ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা

ফুটওভার ব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

​​​​​​​মো. খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:০৩, ২৯ মার্চ ২০২৪

ফুটওভার ব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

.

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এক নম্বর, চার নম্বর পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড এলাকাধীন নারায়ণগঞ্জ-আদমজী ইপিজেড-শিমরাইল সড়কের ব্যস্ততম সিদ্ধিরগঞ্জ পুল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফুটওভারব্রিজ না থাকায় প্রতিদিন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার লাখো মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পারাপার হচ্ছেন। এতে মানুষজন নানাবিধ সমস্যায় পড়তে বাধ্য হচ্ছেন। ফুটওভারব্রিজ না থাকায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে নানা দুশ্চিন্তায় থাকছেন। কারণ সিদ্ধিরগঞ্জপুল বাসস্ট্যান্ডটি সড়ক পারাপারের একটি বিপদজনক স্থান হিসেবে চিহ্নিত হলেও কর্তৃপক্ষ নানা অনুরোধের পরও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করছেন না। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন। ফলে পথচারীসহ স্থানীয়রা কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধিরগঞ্জপুল এলাকায় একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের জোর দাবি জানান। বুধবার বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়েও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থী, শ্রমিকসহ নানা পেশার মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পারাপার হতে দেখা গেছে।

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-আদমজী ইপিজেড-শিমরাইল সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত রিক্সা মিশুক সারাক্ষণ বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে। এছাড়াও আদমজী ইপিজেডের পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান, মালবাহী ট্রাক, পদ্মা মেঘনা ওয়েল ডিপোর অসংখ্য ট্যাঙ্কলরি নারায়ণগঞ্জ সাইলো থেকে গম বোঝাই ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। সড়কটি কয়েক সেকেন্ডের জন্যও ফাঁকা থাকছে না। তার ওপর আদমজী ইপিজেড ছুটি কাজ শুরুর সময় যানবাহনের চাপ অনেকাংশ বেড়ে যায়। খবর নিয়ে জানা যায়, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শুরু ছুটির সময়ও যানবাহন চলাচল বেড়ে যায়। তখন পথচারীদের সড়ক পারপারের সংখ্যাও বেড়ে যায়। ফলে যানবাহন দ্রুত বেপরোয়াভাবে চলাচল করায় ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ পারাপার হচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানায়, প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ সড়ক দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। সরেজমিন গেলে স্থানীয়রা জানান, বাসস্ট্যান্ডটি পারাপারের জন্য একটি বিপদজনক স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সড়কটি সারাক্ষণ যানজট অব্যাহত থাকে। আবার কোনো এক সময়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্যও সড়কটি ফাঁকা থাকলেও দ্রুত বেপরোয়াভাবে যানজট চলাচল করায় পথচারীদের পারাপারে নেমে আসে অশনি সংকেত। পথচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছেন। কেউ কেউ দিনে অসংখ্যবার সড়কটি দিয়ে পারাপার হচ্ছেন। খবর নিয়ে জানা যায়, সড়কটি পার হয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এক নম্বর, দুই নম্বর, চার নম্বর পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা পারাপার হচ্ছেন।

বাসস্ট্যান্ডটি অতিক্রম করে মিজিমিজি পূর্বপাড়া, আল-আমিন নগর, মজিববাগ, পাগলাবাড়ি, বাতানপাড়া, দক্ষিণপাড়া, আমজাদ মার্কেট, মিজমিজি পশ্চিমপাড়া, মাইঝপাড়া পাইনাদী পশ্চিমপাড়া, ধনুহাজীরোড, কালু হাজীরোড, নতুন মহল্লা, শাপলা চত্বর, সিআইখোলা, বউ বাজার, পাইনাদী পূর্বপাড়া, হিরাঝিল, সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার, ওমরপুর, কলাবাগ, মুন্সীপাড়া, সাইলো গেট, আইয়ুবনগর, সরদারপাড়া, আজীবপুর, রেললাইন, মাইছাপাড়া আটিসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন চলাচল করছে। তাই প্রতিনিয়ত তাদেরকে ব্যস্ততম বাস স্ট্যান্ডটি দিয়ে ফুটভার ব্রিজের অভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হতে হয়। এতে অনেকই সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছেন। পূর্বে বাসস্ট্যান্ডে পারাপার হতে গিয়ে অসংখ্য লোকজন হতাহত হয়েছেন। আটি এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জপুল বাসস্ট্যান্ডটি আগে এতো ব্যস্ত ছিল না। এখন আদমজী ইপিজেড হওয়ায় সিদ্ধিরগঞ্জপুল কেন্দ্রিক এলাকাগুলোতে শ্রমিকদের বসবাসের পরিমাণ বেড়ে গেছে। সবমিলে বাসস্ট্যান্ডটি এখন পথচারীদের সড়ক পারপারের জন্য বিপদজনক স্থানে পরিণত হয়েছে।

এখানে একটি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা অতিব জরুরি হয়ে পড়েছে। পাইনাদী সিআইখোলার বাসিন্দা মাসুদা আক্তার মনি বলেন, বাসস্ট্যান্ডটির আশপাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি হাইস্কুল, কলেজ মাদ্রাসা। তাই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষাথীরা চরম ঝুঁকি নিয়ে সড়কটি পার হচ্ছেন। যদি এখানে একটি ফুটওভারব্রিজ থাকত তবে নির্বিঘেœ ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ লোকজন পারাপার করতে পারতেন। মিজমিজির একটি স্কুলের পরিচালক একেএম নেজামউদ্দিন শাহীন বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জপুল বাসস্ট্যান্ডে একটি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের অনেক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আপনারা পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করেন। এতে যদি কর্তৃপক্ষ ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে সদয় হন।

মিজমিজির আল-আমিন নগরের বাসিন্দা আবু সাঈদ বলেন, নারায়ণগঞ্জের অনেক স্থানে পথচারীদের জন্য ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক স্থানের ফুটওভারব্রিজ দিয়ে এক ঘণ্টাও একজন পথচারীকে পার হতে দেখিনি। অথচ এখানে প্রতিদিন কয়েক লাখ লোক পারাপার হচ্ছেন। সিদ্ধিরগঞ্জের কলাবাগ এলাকার বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জপুল বাসস্ট্যান্ডটি পারাপারের জন্য একটি বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে একটি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এখানে ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি।

নারায়ণণগঞ্জ জেলার ট্রাফিক পুলিশের টিআই (প্রশাসন) মো. আব্দুল করিম বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জপুল বাসস্ট্যান্ডে একটি ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সড়ক পারাপারের কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়। সিদ্ধিরগঞ্জপুল এলাকায় ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা হলে যানজট অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করছি। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম সিদ্ধিরগঞ্জপুল বাসস্ট্যান্ডে একটি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, এলাকাটি সিটি করপোরেশনের হলেও সড়কটি সড়ক জনপথ বিভাগের অধীনে। তাই উক্ত স্থানে ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হবে।

সড়ক জনপথ (সওজ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, নারায়ণগঞ্জ-আদমজী ইপিজেড-শিমরাইল সড়কের সিদ্ধিরগঞ্জপুলসহ উক্ত সড়কে চলতি অর্থবছরে ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে উক্ত স্থানে ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের জন্য কেউ লিখিত আবেদন করেননি। লিখিতভাবে আবেদন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আমাদের জন্য সুবিধা হবে।

 

×