ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বেকারত্ব ও বয়সসীমা

প্রকাশিত: ২০:১৮, ৯ মে ২০২৪

বেকারত্ব ও বয়সসীমা

.

গত সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশের বেকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার, যা গত বছরের শেষের দিকে ছিল ২৩ লাখ ৫০ হাজার। এই হিসাবে বেকার সংখ্যা বেড়েছে লাখ ৪০ হাজার। পুরুষের বেকারত্ব বেড়েছে এবং নারীর ক্ষেত্রে তা কমেছে। ছাড়া শ্রমশক্তির বাইরে বিশাল জনগোষ্ঠী আছে যারা কর্মে নিয়োজিত নয়, আবার বেকার হিসেবেও বিবেচিত নয়। তারা মূলত সাধারণ ছাত্র, অসুস্থ ব্যক্তি, বয়স্ক নারী-পুরুষ, কাজ করতে অক্ষম ব্যক্তি, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং কর্মে নিয়োজিত নন বা নিয়োজিত হতে অনিচ্ছুক গৃহিণী।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, যুবসমাজ উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর স্নাতক  স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিতে যতটা আগ্রহী, কারিগরি বা কর্মদক্ষতা বাড়ানোর শিক্ষা নিতে ততটা আগ্রহী নয়। খুব কম ক্ষেত্রেই কাউকে উদ্যোক্তা হতে দেখা যায়। উচ্চাকাক্সক্ষা, বিলাসিতা এবং যে কোনো কাজকে ছোট মনে করার মতো মানসিকতা সমাজে দিন দিন বাড়াচ্ছে বেকারত্বের হার। শিক্ষিত বেকাররা প্রায়ই এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় ভোগেন। ফলে স্বেচ্ছায় বেকার জীবনযাপন করছেন অনেকেই। যেখানে অশিক্ষিত লোকরা যেকোনো পেশায় অনায়াসে নিজেকে নিযুক্ত করতে পারছেন, সেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে স্বল্পশিক্ষিত কিংবা ডিগ্রিধারী ব্যক্তিরা নিযুক্ত হতে পারছেন না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে চাকরির আশায় ঘরে ঘরে তরুণ-তরুণীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা এখন সমাজের একটি সাধারণ বিষয়। তাছাড়াও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ঘাটতিরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। সরকারি খাতে বড় কিছু বিনিয়োগ হলেও তা চাহিদানুযায়ী কর্মসংস্থানের ঘাটতি দূর করতে পারছে না। সম্প্রতি সরকারি চাকরিতে যোগদানের বয়সসীমা বাড়ানোর জোর দাবি করেছেন অনেকে। চাকরির বয়স ৩৫ বছর করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী সুপারিশ করলেও জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেছেন আপাতত বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের নেই।

বেকারত্ব জাতীয় জীবনে অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রতিবন্ধক বেকারত্ব। যুবসমাজের বহুলাংশ বেকার জীবনযাপন করার একপর্যায়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে বেছে নেয় আত্মঘাতী পথ, যা উদ্বেগজনক।  অথচ তাদের যদি দক্ষ করে গড়ে তোলা যায়, তবে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা প্রবল। কাজেই সঠিক জায়গায় বিনিয়োগ করে দেশে দক্ষ জনসম্পদ উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকারের জোরালো ভূমিকা রাখা উচিত। সেই সঙ্গে বেকারত্ব নিরসনে সকলের মনমানসিকতা দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো প্রয়োজন। চাকরির জন্য না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। আত্মকর্মসংস্থান করতে পারলে শুধু নিজের নয়, অন্যেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব। তাছাড়াও বেকারত্ব দূরীকরণে অন্যতম উপায় হতে পারে ফ্রিল্যান্সিং। এজন্য হাতে কলমে শিক্ষা বা কর্মশিক্ষার ওপরও গুরুত্বারোপ করা জরুরি। বাস্তবভিত্তিক শিক্ষাই পারে একটা দেশের বেকারত্ব নিরসন করতে।

 

×