ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

নরাধমদের ফাঁসি বহাল

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১৪ এপ্রিল ২০১৭

নরাধমদের ফাঁসি বহাল

বিভীষিকাময় হত্যাকা-ের সেই দৃশ্য দেখেছে দেশবাসী নেটের মাধ্যমে। পাশবিকতা, নিষ্ঠুরতা, নৃশংসতা, নির্মমতা ইত্যাকার সবকিছুকে ছাপিয়ে এবং ছাড়িয়ে গিয়েছিল শিশু রাজন হত্যাযজ্ঞ। এমন নারকীয়তা সহ্যাতীত অবশ্যই। হত্যাকারীরা উল্লাসে মত্ত হয়ে নিরপরাধ শিশুটিকে পাশবিক জিঘাংসায় প্রাণনাশ করেছিল। শিশু হত্যার আনন্দে তারা মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল। মনোবিকলন এমন মাত্রায় আশ্রয় পেয়েছিল যে, মানবিক বোধ আর কাজ করেনি খুনীদের। কিন্তু বিচারের বাণী কাঁদেনি নীরবে নিভৃতে। দেশের মানুষও ক্ষোভে-বিক্ষোভে পড়েছিল ফেটে। এই হত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে। আদালত চারজনকে মৃত্যুদ- প্রদান করে। একজনকে যাবজ্জীবন এবং পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদ- দেয়। হাইকোর্ট সেই রায় বহাল রেখেছে। শুধু যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত একজনের শাস্তির মেয়াদ হ্রাস করে ছয় মাসের কারাদ- দিয়েছে। এই নৃশংস হত্যাকা- দেশবাসীকে কাঁদিয়েছিল। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ হত্যা মামলার আসামিদের আইনের আওতায় এনে বিচার সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে দেশে নিঃসন্দেহে আইনের শাসনের একটি উজ্জ্বল মাইলফলক প্রতিষ্ঠিত হলো। ফাঁসির রায় পাওয়ার ফলে আগামীতে একই ধরনের নিষ্ঠুর অপরাধ করার আগে যে কোন নরাধম শতবার ভাববে বলে ধারণা করা যায়। নৃশংসতার হাত থেকে শিশুদের বাঁচাতেই হবে দেশবাসীকে। সিলেটের সবজি বিক্রেতা ও শিশু রাজনের হত্যাকারী ঘাতকরা ছিল পশুর চেয়েও অধম। ২০১৫ সালের ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে একটি দোকান ঘরের খুঁটিতে বেঁধে চোর ‘অপবাদে’ তেরো বছরের শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীদেরই এক সহযোগী নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিলে গোটা সমাজের মর্মমূলই প্রচ-ভাবে নাড়া খেয়েছিল। লাখো মানুষের বিবেক বলে উঠেছিল, এ কোন্ বর্বরতা! মানুষ এতটা নির্মম-নৃশংস-নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারে? পৈশাচিক উল্লাসে মত্ত হয়ে রাজনকে যারা হত্যা করেছিল, তারা দেখতে অবিকল মানুষের মতো হলেও মানুষ নয় তারা। পাষ-, নরাধম, বিকৃত মস্তিষ্ক, নরকের কীট কোন বিশেষণেই তাদের পরিচয় যথার্থভাবে তুলে ধরা যায় না। হত্যার পর প্রধান হত্যাকারী কামরুল সৌদি আরব পালিয়ে গেলেও কূটনৈতিক প্রক্রিয়া ও ইন্টারপোলের সহায়তায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এ ধরনের দৃঢ় আইনানুগ তৎপরতা সমাজে বিরল। এই উদ্যোগ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। শিশু হত্যার বিচারের রায় প্রমাণ করে আন্তরিকতা থাকলে দ্রুততম সময়ের ভেতর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব। মরদেহ গুম করার সময় হত্যাকারীদের একজন ধরা পড়ে। প্রধান হত্যাকারীকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছিল অর্থের বিনিময়ে। নির্যাতিত হওয়ার এক পর্যায়ে রাজন পানি পান করতে চাইলে প্রথমে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ময়লা-নর্দমার পানি খেতে দেয়া হয় এবং পরে ঘাম খেয়ে তৃষ্ণা মেটানোর পরামর্শ দিয়েছিল ওই মানুষরূপী জানোয়াররা। তাদের এই নিষ্ঠুর আচরণ কোন মানুষের পর্যায়ে পড়ে না। জঘন্য অপরাধ করেছে এরা। যাদের মধ্যে ছিল না মনুষ্যত্ব। এই রায়ের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে বলে সমাজের যে ধারণা, তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে তাদের ফাঁসিসহ প্রযোজ্য শাস্তি হওয়া উচিত। এই রায় থেকে সেই শিক্ষা নিতে হবে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে জন্য প্রয়োজন প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায় থেকে আইন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা প্রদান। এ ছাড়া গণমাধ্যম, ধর্মপ্রচারক ও শিক্ষকদের সচেতনতামূলক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। বহুল আলোচিত এ মামলার মোট উনিশ দিন শুনানি হয় যা ছিল অভাবনীয়। রায় ঘোষণার পর নিহত শিশু রাজনের পিতা বলেছেন আর কোন বাবা-মা যেন এ পরিস্থিতির শিকার না হন। এ রায় দ্রুত কার্যকর হবে বলে তার প্রত্যাশা। শোকাহত পিতার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলতে চাই, আর কোন শিশুহত্যা যেন এদেশে না ঘটে। ইতোপূর্বে সংঘটিত সব হত্যাকা-ের দ্রুত ন্যায় বিচার হোক এমনটাই কাম্য।
×