ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিষয় ॥ হাওড়ে অকাল প্লাবন ॥ অবহেলা ও অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ৪ মে ২০১৭

বিষয় ॥ হাওড়ে অকাল প্লাবন ॥ অবহেলা ও অনিয়ম

হাওড়াঞ্চলের কৃষকরা সর্বস্ব হারিয়েছে আগাম বন্যায়। সেখানকার একমাত্র ফসল বোরো ধান তাদের সারা বছরের চাহিদা মেটাত। সেই ধান ডুবে নষ্ট হওয়ায় তারা রীতিমতো দিশাহীন। সরকার মাসে ৩০ কেজি চাল এবং নগদ ৫০০ করে টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিলেও, তা এখনও তারা ঠিকভাবে হাতে পাচ্ছে না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় প্রশাসন দুর্গতদের তালিকা তৈরি করছে। কিন্তু সে তালিকায় নাম থাকবে কি না তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে দুর্গতদের মধ্যে। ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা কম বলে অনেককেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। পানীয় জলের সঙ্কট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ফলে পানিবাহিত রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ স্বাস্থ্যসেবার কর্মসূচীও জোরদার করা দরকার। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুততম সময়ে ব্যাপকভিত্তিক ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা না হলে হাওড়বাসীর দুর্দশা চরমে উঠবে এবং ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ক্রমেই বাড়বে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ত্রাণ কার্যক্রমে কোন গতি তো নেই-ই, বরং প্রশাসনের এক ধরনের উদাসীনতা লক্ষ্যণীয়। তার কিছুটা প্রমাণ পাওয়া গেছে ত্রাণমন্ত্রীর নেত্রকোনা সফরের সময়। সেখানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী জানতে চান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় সরকারের পক্ষ থেকে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, দু-এক দিনের মধ্যে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবেÑ এমন অনেক বিষয়। প্রায় কোন প্রশ্নেরই সদুত্তর পাননি তিনি। মৎস্য কর্মকর্তার কাছে মন্ত্রী জানতে চেয়েছিলেন, মাছের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে? উত্তর দিতে পারেননি তিনি। মন্ত্রী জানতে চান, ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কী পরিমাণ মাছের পোনা ছাড়তে হবে? কিছু না ভেবেই কর্মকর্তা বললেন, ৩০ হাজার। তারপর মন্ত্রণালয়ের সচিব জানতে চান, এত কম পোনায় হবে? কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক জবাব দিলেন, তাহলে ৬০ হাজার পোনা ছাড়া যায়। এমন চিত্র হাওড়-অধ্যুষিত সাতটি জেলায়ই কমবেশি দেখা যাবে। হাওড়ের লাখ লাখ মানুষের জীবন যখন চরম সঙ্কটে, হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল বানের জলে ভেসে গেছে- তাঁরা দিব্যি দিবানিদ্রায় দিন কাটিয়ে দিচ্ছেন। মাঠে যাওয়া নেই, দুর্গতদের রক্ষার বিষয়ে চিন্তাভাবনা নেই, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও পুনর্বাসনেরও কোন কার্যকর উদ্যোগ নেই। শাবাশ, সিভিল সার্ভিস! তাদেরই একটি অংশের গাফিলতি ও দুর্নীতির কারণে হাওড়ের এই দুরবস্থা বলে জোরালো অভিযোগ রয়েছে। হাওড়বাসীর মতে, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সময়মতো বেড়ি বাঁধগুলো মেরামত করলে আগাম বন্যায় এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না। লাখ লাখ মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন এখানে জড়িত। জনপ্রশাসনকেই এখানে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হতে হবে। জনপ্রতিনিধিদেরও দায়িত্ববোধের প্রমাণ দিতে হবে। দ্রুত প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে তাদের হাতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে হবে। এখানে রাজনীতি, স্বজনপ্রীতি বা দুর্নীতি করা হলে, তা হবে অত্যন্ত নিকৃষ্ট মনের পরিচায়ক। আমরা চাই, যে কোন ধরনের অবহেলা ও অনিয়ম কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হোক। পার্বতীপুর, দিনাজপুর থেকে
×