ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

চীনের প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৯:০১, ২ এপ্রিল ২০১৯

চীনের প্রস্তাব

লোডশেডিংমুক্ত বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমশ বাড়তির দিকে। নিত্য নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন, অবকাঠামোর উন্নয়ন, কল-কারখানা ও আবাসনের বিস্তারকে সামনে রেখে বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে উঠছে। দেশে উৎপাদিত বিদ্যুত দেশীয় চাহিদা পূরণের পরও আমদানি করতে হয় বিদ্যুতের প্রবাহ নিরন্তর সচল রাখার জন্য। ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে। নেপাল ও ভুটান থেকে আমদানির প্রক্রিয়াও চলছে। এ জন্য পৃথক গ্রিড লাইন নির্মাণ হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে বর্তমানে ভারতের গ্রিড লাইন রয়েছে। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে বিদ্যুতের চাহিদার উর্ধগতি মোকাবেলায় শেখ হাসিনার সরকার আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। বিদ্যুত আমদানির মহাপরিকল্পনায় ২০৪১ সাল নাগাদ নয় হাজার মেগাওয়াট আমদানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ। এদিকে চীন প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত বিদ্যুত গ্রিড নির্মাণ করার। এককভাবে চীনের সবচেয়ে বড় বিদ্যুত সঞ্চালনের দায়িত্বে নিয়োজিত ‘স্টেট গ্রিড কর্পোরেশন’ যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে এই গ্রিড লাইন এক হাজার দু’শ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে। এই লাইনটি মোট পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত পরিবহনে সক্ষম। যার মধ্যে এক হাজার মেগাওয়াট মিয়ানমারকে আর বাকি চার হাজার মেগাওয়াট বিক্রি করবে বাংলাদেশে। অবশ্য চীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ত্রিদেশীয় গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু খালেদা-নিজামীরা তাতে সাড়া দেয়নি। যার মাসুল গুনতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তবে বর্তমানে প্রস্তাবিত প্রকল্পের ভবিষ্যত নির্ভর করছে সঞ্চালন ক্ষতি পর্যালোচনার ওপর। এই প্রস্তাবের আগে ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার হয়ে চীন পর্যন্ত বুলেট ট্রেন লাইন নির্মাণের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে চীন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ, মিয়ানমার, চীন পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্যও চীন আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিষয়গুলো পর্যালোচনার কাজ চলছে। এটা বাস্তব যে, চীন এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি। এই শক্তিকে আরও বিস্তার ঘটাতে সে আগ্রহী। তাই তার প্রতিবেশী নিকটতম দেশগুলোতে বাণিজ্য সম্প্রসারণের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। চীন অবশ্য মনে করছে, কৌশলগতভাবে জ্বালানি বা বিদ্যুতের সরবরাহ করলে রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থিতিশীল থাকে। সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য প্রবেশে যে বাধা আসছে তার ঘাটতি মোকাবেলায় চীন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে চায়। কেউ স্বীকার করুক বা না করুক, চীন এই অঞ্চলের একটি বাস্তব পরিস্থিতি। দেশটি এ অঞ্চলের অনেকের চেয়ে বহুদূর এগিয়ে রয়েছে। তাই এই অঞ্চলকে ঘিরে কোন পরিকল্পনা করলে তা চীনকে বাদ রেখে করলে কোন সুফল মিলবে না। জ্বালানি নিরাপত্তায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ১৬০ কোটি মানুষের বসবাস। ফলে এখানে রয়েছে বিশাল বাজার। তাই এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরী হয়ে পড়েছে। বিএনপি-জামায়াত সরকার আমলে দেশে বিদ্যুতের ব্যাপক ঘাটতি ছিল। ফলে লোডশেডিং ছিল স্বাভাবিক বিষয়। ঢাকার বাইরে গ্রামাঞ্চলেও বিদ্যুত সরবরাহ ছিল অনিয়মিত। শিল্প-কারখানাসহ বিদ্যুত নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছিল। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খাম্বা বসানো হলেও বিদ্যুতের তার আর বসেনি। সঞ্চালন লাইনের অস্তিত্বও মেলেনি। শেখ হাসিনা সরকার গত দশ বছরে বিদ্যুত খাতকে এমনই শক্তিশালী করেছে যে, ‘লোডশেডিং’ শব্দটিই দেশ থেকে মুছে গেছে যেন। চাহিদার অধিক বিদ্যুত মেলে তথাপি ভবিষ্যতকে সামনে রেখে বিদ্যুত আমদানি করছে। তাই চীনের এই প্রস্তাব বাংলাদেশ পর্যালোচনা করবে অবশ্য। বাংলাদেশ অবশ্য চাইবে, সহজ শর্তে বিদ্যুত আমদানি করতে। দু’দেশ সম্মত হলে বিদ্যুত খাতে উভয়েই লাভবান হবে বলে মনে করি।
×