ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার পরই অস্ত্রত্যাগ

সাক্ষাৎকারে হামাস নেতা

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্বাধীনতার পরই অস্ত্রত্যাগ

সাক্ষাৎকারে হামাস নেতা

গাজায় অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরাইল। প্রায় সাত মাস ধরে চলা নির্বিচার এই হামলার জেরে নিহত হয়েছেন ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। লাগাতার হামলায় গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়েছে।

এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে এরপরও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে পরাজিত করতে পারেনি ইসরাইল।

এমন অবস্থায় অনেকটা শান্তির বার্তাই সামনে আনল হামাস। স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠী বলছে, একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি তাদের অস্ত্র সমর্পণ করবে। হামাসের রাজনৈতিক শাখার ইস্তানবুলভিত্তিক সদস্য বাসেম নাইম এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেন। খবর সিএনএন ওয়াশিংটন পোস্ট অনলাইনের। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরাইলের দখল করা অঞ্চলগুলোতে ফিলিস্তিনিরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেলে হামাস ইসরাইলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে দিতে পারে।

সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটির কিছু কর্মকর্তার দেওয়া এই বার্তাটি হামাসের অবস্থান কিছুটা নরম হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কারণ গাজা ভূখন্ডে শাসন ক্ষমতায় থাকা এই দলটি দীর্ঘদিন ধরে ইহুদি রাষ্ট্র তথা ইসরাইলকে ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়ে আসছে। বাসেম নাইম বলেন, একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে স্বাধীনতাকামী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি নিজেদেরকে নিরস্ত্র করতে রাজি হবে। হামাসের সশস্ত্র শাখার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের অধিকার সংরক্ষণের পাশাপাশি যদি জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাহলে আল কাসামকে (ভবিষ্যৎ) জাতীয় সেনাবাহিনীতে একীভূত করা যেতে পারে। হামাস ঐতিহ্যগতভাবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। এই সমাধান নীতি অনুযায়ী, ইসরাইলের পাশাপাশি একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত থাকবে। বরং এর পরিবর্তে হামাস এতদিন সমস্ত ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে কথা বলেছে। প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের প্রেসিডেন্ট মোস্তফা বারঘৌতি বলেন, তিনি হামাসের অস্ত্র সমর্পণের প্রস্তাব সম্পর্কে আগে থেকে অবগত নন। তবে তিনি বলেন, এটি সত্য হলে তা হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি ১৯৬৭ সালে দখল করা ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোতে ইসরাইলের সামরিক নিয়ন্ত্রণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা এই অর্থে গুরুত্বপূর্ণ যে, ফিলিস্তিনিরা দখলদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করছে কারণ এখানে দখলদারিত্ব চলছে। যদি কোনো ধরনের দখলদারিত্ব সেখানে না থাকে, তবে তাদের প্রতিরোধ করারও দরকার নেই। মূলত ১৯৬৭ সালে দখল করা ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোতে এখনো লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাস করেন। যদিও এসব এলাকায় ইসরাইলের সামরিক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

অন্যদিকে হামাসের একজন শীর্ষ রাজনৈতিক কর্মকর্তা বলেন, ইসলামিক এই গোষ্ঠীটি ইসরাইলের সঙ্গে পাঁচ বছর বা তার বেশি সময়ের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে ইচ্ছুক এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমান্ত অনুযায়ী একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে তারা তাদের অস্ত্র সমর্পণ করতে এবং রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হতে ইচ্ছুক। বুধবার দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে হামাসের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা খলিল আল-হাইয়ারের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো যখন গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য গত কয়েক মাস আলোচনা চললেও তা কার্যত অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে। ছাড়া হামাস নিজেদের নিরস্ত্রীকরণ করবে- এমন ইঙ্গিতটি হামাসের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য ছাড় বলে মনে হচ্ছে। কারণ হামাস এমন এক সশস্ত্র গোষ্ঠী যারা বরাবরই ইসরাইলকে ধ্বংস করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল।

×