ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী

মো. রেদওয়ান মিয়া

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়   মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী

.

সূর্যমুখী ফুল পাল্টে দিয়েছে উপকূলীয় ক্যাম্পাস নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) ক্যাম্পাসের চিত্র। সূর্যমুখী ফুলের অপরূপ দৃশ্য যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে নোবিপ্রবির সকল শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী শিক্ষার্থীদেরকে। চারদিকে হলুদ ফুলের মন মাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে নোবিপ্রবি ক্যাম্পাস। সূর্যমুখী ফুল মানুষকে শুধু আনন্দই দেয় না। মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা মেটাতে তেল হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে।

সূর্যমুখীর তেল ঘিয়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা বনস্পতি তেল নামে পরিচিত। এই তেল অন্যান্য রান্নার তেল থেকে ভালো এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত কম। এছাড়া এতে ভিটামিন এডি রয়েছে। এই ফুলের গুণের মতোই বৈচিত্র্যময় এর নামকরণের ইতিহাস, সূর্যমুখী একবর্ষী ফুলগাছ যা লম্বায় মিটার (. ফুট) হয়ে থাকে এবং ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। সূর্যমুখী ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর এরূপ নামকরণ।

ফুল ভালোবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, ফুলের সৌন্দর্য আমাদের সবারই মন ছুঁয়ে যায়। প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার অন্যতন অনুষঙ্গই হলো এই ফুল। তবে এই ফুলের মাঝেও রয়েছে বৈচিত্র্য আর তাই তো এই ফুলের ব্যবহার বৈচিত্র্যময়, শ্রদ্ধা জানানোর উপকরণে বিয়ে, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, মিলনায়তন, শোকসভা কোনোকিছুর আনুষ্ঠানিকতা ফুল ছাড়া অসম্পূর্ণ। বছরের বিশেষ দিনে ফুলের গহনা নারীদের সাজিয়ে তোলে বিশেষভাবে। আবার, এই ফুলের জন্যই দুই মুঠো অন্ন জোটে কারও কারও মুখে। সূর্যমুখী চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলান বাংলার হাজারো কৃষক।

সূর্যমুখীর চাষ সারা বছর করা গেলেও অগ্রহায়ণ মাস অধিক লাভজনক সময়। প্রতিবছর সময় দেশজুড়ে দেখা মেলে সূর্যমুখী ফুলের। এমনকি নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) আঙিনায়ও প্রতিবছর উঁকি দেয় সূর্যমুখীরা। নোবিপ্রবি উপাচার্য মহোদয়ের নির্দেশে কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মাঠের পাশে চাষ করা হয় সূর্যমুখী যা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়, যোগ করে নতুন মাত্রা। শীত বসন্তজুড়ে সূর্যমুখীকে ঘিরে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে নোবিপ্রবিতে। চারদিকে হলুদ আর সবুজের গালিচা মন কেড়ে নেয় সবার। বসন্তের কমলা রঙের সূর্যরশ্মি সূর্যমুখীর উজ্জ্বলতা আরও বৃদ্ধি করে। সূর্যমুখী আকাশপানে এমনভাবে চেয়ে থাকে যা দেখে মনে হয় সূর্যের সঙ্গে তার গভীর কথোপকথন চলছে। বসন্তের মৃদু হাওয়ায় দোল খেতে খেতে সূর্যমুখী যেন আমন্ত্রণ জানায় সৌন্দর্যপিপাসুদের। চোখ ধাঁধানো এই মনোরম দৃশ্য আকৃষ্ট করে সবাইকে।

শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই ভাগ বসায় এই সৌন্দর্যকে। শিক্ষার্থীদের তো ছবি তোলার ধুম পড়ে যায় সূর্যমুখীর সঙ্গে। বিশেষ করে ক্যাম্পাসের তরুণীরা নিজেকে নানা রঙের শাড়িতে রাঙিয়ে ব্যাকুল হয়ে পড়ে শত সূর্যমুখীর মাঝে দাঁড়িয়ে নিজেকে ক্যামেরাবন্দি করতে। সূর্যমুখী ফুলের হাসির সঙ্গে যেন নিজেরাও লিপ্ত হয় তার চাঞ্চল্যে। কোনো এক ফাঁকে শিক্ষকরাও যোগ দেন ছবি তোলার উৎসবে। আবার, অনেক প্রকৃতিপ্রেমীরা উদাস দৃষ্টিতে দূর থেকেই উপভোগ করে সূর্যমুখীর সৌন্দর্য যার স্নিগ্ধতা নিমিষেই মন ভালো করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। অন্যদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সূর্যমুখীর সঙ্গে তোলা ছবি পোস্ট করার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে অনেকেই।

নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসের এই সূর্যমুখীর দল কেবল নোবিপ্রবিয়ানদেরই নয়, মন কেড়ে নেয় বহিরাগতদেরও। নোয়াখালীর স্থানীয় বাসিন্দারাও ভিড় করে সূর্যমুখীর সৌন্দর্যের ভাগ নিতে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে বহিরাগতরা সপরিবারে উপভোগ করতে আসে এই সৌন্দর্য। সূর্যমুখী যেন সবাইকেই সুযোগ করে দেয় তার সৌন্দর্য উপভোগ করার। অন্যকে নিজের সবটুকু সৌন্দর্য বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যেই যেন তার সৃষ্টির স্বার্থকতা।

চাষিরা বলেন, সূর্যমুখী চাষ করার পদ্ধতি মোটামুটি সহজ। প্রতি কেয়ার (বিঘা) জমিতে তিন কেজি বীজ, সামান্য সার কীটনাশক হলেই পর্যাপ্ত। সবকিছু মিলিয়ে খরচ হয় থেকে তিন হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে কৃষকের লাভ খুবই ভালো হয়। তাই দিন দিন চাষের প্রতি কৃষকরা ঝুঁকছেন বেশি।

নোবিপ্রবির শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল কবির ফারহান বলেন, সূর্যমুখী ফুল এই ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য হাজার গুণ বাড়িয়ে দেয়। ক্যাম্পাসে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ায়। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা ফুলের সৌন্দর্য বেশ কাছ থেকে উপভোগ করে।

×