ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত খাতে সৌদি বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২২ জানুয়ারি ২০১৭

বিদ্যুত খাতে সৌদি বিনিয়োগ

সৌদি আরবের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আল ফানার এনার্জির সঙ্গে বিএসইসির চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে সৌদি-বাংলাদেশ বিনিয়োগের নতুন দিগন্তের সূচনা হলো বুধবার। অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও কেবল তৈরির লক্ষ্যে ঢাকায় শিল্প মন্ত্রণালয়ে এই লক্ষ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে আরও সৌদি বিনিয়োগ আসবে বলে আশা করা যায়। উল্লেখ্য, গত মার্চ মাসে বাংলাদেশের শিল্পমন্ত্রী সৌদি আরব সফরকালে সে দেশের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রীসহ দেশটির বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় বাংলাদেশের সার, বিদ্যুত, কেমিক্যাল, চিনি, সিমেন্ট, কাগজসহ উদীয়মান শিল্প খাতগুলোতে বিনিয়োগের জন্য সৌদি উদ্যোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শিল্পমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত জুন মাসে সৌদি আরব সফরকালে জেদ্দা চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত এক সভায় সৌদি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। সে সময় আল ফানার এনার্জির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়া হয়। এই স্বাক্ষরের মাধ্যমে ওই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন ঘটল বলা যায়। এটা বিদ্যুত খাতের জন্য একটি সুখবর তাতে সন্দেহ নেই। সম্প্রতি দেশের বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোর সর্বোচ্চ উৎপাদন সক্ষমতা ১৬ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুত উৎপাদনের এই অর্জন আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে এক বড় সাফল্য। ১৬ কোটি মানুষের দেশে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট না হলেও বাস্তবতার নিরিখে এ অগ্রগতি আশা জাগানিয়া। কারণ, দেশের প্রায় ৭৫ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুত সুবিধার আওতায়। ২০০৯ সালে দেশের বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। সেই অবস্থান থেকে বিগত ৮ বছরে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন কম কথা নয়। ২০১৩ সালের নবেম্বরে দেশের বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা ১০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। গত ৪ বছরে ধারাবাহিকভাবে আরও প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াটের নতুন বিদ্যুতকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। সরকার বিদ্যুত উৎপাদনে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য সাফল্যও পেয়েছে। সরকার নতুন নতুন বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন অব্যাহত রেখেছে। রামপাল, রূপপুরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনের প্রক্রিয়া চলছে। বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে এর সুফলও দেখা যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রার পালকে যুক্ত হলো সৌদি আল ফানার এনার্জির সম্পৃক্ততা। সৌদি আরব বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক উন্নয়ন অংশীদার। দেশটির উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তেলসমৃদ্ধ মুসলিম বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ সৌদি আরব বিনিয়োগের জন্য নতুন নতুন উৎস খুঁজছে বাংলাদেশে। তেলের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদনমুখী শিল্প ও অবকাঠামো খাত থেকে রাজস্ব আয় বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে দেশটি। আর এ ক্ষেত্রে সৌদি আরবের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। শুধু বিদ্যুত নয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম সুপার হাইওয়ে, মংলা ও পায়রা পোর্ট উন্নয়নসহ এরকম বড় বড় কিছু খাতে বিনিয়োগ করার ইচ্ছে তাদের রয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারও সৌদি আরবের উদ্যোক্তাদের জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসলে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিনিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিদেশী বিনিয়োগ দেশের সমৃদ্ধিই আনে না, নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রও সৃষ্টি করে। সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, এ প্রকল্পে আল ফানার এনার্জি শতভাগ অর্থায়ন ও প্রযুক্তি বিনিয়োগ করবে। এ কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা হবে। এখানে বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা থাকবে। এই ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের স্বচ্ছতার প্রতিফলন জরুরী। সব ক্ষেত্রে যাতে জাতীয় স্বার্থ প্রাধান্য পায় সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। বিদ্যুতের আলো দিনে দিনে আরও বিস্তৃত ও উজ্জ্বলতর হয়ে গ্রাম-শহর ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার কাছে পৌঁছুক, শতভাগ মানুষ বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আসুকÑ এটাই প্রত্যাশা।
×