ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাকৃবি পঞ্চান্নর বিদায়

মো. মিরাজ উদ্দিন

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাকৃবি  পঞ্চান্নর বিদায়

.

রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্-এর কবিতার কথা মনে আছে? আমার কিন্তু প্রায়ই মনে পরে, ‘চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়-বিচ্ছেদ নয় চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে আমার না-থাকাজুড়ে।

কবিতার এই খন্ডাংশটি হৃদয়ের গভীর স্থানে সূক্ষ্ম দাগ কেটে যাওয়ার মতোই। হ্যাঁ! ঠিক একইভাবে থেকে যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের মনে কোনো-না-কোনো না থাকাজুড়ে। তবে প্রতিটি চলে যাওয়াই কষ্টের। কিছু কিছুচলে যাওয়াএবং কিছু কিছুফেলে চলে আসামেনে নেওয়া অসম্ভব কঠিন হয়ে পড়ে মাঝে মাঝে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের সঙ্গে সাড়ে পাঁচ বছর একসঙ্গে ক্লাস, প্র্যাকটিকাল, আড্ডা, ঘোরাঘুরি আর জীবনের সুখ-দুঃখের ভাগাভাগি সেই পশুপালন অনুষদের চক্রবৃত্ত পঞ্চান্ন ব্যাচের আজ ইতি। আর হবে না একসঙ্গে ক্লাস কিংবা ঘোরাঘুরি, সবাই যেন হারিয়ে যাবে নিজ নিজ গন্তব্যে।

শিক্ষার্থীর কাছে বিশ্ববিদ্যালয় তার দ্বিতীয় পরিবার। কলেজের পর আরও একটি প্রাতিষ্ঠানিক ইতি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন অনুষদের ৫৫তম ব্যাচ চক্রবৃত্তের শেষ দিনটি ছিল অনন্য সুন্দর। 

ভদ্রলোকের ভাষায় এটিকে আজকাল্যাগ ফেস্টিভ্যালবাসাইনিং আউট ডেবলা হয়ে থাকে। তবে আমি বলবইতি চক্রবৃত্ত পঞ্চান্ন সর্বশেষ একাডেমিক (স্নাতক) পরীক্ষার যখন ফর্ম ফিলাম করছিলাম তখন ভাবছিলাম, ‘আহা কি সুন্দর দিন ছিল!’

এইতো সে-দিনই কেবল ভর্তি হতে বেরিয়ে পরেছিলাম বাসা ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে। যখন ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম সেদিন পরীক্ষা দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের দিকে চোখ তুলেও তাকাইনি, ভেবেছিলাম যদি চান্স না পাই তাহলে খারাপ লাগবে। শুনেছিলাম বাকৃবি এক মনোরম সৌন্দর্যের প্রকৃতি কন্যা-স্রষ্টার অনন্য আশীর্বাদ। ভাগ্যের লিখনে লেখা ছিল বলে চান্স হয়ে যায়।

আজ প্রায় সাড়ে বছর পর স্নাতক জীবন শেষ হওয়ার পথে। ছেড়ে যাওয়ার সময় হয়েছে সেই পুরনো নোট-বইখাতা, হলের সেই রুম। হঠাৎ আর মোবাইল ফোনের মেমোরিতে থাকা প্রথম সেমিস্টারের ক্লাসের স্মৃতি। সেই দিনগুলোর কথাগুলো দেখলে মনে পরে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিকের ক্লাসগুলোর প্রতি এত বেশি আবেগ আর উচ্ছলতা ছিল যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

করোনা মহামারি কারণে অনেকটা সময় পিছিয়ে পরেছিলাম আমরা। প্রাায় দেড় বছর অনলাইনে ক্লাস করেছি কিন্তু পরীক্ষাগুলো বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর হয়েছে। সবকিছু স্বাভাবিক হতে সময় লাগছে ঠিকই তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন শেষ হওয়ার সময় শুরু হয়ে গিয়েছিল। সবকিছু এত দ্রুত শেষ হয়ে গেল যেন পলক খুলতেই আমি আর চক্রবৃত্তে নেই। তবে প্রায়ই মনে পরে সেই ক্লাসের ফাঁকে বন্ধুদের দুষ্টুমি-খুনসুটিগুলো, আন্দোলন-শোডাউনগুলোতে একসঙ্গে কাটানো সময় আর গানের আসর কিংবা চায়ের আড্ডা। আমি প্রথম বর্ষে যখনই সুযোগ পেতাম তখনই বন্ধুবান্ধবের ক্যান্ডিট ছবি তুলতাম। কেও জিজ্ঞাসা করলে বলতাম, ‘থাকবে এক সময় স্মৃতি হয়ে!’

বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি জায়গা যেখানে প্রায় সব রকমেরই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। এখানে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকে, থাকে স্বাদ আহ্লাদের পার্থক্য। এখানে যেমন থাকে নারসিসিস্টদের মারাত্মক টক্সিসিটি তেমনই থাকে এম্পাথিটিকদের বুকভরা স্নে ভালোবাসা (ভাবার উপায় নেই যে সব নারসিসিস্টই টক্সিক) সৃষ্টিকর্তা আমার প্রতি অনেক সহানুভূতিশীল বলেই আমার  আসে পাশের মানুষদের কাছে অনেক স্নে, মায়া, মমতা এবং ভালোবাসা পেয়েছি।

×