ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে ফেলেছেন?

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে ফেলেছেন?

বর্তমান যুগের ব্যস্ততা, ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা আর অর্থনৈতিক চাপের মুখে পরে অনেকেই মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে দেরি করে ফেলেন। ফলে ৩৫ বয়ষোর্ধ গর্ভবতী মায়ের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অধিক বয়সে মা হলে কিছু বাড়তি জটিলতার ঝুঁকি থাকে। তাই এ বয়সে মা হতে চাইলে আপনাকে এ ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে পরিবার ও সেবাদানকারীদেরও এ মায়েদের দিতে হবে বাড়তি পরিচর্যা ও মনযোগ। বেশি বয়সে মা হতে চাইলে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন, যেমন- গর্ভধারণে দীর্ঘসূত্রিতা : একজন মেয়ে জন্মের সময় কিছু সংখ্যক ডিম্বানু নিয়ে জন্মায় যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিঃশেষ হতে থাকে। ৩০ বছরের পর থেকেই ডিম্বানুর সংখ্যা এবং গুণগত মান কমতে থাকে। এতে করে এ সময়ে গর্ভধারণ করার চেষ্টার পরও দিনের পর দিন ব্যর্থ হতে পারে। তাই ৩০ বছরের পর কেও যদি মা হওয়ার জন্য ছয় মাস চেষ্টা করার পরও ব্যর্থ হন, তবে দেরি না করে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ডিম্বানু উৎপাদক ওষুধ খেতে পারেন। জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস : গর্ভকালীন কোন কোন মা ডায়াবেটিসে ভুগে থাকেন। অধিক বয়সে গর্ভধারণ করলে এর সম্ভাবনা আরও বেরে যায়। কনসিভ করার আগে থেকেই কিছু মা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত থাকতে পারেন। এক্ষেত্রে কনসিভ করার আগ থেকেই তাকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে গর্ভাবস্থায় অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বাচ্চার বিকলঙ্গতা, ওজন বৃদ্ধি ও অধিক মৃত্যু ঝুঁকির কারণ হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ : গবেষণায় দেখা গেছে বয়স্ক মায়েদের গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপে ভোগার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গর্ভকালীন নিয়মিত ব্লাড প্রেসার চেকআপের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতা এড়ানো যায়। যারা আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন তাদের উচিত গর্ভধারণের আগেই ডাক্তারের পরামর্শে বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর ওষুধ পরিবর্তন করা। অধিক গর্ভপাতের সম্ভাবনা : এ সময়ে অধিক গর্ভপাতের কারণের মধ্যে রয়েছে মায়ের বিভিন্ন অসুখ যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড গ্রন্থির অসুখ ইত্যাদি। এছাড়া বাচ্চার জীনগত ত্রুটি বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ে যা গর্ভপাতের কারণ ঘটায়। সিজারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি : গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়ার কারণে বয়স্ক মায়েদের সিজারের সম্ভাবনা বেশি থাকে। ভ্রƒণের জিনগত ত্রুটি : বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ভ্রƒণের জীনগত ত্রুটি হওার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মায়ের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ডাউন সিনড্রোম (ক্রোমোজোমাল ত্রুটিপূর্ণ বাচ্চা) নিয়ে বাচ্চা জন্মানোর হারও বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছেÑ ২৫ বছর বয়সী মায়েদের ডাউন সিনড্রোম বাচ্চা হওয়ার ঝুঁকি থাকে প্রতি ২৫০০ জনের মধ্যে একজনের, যা ৪০ বছর বয়সী মায়েদের ক্ষেত্রে গিয়ে দাঁড়ায় প্রতি ১০০ জনে একজন। এমনিয়টিক ফ্লুইড (গর্ভকালীন বাচ্চার চারদিকের পানি) নিয়ে পরীক্ষা করে কনসিভের তিন থেকে চার মাসের মধ্যে ভ্রƒণের জিনগত ত্রুটি শনাক্ত করা সম্ভব। অন্যান্য জটিলতা : এছাড়াও মাল্টিপল প্রেগনেন্সি (একাধিক বাচ্চা গর্ভধারণ), সময়ের আগেই বাচ্চা হওয়া, গর্ভকালীন বাচ্চার মৃত্যু, কম ওজনের বাচ্চা জন্মদান ইত্যাদি জটিলতা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে। তবে এ সম্পর্কে সচেতনতা এবং নিয়মিত একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকলে একজন সুস্থ মা পারবেন একটি সুস্থ বাচ্চার জন্ম দিতে। ডাঃ নুসরাত জাহান সহকারী আধ্যাপকা (অবস-গাইনি) ডেলটা মেডিকেল কলেজ, মিরপুর-১, ঢাকা ফোন : ০২৮০৩১৩৭৯ [email protected]
×