২০১৩ সালের মে মাসে আমি বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। ঐ মে মাসের ৪ তারিখ মৌলবাদী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম মাওলানা শাহ আহম্মেদ শফীর নেতৃত্বে তাদের ১৩টি দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সরকারকে বাধ্য করার জন্য ৫ মে ঢাকা অবরোধের ঘোষণা দেয়। এই ১৩টি দাবি ছিল-
১. সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিলকরণ;
২. আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদ-ের বিধান রাখা;
৩. ঢাকার শাহবাগকেন্দ্রিক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী (যুদ্ধ-অপরাধীদের বিচার ও শাস্তির দাবিদার) স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদদের তৎপরতা, ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে জঘন্য কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধ ও শাস্তিদানের ব্যবস্থাকরণ;
৪. ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ রহিতকরণ;
৫. ইসলামবিরোধী নারী নীতি ও ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলককরণ;
৬. সরকারীভাবে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধকরণ;
৭. মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন নিষিদ্ধকরণ;
৮. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘেœ নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধা দেওয়া বন্ধকরণ;
৯. রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি-টুপি ও ইসলামী কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস নিষিদ্ধকরণ;
১০. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকা-ে জড়িত এনজিও এবং খ্রীস্টান মিশনারীদের ধর্মান্তকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধকরণ;
১১. রাসূলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসা ছাত্র এবং তৌহিদী জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণগত্যা বন্ধকরণ;
১২. সারাদেশের কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবদেরকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখানোসহ তাদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র নিষিদ্ধকরণ; এবং
১৩. অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসা ছাত্র ও তৌহিদী জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণসহ সকল দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় আনা।
বিচ্ছিন্নভাবে এসব দাবি আদায়ের লক্ষ্যে হেফাজতে ইসলামের তরফ থেকে ২০১৩-এর ১ এপ্রিল থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন শহরে মিছিল ও সভা অনুষ্ঠিত হতেছিল। এসব সভায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা যোগ দিয়ে ক্ষেত্র ও সময়বিশেষে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালিয়ে যায়। কয়েক স্থানে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে তাদের মারামারি ও হাতাহাতি হয়। ৩০ এপ্রিল বগুড়ায় অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা আহম্মেদ শফী সরকারকে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তওবা করে তাদের ১৩ দফা মেনে নেয়ার আহ্বান জানান। এই ১৩ দফা দাবির নির্যাস হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে, কোন নাস্তিক বাংলাদেশে থাকতে পারবে না। বগুড়ার এ সমাবেশে চট্টগ্রাম থেকে মাওলানা শফী হেলিকপ্টারে তার হেফাজতের মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী, নায়েবে আমির মুফতি হারুন ও অন্যান্য সহযোগীসহ আসেন। হেফাজতের এই সমাবেশের কারণে ঐ দিন বগুড়া শহর কার্যত বন্ধ ছিল। একই দিন চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা ও ময়মনসিংহে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা, দা-কাস্তে, লোহার রড, ঘরে তৈরি বোমা-গ্রেনেড ও মশাল নিয়ে জঙ্গী সমাবেশ করে শফীর অনুরূপ দাবি উত্থাপন করে তা মেনে নেয়ার জন্য প্রশাসনকে আলটিমেটাম দিতে থাকে। তাদের সকলের তরফ থেকে বগুড়ায় মাওলানা শফী ঘোষণা করেন যে, ‘আমরা আর ধোঁকা খাব না, হয় আমাদের দাবি মানবেন, না হয় আমরা শাহাদাতবরণ করব’ (দ্রষ্টব্য: দৈনিক প্রথম আলো-অনলাইন-৩০.০৪.১৩)। বগুড়ার এই সমাবেশে তারা তাদের এসব দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ৫ মে ঢাকায় আরও বড় সমাবেশ আয়োজন করার ঘোষণা দেন।
দাবি আদায়ের জন্য শফীর শাহাদাতবরণের ঘোষণার প্রেক্ষিতে এদের সম্পর্কিত সকল তথ্যাদি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১ থেকে ২ মে সংশ্লিষ্ট বিভাগ/সংস্থা প্রধানদেরসহ বিশ্লেষণ করি। আমি আশ্চর্য হয়ে অনুধাবন করি যে, হেফাজতীদের ১৩ দফার দাবির একটিতেও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের, দরিদ্র মানুষের কল্যাণ সাধনের, উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর, বেকারত্ব কমানোর এবং ইসলামের মর্মবাণী অনুযায়ী সর্বক্ষেত্রে সামাজিক সমতা স্থাপনের কোন উল্লেখ ছিল না। শফী এবং তার অনুসারীরা বস্তুনিষ্ঠভাবে দেশের সমকালীন আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিতে সরকারী পরিকল্পনা ও কার্যক্রমে কোন্ ক্ষেত্রে কতটুকু অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন সে সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না বলে মনে হয়েছে। অন্য কথায়, ধর্মের মোড়কে উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়ে ধর্মপ্রাণ জনগণের চাঁদার জোরে তারা তাদের গোষ্ঠীগত স্বার্থ ও প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত এবং প্রসারণের লক্ষ্যে এই ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করেন বলে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়। আমি আমার সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে এ সম্পর্কে নিশ্চিত হই যে, হেফাজতে ইসলাম ও তাদের অনুসারীরা দেশের বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক সমস্যা, অগ্রগতির ভিত্তি এবং সরকার বা সমাজের এই ক্ষেত্রে কি করণীয় সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গভাবে অজ্ঞ ছিলেন। আমি আশ্চর্য হয়ে এও লক্ষ্য করি যে, চট্টগ্রাম এলাকার রোহিঙ্গা সমস্যা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নীরব থেকে তারা কেবল তাদের ভাষায় খ্রীস্টান ধর্মযাজকদের দ্বারা উপজাতীয়দের কথিত ধর্মান্তরকরণ সম্পর্কে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে সেই এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রয়োজন ও পথকে তাদের বিবেচনার বলয় থেকে দূরে সরিয়ে দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক সমস্যাদি এবং তাদের সমাধানকে পূর্ণাঙ্গভাবে অবজ্ঞা করেছেন। আমি নিঃসন্দেহ হই যে, হেফাজতী ও তাদের সমর্থকরা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বলে দেশের উন্নয়ন সম্ভাবনার বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলেন।
৩ মে ২০১৩ শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতীদের ১৩ দফা দাবি সম্পর্কে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন:
১. সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম উল্লিখিত;
২. ধর্মের অবমাননার বিরুদ্ধে বিচার ও শাস্তির বিধান আমাদের প্রচলিত বিশেষ ক্ষমতার আইনে বিদ্যমান;
৩. শান্তিপ্রিয় ও নিরপরাধ আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে সরকার কোন পদক্ষেপ নেয়নি, তাদেরকে শাস্তিও দেয়া হয়নি;
৪. দেশে কোন ধর্ম পালনে সরকারের তরফ থেকে কোন বাধা নেই;
৫. সাংস্কৃতিক কর্মকা- দেশের প্রচলিত ব্যক্তি ও বাক-স্বাধীনতা বিষয়ক আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে;
৬. অনাচার ব্যভিচার, নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালন ইত্যাদি প্রচলিত আইনে বিধৃত নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করলে যথা প্রয়োজন পদক্ষেপ নেয়া হবে;
৭. মূর্তি আর ভাস্কর্য এক নয়; দেশে কোন অশ্লীল মূর্তি তৈরি বা স্থাপন করা হবে না;
৮. শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক;
৯. ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শিক্ষা উন্নয়নের ধারক ও বাহক;
১০. নারীর অবমাননা হয় এমন কোন নীতি সরকার কর্তৃক অনুসৃত হবে না;
১১. কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের যদি কোন ধরনের হুমকি দেয়া হয় তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে; আলেম-ওলামাদের নিয়ে অপপ্রচার বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে;
১২. ধর্মের নামে জঙ্গীবাদী কর্মকা- প্রতিহত করা হবে; এবং
১৩. পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ধর্মান্তরকরণ করা আইন অনুযায়ী বন্ধ হবে (দ্রষ্টব্য: প্রথম আলো ৪/৫/১৩)।
হেফাজতে ইসলামের দাবিসমূহের বিপরীতে সরকারের অবস্থান এভাবেই তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সমাজের প্রান্তিকে অবস্থানরত জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানে সকল চিন্তাশীল ব্যক্তিসহ হেফাজতীদের মনোনিবেশ করতে আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান তুলে ধরার পরও ৪ ও ৫ মে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে তাদের দাবি নিয়ে অহেতুক ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিতে থাকেন। বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি তাদেরকে সরকারের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক উস্কানি দিতে থাকে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রবেশমুখে তারা খ- খ- মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত করে ৪ মে ঘোষিত হেফাজতীদের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যেতে উৎসাহ যোগাতে থাকে। ৩ থেকে ৪ মে পর্যন্ত এসব খ- খ- মিছিল ও সমাবেশে তারা শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে যোগ দেয় এবং অংশগ্রহণ করে।
৪ মে হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ৫ মে তাদের দাবিসমূহ উত্থাপনের লক্ষ্যে একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত করার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে অনুমতি চায়। শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়ে ঢাকা মহানগরী পুলিশের তরফ থেকে তাদেরকে ৫ মে বিকেলে মতিঝিলস্থ শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয় এবং সেদিন এই সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য মহানগরীর বিভিন্ন প্রবেশমুখে তাদেরকে শান্তিপূর্ণ মিছিল করতেও অনাপত্তি জানানো হয়। ৪ মে হেফাজতে ইসলামের প্রধান মাওলানা শফী এবং তাদের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী আমাকে টেলিফোন করে তাদের সকল কর্মকা- শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। শফী আমাকে এও বলেন যে, তিনি নিজে ৫ মে বিকেলে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে গিয়ে তার অনুসারীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ মোনাজাত করে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপন করবেন। আমি তাকে সমাবেশে না গিয়ে মোবাইল ফোনে তার অনুসারীদের বিকেল ৬টার মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ সমাপ্ত করার নির্দেশ দিতে অনুরোধ করি। আমি তাকে বলি যে সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদেরকে গ্রেফতার বা তাদের ওপর বল প্রয়োগ করবে না। তিনি আবারও হেফাজতের এই সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে হবে বলে আমাকে প্রতিশ্রুতি দেন এবং আমার সঙ্গে কথা বলার শেষ পর্যায়ে তার ছেলেকে যেন পুলিশ কোনক্রমে গ্রেফতার না করে তার জন্য অনুরোধ জানান। তার এই শেষোক্ত কথায় আমি অবাক হয়ে উপলব্ধি করি যে, উত্থাপিত দাবিসমূহ এবং এই সমাবেশের অনুকূলে তার সমর্থন আন্তরিক বা নির্ভেজাল ছিল না। স্পষ্টত তার তরুণ অনুসারীদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে তিনি তার ছেলে যাতে কোনক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেই বিশেষভাবে মনোযোগী ছিলেন। এই ধারণার ভিত্তিতে আমার প্রতীতি হয় যে, হেফাজতীরা তাদের ১৩ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন ও ঢাকা অবরোধের কর্মসূচী সফল করতে পারবে না।
এর আগে ৪ মে সকালে আমার কাছে প্রেরিত ঘটনাক্রমের প্রতিবেদনের আলোকে এবং সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা প্রধানদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে আমি নির্দেশ দেই যে, মতিঝিলস্থ শাপলা চত্বরে সমাবেত হেফাজতীরা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করলে যথাসম্ভব কম বল প্রয়োগ করে সর্বাত্মক দৃঢ়তার সঙ্গে তাদেরকে হটিয়ে দিতে হবে। আমি সুস্পষ্টভাবে বলি যে, কোনক্রমেই হেফাজতীদের শাপলা চত্বরের নিকটস্থ বাংলাদেশ ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের সদর অফিস তছনছ বা লুট করার কোন সুযোগ দেয়া হবে না। আমি সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দেই যে, কোন দুর্বৃত্ত গোষ্ঠী যদি বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক বা জনতা ব্যাংকের সদর দফতরের ভেতরে প্রবেশ করতে চেষ্টা করে তাহলে তাদেরকে হটিয়ে দেয়া ও গ্রেফতার করার জন্য সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগ করা হবে। চলবে...
লেখক : সাবেক সচিব ও মন্ত্রী