ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

গ্রীষ্মে অপরূপ সোনালু

গাছভর্তি সোনার আলো, চোখ সরাতে দেয় না

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:১০, ৬ মে ২০২৪; আপডেট: ১৬:৪০, ৭ মে ২০২৪

গাছভর্তি সোনার আলো, চোখ সরাতে দেয় না

সোনালু ফুলের সোনা রঙে দারুণ সেজে উঠেছে রাজধানী। মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে তোলা

একি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে...। কিংবদন্তি শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের বিখ্যাত এ গানের কথাই সবার আগে মনে পড়ে যাচ্ছে। সোনালু ফুলের দিকে তাকালে আপনিও গানটি গুনগুন করে গেয়ে উঠবেন। গাছভর্তি সোনা-রং ফুল যেন জীবন ভরিয়ে দিচ্ছে! গ্রীষ্মের হাঁসফাঁস করা গরমে যখন কিছুই ভালো লাগে না তখন ফুলটির সৌন্দর্য জাদুর মতো কাজ করছে। ঘামে ভেজা ক্লান্ত শ্রান্ত শরীর নিয়ে যানজটে আটকে আছেন আপনি? মনে মনে বিরক্ত হচ্ছেন খুব? রাস্তার দুই পাশে তাকান। ঠিক পেয়ে যাবেন সোনালু। সোনালুর সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে আপনাকে। চোখ সরাতে দেবে না।        
সোনালু ঘরোয়া বাগান বা টবে ফোটা ফুল নয়। বেশ উঁচু এবং বড়সড়ো গাছ। ছড়িয়ে থাকা ডালপালা। তবে গাছ বা ডালপালা দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে। ফুল আর ফুল ফোটে আছে শুধু! ওপর থেকে নিচের দিকে নেমে আসা ঝুলন্ত মঞ্জরি গ্রীষ্মের মৃদু বাতাসে সুন্দর দোল খাচ্ছে! 
কাছ থেকে দেখলে পাপড়ির রং কাঁচা হলুদ বলে মনে হয়। প্রখর রোদ ফুলের গায়ে পড়লে রংটি হয়ে যায় সোনালি। এ কারণেই নাম সোনালু। আর ইংরেজি নাম গোল্ডেন শাওয়ার। ফুলের মঞ্জরিকে একসঙ্গে শাওয়ারের জলধারার মতো দেখায়। এ কারণে গোল্ডেন শাওয়ার নাম। অবশ্য বৈজ্ঞানিক নামের বেলায় এর ফল প্রাধান্য পেয়েছে। সে অনুযায়ী নামটিÑ কেসায়্যা ফিস্টুলা। এটি গ্রিক ভাষা থেকে নেওয়া। ফিস্টুলা শব্দের অর্থ বাঁশি। বাঁশির মতো লম্বা ফলের জন্য এমন নামকরণ। 
উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা মতে, সোনালু গাছ ২০ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বাকল পুরো এবং মসৃণ। ফাল্গুনে ব্যাপকহারে পাতা ঝরে। চৈত্রে পাতাহীন শুকনো কাঠির মতো হয়ে যায় গাছ। প্রাণহীন দেখায়। বৈশাখে ফুল ফোটে। তখন থেকে আমূল বদলে যেতে থাকে সব। সোনালু ফুলের পাঁচটি পাপড়ি। দশটি পুংকেশর। ভেতরে সবুজ রঙের তিনটি গর্ভকেশর দৃশ্যমান। এগুলো অর্ধচন্দ্রাকৃতির। 
যতদূর তথ্য, সোনালু বাংলাদেশে এসেছে পূর্ব ভারত থেকে। একে বানরলাঠিও বলা হয়। নিঃসন্দেহে কুৎসিত নাম। তবে এর একটি কারণও আছে। সোনালুর ফল ও গাছের পাতা বানরের প্রিয় খাবার। এ কারণেই ‘বানরলাঠি’ বলা। 
ফলের প্রসঙ্গ যেহেতু উঠলই, বলি, সোনালুর ফল এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ব্যাস দেড় থেকে দুই ইঞ্চি। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ দেখতে হয়। পাকলে কালচে লাল। সোনালুর কিছু ঔষধিগুণও বিদ্যমান। ছাল, পাতা ও ফলের মজ্জা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ক্যান্সার ও ভাইরাস প্রতিরোধে কাজে আসে। এ ছাড়া ডিপথেরিয়া কুষ্ঠরোগের ক্ষত চিকিৎসায় কার্যকর। ফলের মজ্জা হজমে সমস্যায় উপকারী। 
অবশ্য এসব ঔষধিগুণ নিয়ে ভাববার সময় নেই প্রকৃতিপ্রেমী বা ফুলপ্রেমীদের। প্রয়োজনও নেই। বরং খর বৈশাখের অমূল্য দান গ্রহণ করে জীবনকে ফুলটির মতোই রাঙিয়ে তুলি, আসুন।

×