ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাফর ওয়াজেদের গুচ্ছ কবিতা

প্রকাশিত: ০৯:১০, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জাফর ওয়াজেদের গুচ্ছ কবিতা

** বসন্ত আসার আগে সোনালি রোদের ওম মেখে গায়ে বেশ তরতাজা ফুলেদের সাথে খোশগল্পে মেতে শীতের আদুরে রেণুর সম্মিলিত সোহাগে উপচে পড়ে আবেগ- উচ্চতায় ভরপুর পীড়নে নেচে ওঠেন নানান মুদ্রা ভঙ্গিতে বেশ মৌঁতাতে, খড়কুটো জ্বেলে তপ্ততাকে কাছে পেতে উশখুশ বেশ ভাব আসে, মনে দ্বিধা দ্বন্দ্ব। শেষ খড়কুটোটুকুও পুড়ে ছাই উষ্ণতায় শীতের তন্দ্রায় নিরাপদ কেটেছে জীবন যার তার বুকের ভেতর গুমরে ওঠে ঝাউবনÑ নদীর জলে ভাসে হিংস্রতার নানা ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয় কোষে কোষে ও রন্ধ্রে রন্ধ্রে পাখিদের ঝাপটানো, আকাশের নীলিমায় তার চোখ ভেসে আসে। বসন্ত আসার আগে রোদের উত্তাপ শুষে নিতে আজ দেহমন বড় বেশি উৎসুকমুখর, বড় বেশি সাজ সাজ। ** বসন্ত সংবাদ এসে গেছে বসন্ত বাতাস-প্রকৃতির নয়া আস্তানা তুলে রাখা সব আলোয়ান, সব চাদর ও দস্তানা হলুদ পত্রাবলি চলে গেছে বিবর্ণতার গাঢ় ফাঁদে তবু বৃক্ষের জন্য তার শোক, বৃক্ষ ও ক্রন্দনে মাতে সবুজ পাতারা বেশ তরতাজা ফুরফুরে হাওয়ায় দেখছে চারদিক হাত পা শরীর নেড়ে গরজায়। যতদূর দৃষ্টির সীমানা শুধু চোখে আসে সবুজেরা নিরন্তর খেলা করে পাতায় তার, স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা বসন্ত জাগে, তার দিনলিপি, জালে নিজ আয়ু রেখা কখন ফুৎকারে মিলিয়ে যাবে, হবে না আর দেখা। বসন্ত এসে গেছে তাই সজ্জিত হয়ে গেছে পৃথিবী বৃক্ষেরা জানে প্রকৃতিই একমাত্র থাকে দীর্ঘজীবী। ** পাখির জীবন পাখিরও আছে যাযাবর বৃত্তি, দেশান্তরে যাত্রা ভ্রমণ রমণ সবই মানায়, রাখে ধরে সব মাত্রা পাখির আছে আবাসভূমি, তবুও তার ঘোরাফেরা সন্ন্যাসীরে স্মরণ করে চলছে পথ নাড়ি ছেঁড়া। আকাশ তাকে দেয় ইশারা গতির দূরান্তে বদলে যাওয়া মরসুমে বদলায় কী একান্তে শীতের টানে ছুটে যাওয়া গাছ-গাছালির বুকে বসন্ত যেই হাঁক মারেÑঅমনি কাঁদে সুখে। সুখ পাখির সুখের শ্বাস বাতাসেতেই উড়ে সেই সুখেতে বন-বাঁদাড়ে কীটপতঙ্গ ঘুরে সবাই জানে, বোঝে এবং মানেও ঠিকঠাক কোথায় আছে জীবন ধারা চায় হতে সবাক। পাখির আছে জীবন রীতি প্রকৃতিরই নির্যাসে বেঁচে থাকে বাঁচিয়ে রাখে বৃক্ষেরই প্রতিবাসে। ** কবি নীরেন্দ্রনাথ পদ্মার পারে তার কেটেছে শৈশব, আর গঙ্গার তীরে বাড়ন্ত যৌবন, ফ্ল্যাশব্যাকে উঠে আসে নদীর বিস্তার ভেঙ্গে যাওয়া দু’পারের ঘন বন। গোয়ালন্দ ঘাটের ধু ধু পানিতে দাঁড়িয়ে শুনেছে ভাঙ্গনের জয় গান ভেঙ্গেছে দু’পার ভেঙ্গেছে সীমা ছাড়িয়ে, ভেঙ্গেছে দেশ ভেঙ্গেছে প্রাণ। সব স্মৃতি হয়ে আসে ধূসর গোধূলি রঙ জানবে কি না কি ছিল কোথায় বহমান সবই অতীতের লুপ্ত জলপ্রদ, প্রীতিসঙ্গ, কালের রেখায় মুছে যায় স্মৃতি অম্লান। ** জাঁহাবাজ আহা! কী পরম নিশ্চিন্ত দিন আজ-বেশ নির্ভার শেয়ালের মুখে আজ নিজ হাতে তুলে দিয়েছি পোষা কবুতর, মোরগের ডাক, বেড়ালের ছানা তুলতুলে নরম সব-পেয়ে তার সে কি চিৎকার আনন্দে অশ্রু তার চোখে তোলে তরঙ্গ টলমল ধরা দেয় এসে বিস্ময়Ñ যখন সে গন্ধমাদন শুঁকে শুঁকে দেখে সবখানে শুদ্ধতার ছোয়ানো ঘ্রাণ তারপর কী নির্বিকার চলে যেতে থাকে দূরে সাথে নিয়ে উপঢৌকনÑ নামে গর্তের গুহায়। নির্ভার রাতে আর নেই শব্দ; উল্লাস ধ্বনিও নয় গর্ত ছেড়ে বেরিয়ে আসার লক্ষণচিহ্ন মেলে না তবে কি আর ফিরবে না সে, না কি ফিরে আসার সব পথ হয়ে গেছে অবরুদ্ধ কিংবা পরিত্যক্ত তবে কি গুহার অন্ধকারে হয়েছে কোন হামলার শিকার? কবুতর, মোরগ, বেড়ালের ছানাদের উপর্যুপরি হামলায় হারায়েছে ধূর্ততার প্রাণ পায়নি পথ বাঁচবার বুঝি আক্রমণের তোড়ে। আমার শেয়াল ধূর্ত নয়, হয়তো জাঁহাবাজÑকিছু। ** আমরা ক’জন হাতের মুঠোয় চলে আসা এই বিশ্বের মাঝখানে আমরা ক’জন নবীন যুবা, খ্যাতি যাদের হাতটানে টানতে টানতে খসিয়ে দেই কলকব্জা যন্ত্রের থাক না ফারাক যতোই তত্ত্ব এবং গূঢ় মন্ত্রের আমরা তবু হাঁক দিয়ে যাই, ডাক দিয়ে যাই যেতে যেতে পাথুরে পথ দেখি চড়াই উৎরাই। বন্ধুর পথ বন্ধুর আকাশ যতোই ডাকুক আমরা ক’জন ফাঁক তালে খুঁজি তবু সুখ সুখের আছে নিয়মনীতি, মনে মনে জপে আকাশ বাতাস মাটিতে মিলায় শীতাতপে। আমরা তখন গাও-গেরামে ঘুরে ফিরি গাছ-গাছালির ফাঁক-ফোকরে খুঁজি সিঁড়ি সিঁড়ির গোড়ায় সাপের বাসা ফণা তোলে বিষের ভা- মারবে ছুঁড়ে, উপহারে না ভোলে। জলে জঙ্গলে আমরা ক’জন শুকনো পাতার ধ্বনি সুরের ধারায় ভেসে বেড়ায় মণিমুক্তার খনি খনির ভেতর অন্ধকার, আলোর রেখা নেই আমরা ক’জন এসব দেখে হারাই পথের খেই। ** ধৈর্যের বাঁধ ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে না বলেই এখনও সবুর করে থাকি মেওয়া ফলুক আর নাই ফলুক কপালদোষ ঢেকে রাখি পানাপুকুরে শ্যাওলার ধার ঘেঁষে বিছিয়ে দিয়ে দেহ উৎফুল্ল হই শিকড়ে আমূল বিদ্ধ করে মেহ ও প্রমেহ দুর্দান্ত লাফিয়ে ওঠে ঘোড়া শ্বেতপাথরের প্রাসাদ চূড়ায় দাঁড়িয়ে নাড়ে হাত আর সহ্যের পালক রেণু ছড়ায়। প্রতীক্ষা মৃত্যুর চেয়ে ভয়ঙ্কর জেনেও অপেক্ষায় সেলফোন চালু রেখে ই-মেইলে পাঠাই বার্তা, সবই নিজস্ব দৃষ্টিকোণ পাদপ্রদীপের আলোর নিচে অন্ধকারের মতো বসে থেকে ধৈর্যের সাথে দেখতে থাকি মানুষ, মুখোশের আড়াল ঢেকে কিভাবে লুকোচুরি খেলে, কতোটা বিরক্তির টাওয়ার বসায় আর সবুর করতে করতে কে যেন গালেতেই চড় কষায়। এই এতো ধৈর্য এতো মহত্ত্বের ভেতর স্বনামে উদ্যত সঙ্গিন আমূল বিদ্ধ করে বসে থাকি ছিপ হাতে, জীবন বড় রঙিন।
×