শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। আর সেই মেরুদ- গড়ার কারিগর হচ্ছেন শিক্ষক। শিক্ষকদের তাই মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয়। শিক্ষক ছাড়া উন্নত সমাজ ও উজ্জ্বল জীবন কল্পনাতীত। তাঁদের শিক্ষার আলো যেমনি শিক্ষার্থীদের সামনে পথচলাকে সুদৃঢ় করে, তেমনি তাঁদের স্নেহ, মমতা, ভালবাসা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে। একজন আদর্শ শিক্ষক হয়ে উঠতে পারেন সকল ছাত্রছাত্রীর আদর্শ। যার ফলে সমাজ ও দেশ পায় আদর্শ ছাত্রসমাজ। একটি সুষ্ঠু, সুন্দর জাতি গঠনে যাদের অগ্রণী ভূমিকা থাকে। কিন্তু বর্তমানে এই মানুষ গড়ার কারিগররাও হয়ে উঠছেন বিতর্কিত। তাঁদের কেউ কেউ এখন টাকা উপার্জনের কারখানা। অনেক শিক্ষকই আছেন তাঁদের কাছে না পড়লে পরীক্ষায় ভাল নম্বর দেন না। এমন শিক্ষকদের থেকে ছাত্র সমাজ কি শিখবে? একটা সময় ছাত্র রাজনীতি সবাই করতে পারত না। ভার্সিটিতে পড়ার সময় ছাত্ররা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতো। কিন্তু এখন আর তা নেই। তবে সুষ্ঠু সুন্দর রাজনীতি হলে সমস্যা হতো না। কিছু শিক্ষকের ভূমিকায় ছাত্র রাজনীতি হয়ে উঠেছে কলুষিত। অনেক শিক্ষকরাই কোমলমতি এসব ছাত্রছাত্রীকে দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করে দলীয় দ্বন্দ্ব-কলহে তাদের উসকিয়ে দেয়। ফলে তারা দাঙ্গা-ফ্যাসাদে লিপ্ত হয়ে যায়। এক সময় অনেকেই বড় হয়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখত। একজন আদর্শ শিক্ষকের সাহচর্যে সত্যিকারের একজন আদর্শ মানুষ তৈরি হতো। অভিযোগ উঠছে আজকে শিক্ষক ব্রতটির মর্যাদা অনেক শিক্ষকই ধরে রাখতে পারছেন না। শিক্ষার্থীদের কল্যাণ সাধন ও সুশিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের সীমাবদ্ধতা বাড়ছে। শিক্ষকদের কাছে সমাজের প্রত্যাশা প্রাজ্ঞ বিবেচনা, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি ও ¯েœহার্দ্র আচরণ। দুঃখজনকভাবে যা দিনে দিনে অনুপস্থিত হয়ে চলেছে। একটা সময় শিক্ষকরা দারিদ্র্যর কষাঘাতে জর্জরিত ছিলেন। সস্মানের দিক দিয়ে উচ্চমানের হলেও, আর্থিক দিক দিয়ে ছিলেন সবচেয়ে অবহেলিত। দিন বদলেছে। বর্তমান সরকার শিক্ষদের যথাযথ সন্মানী দিয়ে করেছেন সম্মানিত। কিন্তু তাঁদের বেশিরভাগই এখন কলুষিত। গোড়া থেকেই শুরু হয় জটিলতা। চাকরিটাই তাঁদের নিতে হয় বিরাট অংকের ঘুষ দিয়ে। যারা কিছুটা নীতিবান তাঁরা ঘুষ দিয়ে চাকরি নিলেও নিজেদের আদর্শ ধরে রাখেন। সৎ থেকে যতটা উপার্জন করতে পারেন, ততটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকেন। বাকিরা শিক্ষকতায় আসেনই ছাত্রছাত্রী পড়িয়ে টাকা উপার্জনের ধান্দায়। ফলে তাঁরা কারও আদর্শ হতে পারে না।
ছাত্রদের চরিত্র গঠনে তারা কোন ভূমিকা রাখে না। আমাদের শিক্ষকরা সমস্ত রকম খারাপ কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকতে শিখিয়েছেন। বিপদে শত্রুর পাশেও দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। আঘাতের পরিবর্তে ভালবাসা দিয়ে তাদের সঠিক পথে আনতে শিখিয়েছেন। আমরা শিক্ষকদের এখনও ভক্তিভরে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। কিন্তু বর্তমান যুগের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে শিক্ষকদের প্রতি সেই শ্রদ্ধা-ভক্তিও নেই বললেই চলে। তাই আমাদের চাওয়া- সবদিক থেকে শিক্ষকরা হোক কলুষতামুক্ত। কোন ছাত্রের হাতে যেন কোন শিক্ষককে লাঞ্ছিত হতে না হয়। কোন শিক্ষককে যেন ঘুষের বিনিময়ে শিক্ষক হতে না হয়। ছাত্রদের জিম্মি করে অর্থ উপার্জন যেন কোন শিক্ষকের নীতি না হয়। তাঁরা যেন সম্মানের উচ্চ শিখরেই থাকেন। তাঁরা যেন সত্যিকারের মানুষ গড়ার কারিগর হোন।
রামপুরা, ঢাকা থেকে