ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ মাসুদ রানা

বিবেককে জাগ্রত করুন

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বিবেককে জাগ্রত করুন

লেখকের সৃজনশীলতাকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মানার্থে প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বইমেলার আয়োজন করা হয়। হাজার হাজার লেখক ও পাঠকদের সমাগমে জমজমাট হয়ে উঠে অমর একুশের বই মেলা। মানুষের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়াতে বইমেলার অবদান অনস্বীকার্য। বই হচ্ছে সমাজের দর্পণ। সমাজে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা কিংবা মানুষের জীবনযাপনের উপর ভিত্তি করে বই রচনা করা হয়। বই মানুষকে জ্ঞান দানের পাশাপাশি নির্মল বিনোদনও দিয়ে থাকে। একটা ভাল বই মানুষের আচার-আচরণ, চারিত্রিক মূল্যবোধে ব্যাপক পরিবর্তন আনে যা একটা আদর্শ জাতি গঠনের জন্য অত্যন্ত অত্যাবশকীয়। আমরা অনেকেই বই বলতে শুধু শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত একাডেমিক বইগুলোকেই বুঝি। একাডেমিক বইয়ের বাহিরে যে আরো অনেক বই রয়েছে তা আমরা মাঝে মাঝে ভুলেই যাই। আমাদের অভিভাবকরা সন্তানদের একাডেমিক বই পড়ার উপর যতটা চাপ দেয় ঠিক ততটা চাপ যদি গল্প, উপন্যাস, কবিতা এবং শিক্ষণীয় বইগুলোর উপর দিত তবে বর্তমান সমাজের ছেলেমেয়েরা আর ভুল পথে পা বাড়াত না। অতীতে মানুষের মাঝে বই পড়া নিয়ে এক অন্যরকম উৎসাহ কাজ করত। নিজের বই না থাকলেও বন্ধুদের কাছ থেকে বই ধার করে নিয়ে এসে পড়ার একটা প্রবণতা ছিল। একাডেমিক বইয়ের চেয়ে গল্প, উপন্যাস কিংবা কবিতার বইয়ের প্রতি অনেক বেশি ঝোঁক থাকত। কিন্তু আজকের এ যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন বিনোদন উৎসের আবিষ্কার মানুষকে বই থেকে অনেক দুরে সরিয়ে দিয়েছে। মানুষ যেন আজ বইকে বিনোদনের উৎস হিসেবে গ্রহণ করতে নারাজ। আবার কিছু অভিভাবক রয়েছেন যারা সন্তানকে শুধুমাত্র একাডেমিক বইয়ের মাঝেই ডুবে রাখতে ভালবাসেন। অভিভাবকরা এটা ভুলে যায় যে একাডেমিক বই পড়ে ভাল রেজাল্ট যায় কিন্তু ভাল মানুষ হওয়া যায় না। বই মানুষের মনের খোরাক। মানুষ খাবার না খেলে যেমন শরীর দুর্বলসহ বিভিন্ন অসুখ বাসা বাঁধে তেমনি বই না পড়লেও মানুষের মনে অসুখ বাসা বাঁধে, মানুষের মনটাই নষ্ট হয়ে যায়। আর এই অসুখের প্রভাব ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সমাজ ও জাতীয় জীবনে মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তাই আমাদের উচিত হবে পড়াশোনাকে জ্ঞানার্জনের, নিজেকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যম হিসেবে গ্রহন করা। বিশ্বের বুকে নিজেদেরকে একটি সভ্য, শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করিয়ে দিতে, দেশের সার্বিক উন্নয়ন করতে চাইলে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। একটা ভাল বই সত্যিকার মানুষের বিবেককে জাগ্রত করে তুলতে পারে। আর মানুষের বিবেক জাগ্রত হলে দেশে থাকবেনা কোন দুর্নীতি, খুন, ধর্ষণ, জঙ্গি হামলার মত ভয়াবহ কার্যক্রম। অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা নিজেদের সন্তানকে শুধু একাডেমিক পড়াশোনায় আটকে না রেখে খেলাধুলা, বইপড়া, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহ দিন আজকের শিশুরাই আগামী দিনে জাতির কর্ণধার হিসেবে কাজ করবে। তারা যদি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠে তবে তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশ চলে যাবে এক অনন্য উচ্চতায়। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর থেকে
×