ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকলায় বাতিঘরের  ‘প্যারাবোলা’  নাটকের মঞ্চায়ন

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

শিল্পকলায় বাতিঘরের  ‘প্যারাবোলা’  নাটকের মঞ্চায়ন

প্যারাবোলা নাটকের দৃশ্য

নোবেলজয়ী ইতালিয়ান নাট্যকার দারিও ফোর আলোচিত নাটক ‘অ্যাকসিডেন্টাল ডেথ অব অ্যান অ্যানার্কিস্ট’। ইতালিতে ঘটে যাওয়া বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে রচিত হয়েছে নাটকটি। মিলান শহরের পুলিশ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে রেলওয়ে বোমা হামলার ঘটনায় রেলশ্রমিক পিন্নেলিকে অভিযুক্ত করে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় পিন্নেলি রহস্যজনকভাবে পুলিশ সদর দপ্তরের চতুর্থ তলা থেকে পড়ে মারা যান। ইতোমধ্যে নাটকটি বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশে মঞ্চস্থ হয়েছে। সেই স্রোতধারায় গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার মঞ্চে নাটকটি নিয়ে এসেছে নাট্যদল বাতিঘর। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নাটকটির নামকরণ করা হয়েছে ‘প্যারাবোলা’। নাটকটি অনুবাদ করেছেন শাহানা জয় ও খালিদ হাসান রুমী। নাট্যরূপ দেওয়ার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন মুক্তনীল। দলের ১৭তম প্রযোজনাটির নবম মঞ্চায়ন হলো রবিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে। 
প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নির্দেশক মুক্তনীল বলেন, একটি মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই নাটকের  কাহিনী। এই মৃত্যুকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে জানা যায় মৃত্যুর মূল কারণ। এভাবেই সুশাসন পাওয়ার সম্ভাবনা  তৈরি হয়। আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় এই দেখার সুযোগটা রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আমরা বিস্মৃতিপরায়ণ জাতি। হিসাবে সময়ের ব্যবধানে সবকিছু ভুলে যাই। এটা আমাদের সীমাবদ্ধতা। এই সীমাবদ্ধতার সুযোগে আমাদের সঙ্গে চলে মর্মান্তিক প্রহসন। বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। মানুষের জীবন নিয়ে চলে  হেঁয়ালি ও তামাশা। যেখানে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারই আমরা পেয়েছি ৩৫ বছর পর, সেখানে সাধারণ মানুষের অবস্থা তো সহজেই অনুমেয়। কসমেটিক উন্নয়নের আড়ালে যে নিষ্ঠুর সত্যটি লুকিয়ে আছে, আশঙ্কা তা এক সময় পুরো সমাজটাকে না গ্রাস করে ফেলে। উন্নয়ন যে হচ্ছে না তা কিন্তু নয়; তবে মানবিক বোধ ও নীতি-নৈতিকতার যে ধস নেমেছে, তা রোধ করা কি সম্ভব হবে এই যাত্রায়? উত্থাপিত সেসব প্রশ্ন ও জবাদিহিতার মাঝে সত্যের অনুসন্ধান করা হয়েছে নাটকের কাহিনীতে।
নাটকটিতে মূলত দুর্নীতি, ছদ্মবেশ, অনুপ্রবেশ, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং তদন্তের নানা অসঙ্গতিগুলো তীক্ষè সংলাপ, রসিকতা ও বক্রোক্তির মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে। বাচাল প্রকৃতির এক খ্যাপা মানুষ একদিন ছদ্মবেশে একটি পুলিশ দপ্তরে অনুপ্রবেশ করে একজন তদন্তকারী বিচারকের ভূমিকায়। সেখানে তার বুদ্ধিদীপ্ত ভূমিকা দর্শকদের মনে করিয়ে দেয় কীভাবে ইতালির বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বামপন্থি দলগুলো পুলিশ এজেন্টদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল। খ্যাপার দৃষ্টিভঙ্গি ও বক্তব্য পুলিশ সদস্যদের বিভ্রান্তি ও দ্বন্দ্বের দিকে নিয়ে যায়। একজন আসামিকে যেভাবে ট্রমাটাইজড করা হয়,  সেই একই মিথ্যার ফাঁদে পড়ে হতাশায় নিমজ্জিত হয় তদন্ত অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। ঘটনা পরম্পরার নানা অ্যাঙ্গেল বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে নাটকের শেষ অংশে গিয়ে উন্মোচিত হয় প্রকৃত সত্য। দর্শক জানতে পারে প্রকৃত নৈরাজ্যবাদী কে।
প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন মুক্তনীল, ফয়সাল মাহমুদ, তাজিম আহমেদ, শৈবাল সান্যাল, শিশির সরকার, সোহানুর রহমান, রুম্মান শারু, নীলয় বিশ্বাস ও সাদ্দাম রহমান।
সরদার ফজলুল করিমের জন্মবার্ষিকীর আলোচনা সভা ॥ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক সরদার ফজলুল করিমের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। একাডেমির শহীদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আয়োজনে একক বক্তৃতা করেন গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির সংস্কৃতি, পত্রিকা ও মিলনায়তন বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. সরকার আমিন। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। 
ড. আনিসুজ্জামান বলেন, সরদার ফজলুল করিম একজন আদর্শ শিক্ষক, গুণী লেখক, দক্ষ অনুবাদক, দায়বদ্ধ রাজনীতিবিদ এবং সমাজ বদলের স্বপ্নশীল দার্শনিক। তিনি কৈশোরকাল থেকে আমৃত্যু মানুষের মুক্তির জন্য তার জীবন উৎসর্গ করেছেন। অসামান্য মেধার অধিকারী মানুষটি তার ব্যক্তিগত সুখস্বাচ্ছন্দ্য তুচ্ছ করে মহৎ-মানবিক পৃথিবী গড়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। বক্তা বলেন, সরদার ফজলুল করিম দৈহিকভাবে আমাদের মাঝে না থাকলেও তার অম্লান আদর্শ চিরকাল বাংলা ও বাঙালিকে পথ দেখাবে। 
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, সরদার ফজলুল করিম বাংলা একাডেমির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে আবদ্ধ। আমৃত্যু সরদার ফজলুল করিম তার অনুবাদ ও দর্শনচর্চার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের মুক্তির দার্শনিক পাটাতন তৈরির কাজ করেছেন। 
ড. সরকার আমিন বলেন, সরদার ফজলুল করিম সহজিয়া বাংলার এক বিরল মনীষী। তিনি আমৃত্যু মানুষের মঙ্গলের কথা ভেবেছেন এবং সর্বমাঙ্গলিক সমাজ গড়ার কাজ করেছেন। 
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. সাইমন জাকারিয়া

×