ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভেস্তে যেন না যায়

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৯ আগস্ট ২০১৭

ভেস্তে যেন না যায়

উদ্যোগে আছে নতুনত্ব এবং বলা যায় তা মহৎ ও সুদূরপ্রসারী। নারী জাগরণের পথে নতুন দিগন্তের উন্মোচনও একপ্রকার। কিন্তু সহায়তার অভাব এবং প্রচারের ঘাটতিতে বিষয়টি প্রায় মাঠেই মারা যাচ্ছে। অথচ শুরুতেই যে হাঁকডাক ছিল তাতে ধারণা হয়েছিল ব্যাপক সাড়া জাগবে। প্রশংসার পুষ্পমাল্য ভরপুর হয়েছিল উদ্যোক্তাজনদের। স্বপ্ন দেখতে এবং দেখাতে ভারি পছন্দ যার সেই তিনিই পথ প্রদর্শক হিসেবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এসেছিলেন এগিয়ে। সর্বত্র একটি আশাবাদ জেগে উঠেছিল। ভিন্নতায় ভিন্ন মাত্রা পেয়ে নগরবাসীরা আশাবাদী হয়ে ওঠেছিলেন হয়ত। কিন্তু শুরুতেই যে বিপত্তি ঘটে চলেছে তাতে এগিয়ে যাওয়ার রথ শ্লথপ্রায়। যাদের জন্য এত আয়োজন তারা অনুধাবনই করতে পারছেন না নারী জাতির বাণিজ্যে বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্র মসৃণ নয়। বরং অসহযোগিতার প্রাচীর সর্বত্র। তাই চালু হওয়ার আড়াই মাসের মধ্যে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে সব উদ্যোগ। যে কারণে দুরবস্থা নিরসনে নেই কার্যকর কোন পদক্ষেপ। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। সুন্দর ও মহতী একটি উদ্যোগ এমনিভাবে মাঠে মারা যাবে শুধু অবহেলা, ঔদাসীন্য আর তৎপরতার অভাবে তা অকল্পনীয় বৈকি। উদ্যোক্তা আর বিক্রেতা থাকলেও শুধু প্রচারহীনতায় ক্রেতা না পাওয়ায় দেশে প্রথমবারের মতো রাজধানীতে চালু হওয়া ‘উইমেনস হলিডে মার্কেট’ বন্ধ হওয়ার পথে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে সম্পূর্ণ নারী বিক্রেতা পরিচালিত মার্কেটে ক্রেতা দূরে থাক, মাছিও আসে না। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের উত্তর পাশে নবনির্মিত মহাখালী পাইকারি কাঁচাবাজার প্রাঙ্গণে এই মার্কেট। বেশ ঘটা করে গত ১৭ মে মেয়র আনিসুল হক মার্কেটটি উদ্বোধন করেন। ডিএনসিসি ও ফর দ্য উইমেন বাই দ্য উইমেন নামক বেসরকারী সংস্থার যৌথ উদ্যোগে চালু করা হয় উক্ত মার্কেটটি। সিদ্ধান্ত হয়, শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে মার্কেট খোলা থাকবে। পাওয়া যাবে কাপড়-চোপড় থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিসপত্র। এ জন্য নারী উদ্যোক্তাদের কোন প্রকার ফি দিতে হয়নি। নারীদের জন্য এ বিশেষ আয়োজন পায় সবিশেষ প্রশংসা। ব্যবসা পরিচালনার জন্য উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ প্রদানও করা হয়। প্রশিক্ষণ পেলেও মেলেনি আর্থিক সহায়তা। ফলে ব্যবসা পরিচালনা যথাযথভাবে করা যাচ্ছে না। শুরুর সময় মেয়র অবশ্য বলেছিলেন, ডিএনসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে মহিলা পরিচালিত এ ধরনের মার্কেট গড়ে তোলা হবে। এ ঘোষণা নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে এক আশাবাদ জাগিয়ে তুলেছিল। কিন্তু যেখানে প্রথম মার্কেটটিই যথাযথভাবে চালু করা যাচ্ছে না, সেখানে অন্যগুলোর ভবিষ্যত শূন্যতায় পূর্ণ হতে বাধ্য। মার্কেট চালু করা ছাড়া ডিএনসিসি আর কোন সহায়তার হাত বাড়াচ্ছে না। পঞ্চাশজন নারী উদ্যোক্তার কপালে এখন হাত। অর্ধেক দোকানই বন্ধ। এসব দোকানে বিক্রিবাট্টা কোনটায় নামমাত্র, কোনটায় ক্রেতারই দেখা মেলে না। উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণ বা আর্থিক সহায়তার কোন ব্যবস্থাই করা হয়নি। তাছাড়া প্রচার-প্রচারণা নেই মার্কেটের। এমন স্থানে করা হয়েছে মার্কেট যা বাইরে থেকে বোঝার কোন উপায় নেই এখানে নারী পারিচালিত মার্কেট রয়েছে। শুরুতে দুদিন হলেও এখন সপ্তাহে ৬ দিন খোলা রাখলেও ক্রেতার দেখা মেলে না। বৃথাই যাচ্ছে আজ সকল উদ্যোগ। নারী উদ্যোক্তাদের আর্থিকসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের কথা বেশ জোরেশোরেই বলা হয়েছিল। কিন্তু সাহায্যের হাত বাড়াননি প্রতিশ্রুতিদাতারা। উৎসাহ-উদ্দীপনায় সম্ভবত ভাটা পড়েছে তাদের। অথচ বিভিন্ন ব্যাংক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্তারা শত শত উদ্দীপনামূলক বাক্য বর্ষণ করেছেন। কিন্তু কথানুযায়ী তারা আর সে পথ মাড়াচ্ছেন না। আশ্বাসের সঠিক বাস্তবায়ন না হলে সব কিছুই মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। মেয়র মহোদয় উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন এমনটা মনে হয় না নগরবাসীর। শুরু যখন করেছেন তিনি তখন পথ দেখাতে হবে তাকেই। থেমে গেলে চলবে না। সকল বাধা দূর হোক এটাই কাম্য।
×