ঢাকা শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিক্সা
রাজধানীতে যানজটের অন্যতম বৃহৎ কারণ হয়ে উঠেছে নিবন্ধনহীন অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিক্সা। পুরান ঢাকার ওয়ারী এলাকাতেই প্রায় ২৫ হাজার অটোরিক্সা চলাচল করে অবৈধভাবে। অবৈধ অটোরিক্সা চালানোর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন সিন্ডিকেটের রিক্সা চালাতে ‘স্টিকার’ নিতে দৈনিক ৫০ টাকা খরচ হয় চালকদের।
ভুয়া সাংবাদিক, হিজড়া, স্থানীয় রাজনীতিবিদদের আলাদা আলাদা সিন্ডিকেট রয়েছে বাণিজ্যের পেছনে। অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিক্সা বাণিজ্য থেকে এ সিন্ডিকেটের বছরে চাঁদা আদায় করে ৫০ কোটি টাকার বেশি। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী শনির আখড়া, সায়েদাবাদ, টিকাটুলি, সদরঘাট, দয়াগঞ্জ, জুরাইন এলাকার ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সায় এসব স্টিকার দেখা গেছে।
অবৈধ স্টিকারের জোরে এসব রিক্সা নিয়মিতই গলি থেকে এসে প্রধান সড়কগুলোতেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ফলে সড়কে জট বাধাচ্ছে। অটোরিক্সাচালক জয়নাল বলেন, কারা এই স্টিকার দিচ্ছে জানি না। তবে এই স্টিকারের জন্য রিক্সামালিক প্রতিদিন আমাদের কাছ থেকে ৪০ টাকা করে কেটে নিচ্ছে। বিভিন্ন নামে-বেনামে বিভিন্ন কালারের এই স্টিকার এক হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। এই স্টিকার ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সায় লাগিয়ে চলতে বলেছেন মালিক।
এ বিষয়ে যাত্রাবায়ীর ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর মাহবুব শাহ্ জানায়, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। যদি কেউ মূল সড়কে চলে আসে, তা হলে তাকে অবশ্যই জরিমানার আওতায় আনছি।’ দৈনিক প্রায় ২৫ থেকে ২৭টি অটোরিক্সাকে জরিমানা করেন বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস চলাচল করে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, ভৈরব, নরসিংদীর বাসগুলো এখান থেকে ছেড়ে যায়। এজন্যই এই সড়কটি সব সময় ব্যস্ত থাকে। কিন্তু অনেক অটো রিক্সাচালক আছেন যারা জানেন না বা বোঝেন না বা হঠাৎ করেই মূল সড়কে চলে আসেন। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়। যারা না বুঝে মূল সড়কে চলে আসেন, তাদের আমরা বুঝিয়ে দিচ্ছি যে, আপনারা মূল সড়কে আসবেন না। যদি আসেন তা হলে আপনাদের জরিমানা করা হবে।
অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিক্সার জন্য যেন যানজট না বাড়ে সেজন্য ডিএমপির ওয়ারী ট্রাফিক বিভাগ ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করছে। তার পরও এসব এলাকা থেকে অটোরিক্সা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারার পেছনে জনবল সংকটের বিষয়টি সামনে এনেছেন ওয়ারী ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আশরাফ ইমাম।
প্রতিটি প্রধান সড়কে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে এবং এটি নিয়মিত অভিযান হিসেবে অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন এ উপ-পুলিশ কমিশনার।
মোহাম্মদ আশরাফ ইমাম বলেন, ওয়ারী এলাকায় ২০ থেকে ২৫ হাজারের মতো ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলে। সে তুলনায় ট্রাফিক পুলিশের টিম ছোট। ট্রাফিক পুলিশ যদি শুধু অটোরিক্সা নিয়ে চিন্তা করে তাহলে অন্যান্য জায়গায় যানজট নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটে।
বিপুল সংখ্যক ব্যাটারিচালিত রিক্সা হওয়ায় শুধু জরিমানা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা রিকশামালিকদের সঙ্গে দুটি মিটিং করেছি। যেন গলি থেকে মূল রাস্তায় নেমে না আসে। এজন্য নিয়মিত অভিযান করা হচ্ছে।
স্টিকার নিয়ে কারা চাঁদাবাজি করে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৭-৮ জনের হিজড়াদের টিম স্টিকার করেছে, তাদের অধীনে ৩০০ থেকে ৪০০ গাড়ি থাকে। তাদেরকে চাঁদাবাজি না করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি সিন্ডিকেট রয়েছে। স্টিকার প্রতি ৫০ টাকা নেওয়া হয়। জরিমানার বিষয়ে তিনি বলেন, ট্রাফিক আইন অমান্য করলে ৬০০ টাকা জরিমানা করা হয়। কেউ যদি বাড়াবাড়ি করে তা হলে এক সপ্তাহ আটক রাখা হয়।