ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জামালপুরের সরিষাবাড়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

প্রকাশিত: ১৮:৩৫, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

জামালপুরের সরিষাবাড়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে কাবিখা প্রকল্পের সোলার হোম সিস্টেম খাতের বরাদ্দকৃত সোলার বিতরণ না করে অর্ধকোটি টাকার বিল উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোলার আত্মসাতের ঘটনা ফাঁস হওয়ায় সোলারের আলো থেকে বঞ্চিতদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সোলার প্রকল্পের তালিকাভুক্তরা তাদের নামে বরাদ্দকৃত সোলার প্রদানের জন্য দাবি জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারে কাছে। তবে সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিহাব উদ্দীন জানিয়েছেন, এক বছর আগেই সোলারের বিল প্রদান করা হয়েছে। যদি কোন সুবিধাভোগী সোলার না পেয়ে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা-নির্বাচনী এলাকা-প্রথম পর্যায়) সোলার হোম সিস্টেম খাতে ২৩ হাজার ৬৬০ টাকা মূল্যের ৬০ ডব্লিউপি অনুকূলে ৫৬ লাখ ৬০ হাজার ৪০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। উপজেলার পোগলদিঘায় ১৮৪টি, কামরাবাদে ১৬টি, আওনায় ১৩টি ও মহাদান ইউনিয়নের নামে ছয়টি সোলার বরাদ্দ দেওয়া হলেও দীর্ঘ এক বছর পার হলেও এখনো সুবিধাভোগীরা সোলার পাননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত এক সপ্তাহ সরেজমিনে পোগলদিঘা ইউনিয়নের কান্দারপাড়া, গেন্দারপাড়া, বয়ড়া ও রামচন্দ্রখালী গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুবিধাভোগীদের মধ্যে ৭০ ভাগই এখন পর্যন্ত সোলার পাননি। গেন্দারপাড়া গ্রামের দুলাল মিয়া জানান, তার স্ত্রী আম্বিয়া বেগম, ভগ্নিপতি মজনু মিয়া, ভাতিজি আছিয়া বেগমের নামে ২০১৯ সালে সোলার বরাদ্দ হয়। বরাদ্দের তালিকায় ৮৫, ৮৬ ও ৭ নম্বরে তাদের নাম রয়েছে। শুধু গেন্দারপাড়া গ্রামের মজনু মিয়া নয়, ছানোয়ার হোসেন, কোহিনুর আক্তার, জোসনা বেগম, কবির হোসেন, মিনহাজ, দোলোয়ার হোসেন, শিমুর তাইরের জহুরুল, মালিপাড়া গ্রামের আবুল কালাম, রামচন্দ্রখালীর সালমা আক্তার, রুদ্র বয়ড়ার নাজিম উদ্দিন ও কান্দারপাড়া গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, তাদের নামে সোলার বরাদ্দ হলেও এখন পর্যন্ত তারা কোন সোলার পাননি। তাদের নামে সরকারি অর্থে বরাদ্দকৃত সোলার যেন তারা পান এজন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন সোলারবঞ্চিতরা। অভিযোগ রয়েছে, সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হুমযুন কবির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারকে বাদ দিয়ে স্থানীয় সান পাওয়ার সোলার হোম সিস্টেম নামে একটি কোম্পানির নামে কাজ দেখিয়ে পুরো টাকা উত্তোলন করলেও এখন পর্যন্ত তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা পরিবারের মাঝে কোন সোলার বিতরণ করেননি। সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদের একটি সূত্র জানিয়ে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ঠিকাদারের নামে বিল উত্তোলন করে নিজেই তা আত্মসাত করেছেন। সূত্রটি আরো জানিয়েছে, শুধু সোলার টিআর কাবিখা, কাবিটা ও চল্লিশ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পসহ করোনা ও বন্যায় দুস্থ্য মানুষের জন্য বরাদ্দ জিআর ভিজিএফ বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে এই দুর্নীতিবাজ পিআইও। এসব বিষয়ে উচ্চপর্যায়ে তদন্ত করা হলে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে। পোগলদিঘা ইউনিয়নের ১৮৪টি সোলার বরাদ্দের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সামসউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমপিদের বরাদ্দের বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদকে অবহিত করা হয় না এজন্য এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। বরাদ্দকৃত সোলার সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ না করার বিষয়ে কয়েক বার পিআইও’র কার্যালয়ে গিয়ে যোগাযোগ চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোন মন্তব্য করেননি। এ সব অভিযোগ প্রসঙ্গে পিআইও হুমায়ুন কবিরের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সোলার বিতরণ না করেই বিল উত্তোলন করে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিহাব উদ্দিন আহম্মেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি সোলারেন বিল দেওয়া হয়েছে এক বছর আগে। যদি কোন সুবিদাভোগীরা তা না পেয়ে থাকেন তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এমনটা হলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×