ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ঠিকাদার সিন্ডিকেট

প্রকাশিত: ২০:১৭, ৯ মে ২০২৪

ঠিকাদার সিন্ডিকেট

.

সিন্ডিকেট শব্দটি গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় বহুল ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে সেটি প্রধানত নেতিবাচক অর্থে। দেশে বহুল ব্যবহৃত বাজার সিন্ডিকেট শব্দটি প্রধানত ব্যবহার করা হয় সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী কোনো দুষ্টুচক্রকে বোঝাতে। অধুনা শুধু বাজার সিন্ডিকেটেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ নেই। পরিবর্তে আলাদা আলাদভাবে গড়ে উঠেছে ভোজ্যতেল সিন্ডিকেট, চাল-ডালের সিন্ডিকেট, ডিম-মুরগির সিন্ডিকেট ইত্যাদি।

অতঃপর ঠিকাদাররাই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন! সংঘবদ্ধ হয়ে তারাও গঠন করেছেন সিন্ডিকেট। সরকারের নানা মন্ত্রণালয় বিভাগ প্রতিবছর উন্নয়ন প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ করে থাকে। সরকারের এবংবিধ দক্ষ কর্মযজ্ঞ চলে  দেশজুড়ে। বছরব্যাপী অথবা বছরের পর বছর ধরে চলে প্রকল্পের কার্যক্রম। আর এখানেই সদর্পে সদম্ভে প্রায় একচ্ছত্র রাজত্ব করার সুযোগ পেয়ে থাকে ঠিকাদার সিন্ডিকেট। বিষয়টি সবাই দীর্ঘদিন থেকে কমবেশি জানলেও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রথম নজরে আসে ২০১৯ সালে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে জিকে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্স চলমান ১৭টি প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয়। এরপরই টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান সংস্থাগুলোর। একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান একই সঙ্গে এতগুলো প্রকল্পের কাজ কিভাবে পেয়ে থাকে- সে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দেয়। বাস্তবে সরকারি ক্রয় আইনের দুর্বলতার কারণেই একটি প্রতিষ্ঠান একই সঙ্গে এত প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নিতে পেরেছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আমলা থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িত থাকাও বিচিত্র নয়।

সরকার দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধে -টেন্ডারিং বা অনলাইনে দরপত্র গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হলো, স্বার্থান্বেষীদের কারসাজিতে সেটি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। এখানেও রয়েছে আইনের ফাঁকফোকর। আইনে বলা আছে যে, কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে সেই প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিলে তার নম্বর বাড়ে কাজটি পাওয়ার ক্ষেত্রে। একে বলে ম্যাট্রিক্স পদ্ধতি। আর কারণেই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দপ্তরের কাজ পেয়ে যাচ্ছে হাতেগোনা গুটিকতক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

এর ফলে যথাসময়ে একদিকে যেমন কাজ শেষ হচ্ছে না, অন্যদিকে কমিশন বাণিজ্যের নামে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। বাস্তবে কাজও হচ্ছে নি¤œমানের। ঠিকাদারের ম্যাট্রিক্স পদ্ধতির সুযোগে আবার তৈরি হয়েছে প্যাড কোটেশন পদ্ধতি। অর্থাৎ সেই কাজে কেবল একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে নিজে কাজ পেয়ে অন্য ঠিকাদার দিয়েও কাজ করার অভিযোগ আছে। অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সরকার প্রণীত পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৬ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধি-২০০৮ অকার্যকর হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৯ সালের একনেক বৈঠকে সরকারি কাজকে প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য সংশ্লিষ্ট আইনে প্রয়োজনীয় সংস্কারের নির্দেশ দেওয়া হলেও অদ্যাবধি তা আলোর মুখ দেখেনি। ম্যাট্রিক্স পদ্ধতির সুযোগে এখনো পাঁচ-ছয়টির পরিবর্তে বড়জোর দুটি দরপত্র জমা পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মাত্র একটি। একেই বুঝি বলে ঠিকাদার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আধিপত্য। আমলাতন্ত্রের নামে আরও কতদিন যে অবস্থা চলতে  থাকে তা কে বলতে পারে।

×