ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

অতিরিক্ত হাঁচি পড়া কারণ ও চিকিৎসা

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১১ এপ্রিল ২০১৭

অতিরিক্ত হাঁচি পড়া  কারণ ও চিকিৎসা

নাম শুনে মনে হতে পারে যে এটি বোধ হয় একটি বিশেষ ধরনের ফিভার বা জ্বরের প্রকারভেদ। কিন্তু আসলে ফিভার বা জ্বরের সঙ্গে এর কোন সম্পর্কই নেই। প্রকৃত পক্ষে এটি একটি বিশেষ ঋতুভিত্তিক হাঁচিজনিত এলার্জিক রোগ। এটি একটি বিশেষ ঋতুতে প্রতি বছর এবং বছরের পর উক্ত রোগীর উপসর্গ হতে দেখা যায় এবং এসব রোগীর ক্ষেত্রে নাক ও চোখ দিয়ে জল পড়তেও দেখা যায়। নারী-পুরুষ উভয় ক্ষেত্রেই এটা সমভাবে হতে পারে এবং অল্প বয়স্কদের ক্ষেত্রেই বেশি হয়। উপসর্গ বা লক্ষণসমূহ কোন কোন ক্ষেত্রে তীব্র আকারে দেখা দেয়ায় প্রচ- কষ্টদায়কও হতে পারে আবার হালকা বা সামান্য উপসর্গ নিয়েও দেখা দিতে পারে। যেহেতু একটি বিশেষ ঋতুতে এই রোগটি দেখা দেয় কাজেই সেই ঋতুর সঙ্গে নিঃসন্দেহে এর সম্পর্ক রয়েছে। ঐ একটি বিশেষ সময়ে বাতাসে যে ফুলের রেণু উড়ে বেড়ায় সেই ফুলের রেণুর প্রভাবেই মূলত এই রোগটি দেখা দেয় এবং এতে যারা আক্রান্ত হয় তাদের মধ্যে বংশানুক্রমিক এলার্জিক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এ রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে হাঁচির সঙ্গে তালু, চোখ ও নাকে জ্বালা ভাব থাকতে পারে। নাক ও চোখ থেকে জল পড়বে এবং তীব্র হাঁচির প্রভাব থাকবে সকালের দিকে। সকালের দিকে এর তীব্রতার কারণ হচ্ছে ঐ বাতাসের পুষ্পরেণুর উপস্থিতি থাকে সবচেয়ে বেশি। হাঁচির সঙ্গে থাকতে পারে কাশি। এর সঙ্গে আরও থাকতে পারে হাঁপানি। তবে সাধারণত এই হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট কম ক্ষেত্রেই উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। তবে হাঁচি কাশি ও হাঁপানি একই সঙ্গে উপস্থিত নাও থাকতে পারে। এর বাইরেও থাকতে পারে খাদ্য গ্রহণের অনিচ্ছা, শারীরিক দুর্বলতা ও অধিক নিদ্রার প্রবণতা। এই রোগকে সঠিকভাবে নির্নয় করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে রোগীর পারিপার্শ্বিক বা বংশানুক্রমিক ইতিবৃত্ত অবশ্যই ভালভাবে জানা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে অবশ্যই যে পুষ্পরেণুতে রোগীর এলার্জি রয়েছে তা অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে এবং সেক্ষেত্রে সন্দেহভাজন পুষ্পরেণুর নির্যাস দিয়ে স্কিন টেস্ট করলে তা জানা যায়। আর এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেহেতু প্রকৃত এলার্জি সৃষ্টিকারী পুষ্পরেণু শনাক্ত করা যায় তাই নির্দিষ্ট সেই পুষ্পরণুর নির্যাস ব্যবহার করে হাইপোসেনসিটাইজেশন পদ্ধতিতে চিকিৎসা করলে ভাল ফলাফলও পাওয়া যায়। অন্যসব এলার্জির বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে যেমন এ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার করা হয় এ ক্ষেত্রেও তা অবশ্যই করা প্রয়োজন। তবে কোন এ্যান্টিহিস্টামিন এ ক্ষেত্রে রোগীর জন্য কার্যকরী তা একাধিক এ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহারের মাধ্যমে কোনটি উপযুক্ত তা নির্নয় করে নিয়ে সেইটি ব্যবহার করলে যতার্থ ফল পাওয়া যাবে। এলার্জিক বিক্রিয়ার ফলে যে হিস্টামিন তৈরি হয় তা নিষ্ক্রিয় করার ক্ষমতা ঐ ঔষধের সমভাবে নাও থাকতে পারে। তাই যার ক্ষেত্রে সেটা উপযুক্ত তাকে সেটাই দিতে হবে। তবে এই ক্ষেত্রে এ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধের প্রয়োগ যে অতিশয় ফলপ্রসূ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে উপযুক্ত চিকিৎসা কিন্তু হাইপোসেনসিটাইজেশন পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রকৃত এলারজেনটি খুঁজে বের করে তাকে নিষ্ক্রিয় করা হয়। তবে এই পদ্ধতির ব্যবহার আমাদের দেশে এখনও অনেকটাই সীমিত। সাধারণভাবে এ্যান্টিহিস্টাসিনই এক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। যদিও তাতে কিছু কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে যেমন অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই এতে ঘুম ঘুম ভাব দেখা দেয়। তবে এই ধরনের সব ঔষধের ঘুম ভাবের ক্ষমতা কিন্তু সমপরিমাণ নয়। কোনটি বেশি আবার কোনটিতে কম ঘুম ভাব হয়। যেটিতে বেশি ঘুম ভাব হয় ঐ ধরনের এ্যান্টিহিস্টামিন অবশ্যই রাতে খাওয়া উচিত এবং এই ধরনের ঔষধ খেয়ে কখনই গাড়ি চালানো উচিত নয়। এ ছাড়াও আবার কোন কোন এ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহারের ফলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুম-লীর উত্তেজনা দেখা দেয় এবং সেক্ষেত্রে রোগীর মধ্যে মানসিক চাপ, অনিন্দ্রা দেখা দিয়ে থাকে। কাজেই অকারণে এ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার কখনই সঙ্গত নয় এবং দীর্ঘদিন ধরে তা ব্যবহার করাও উচিত নয়। যারা হে ফিভাবে ভোগেন তাদের মনে রাখতে হবে ঐ সুনির্দিষ্ট ঋতুতে আক্রান্তের খামারে বা বাগানে কাজ করা উচিত নয়। ঘরের জানালা বন্ধ রাখা উচিত। অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল হলে এয়ারকন্ডিশনার চালালে ভাল থাকা যেতে পারে। ঐ রোগীদের ক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসা চালানো উচিত অন্যথায় স্থায়ীভাবে রোগীর নাকের ও সাইনাসের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির ক্ষতি হতে পারে। ডাঃ দিদারুল আহসান এমবিবিএস, ডিডিভি (অস্ট্রিয়া) ফেলো, আরএসএইচ (ল-ন) চর্ম, এলার্জি ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ
×