যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। প্রতি দিনের আহারে সকালের নাশতা থেকে মধ্যাহ্ন এবং নৈশভোজেও দৃশ্যমান হচ্ছে ভাইয়ের সঙ্গে বোনের তিন বেলা খাবারের কিছু বৈসাদৃশ্য। প্রোটিন জাতীয় খাবার মাছ-মাংস থেকে ডিমসহ ফলফলাদিতে ও পুত্রের পাল্লায় ভারি হওয়া যেন জগৎ সংসারেরই নিয়মবিধি। যা যুগ-যুগান্তরের এক কঠিন বাতাবরণও বটে। তবে এমন সব বিভেদ-বিভাজনেও নারী শিক্ষা গত শতকের ক্রান্তিলগ্ন থেকে একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের মধ্যাহ্নে ক্রমাগত এগিয়ে যাওয়া সমসংখ্যকের জন্য অবারিত এক যাত্রাপথ। নারী শিক্ষা দ্রুততার সঙ্গে বিস্তার পাওয়ার ফলে তাদের বৈচিত্র্যময় পেশাতে সম্পৃক্ত হওয়া সমাজ ও নতুন সময়ের এক উৎসাহব্যঞ্জক যাত্রাপথ হলেও ঝঞ্ঝনার ইতিহাস কোনোভাবেই শোভন কিংবা স্বস্তিকর নয়। একজন শিক্ষিত কর্মজীবী মাও তার নতুন প্রজন্মকে সমতার আবরণ দিতে কেন পিছু হটছেন সেটা প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থায় আর কতকাল জিইয়ে থাকবে? সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী নারীর জন্য অনেক আইন প্রচলিত থাকলেও তা বাস্তবের মুখ না দেখা আরও এক বিপন্নতার বেড়াজাল। ‘পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন নামে যে বিধি আজও বহাল তবিয়তে আছে কাগজে কলমে। কিন্তু বাস্তব প্রেক্ষাপটে তার ছোঁয়াটিও পায় না বৈষম্যের নিগড়ে আটকানো নারীরা। সেখানে বলা হচ্ছে আইন তৈরি কিংবা প্রয়োগে তার কোনো কাক্সিক্ষত গতিবিধি নাকি অধরা। এই আইনে সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে পরিবারকে। যা এক সময় যৌথ পরিবার ছিল। আধুনিকতা আর ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের নব আঙিনায় একক পরিবারের নতুন বলয় সামাজিক অবস্থার কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। তবে সমস্যা যেহেতু আজও নারীদের বিব্রতকর আর বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে মুক্তি দেয়নি সেখানে নতুন সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় অনেক রদবদলের সংস্কার ও জরুরি হচ্ছে। তাই নারীর সুষ্ঠু, নির্বিঘ্ন বলয় থেকে তার যাত্রাপথের নানামাত্রিক প্রতিবন্ধকতাও সংস্কার প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। যা পুরো সামাজিক আঙিনার ভেতরের হরেক অপসংস্কার নির্মূলে যুগান্তকারী ও অপরিহার্য ভূমিকাকে উপহার দিতে পেছনে তাকাবে না। যদিও তা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সেটাই করতে হবে সময়ের যাত্রাপথেই। একজন সুশিক্ষিত, কর্মজীবী মাই যদি পুত্র-কন্যার বিভেদ করেন তা হলে নতুন সময়ের বরমাল্য কবে সমসংখ্যককে আলোর ঝর্ণাধারায় অবারিত যাত্রাপথের অনুষঙ্গ করবে। পুরনো সরকারের সঙ্গে নানামাত্রিক অপসংস্কারও বিলীন হতে খুব বেশি সময় অপচয়ও ন্যায্যতা পাবে না। তাছাড়া তেমন আধুনিক ও প্রযুক্তির বাংলাদেশে নারী সমাজ মেধা মননেও যোগ্যতম। বিবেচনায় চলমান সময়ের অনুগামী হবে এমনটাই প্রত্যাশা।

রাসেল

×