ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন দ্রুততর, নির্বিঘœ ও সহজতর হবে ;###;ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২৫২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ;###;দুই ভাগে নির্মাণ কাজ

নির্মাণ হচ্ছে ৫৫ কিমি চার লেনের জাতীয় মহাসড়ক ॥ প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৮ জানুয়ারি ২০১৭

নির্মাণ হচ্ছে ৫৫ কিমি চার লেনের জাতীয় মহাসড়ক ॥ প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সুখবর। এ অঞ্চলের সঙ্গে সড়কপথে রাজধানী ঢাকা ও পূর্বাঞ্চলে যাত্রী-পণ্য পরিবহন নিরাপদ, সময় সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক করতে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় যাত্রাবাড়ী-মাওয়া এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার চার লেনের জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণ কাজ চলছে। এতে বদলে যাচ্ছে এলাকার চিত্র। সড়ক বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, মহাসড়কটি হবে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ও এশিয়ান হাইওয়ের করিডর-১ এর অংশ। তাদের বক্তব্য, নতুন এই প্রকল্পের কোথাও ট্রাফিক ক্রসিং থাকবে না। ফলে যানবাহন নিরবচ্ছিন্ন ও নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারবে। পাশাপাশি ধীরগতির যানবাহনের জন্য নির্মাণ হচ্ছে পৃথক লেন। ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাজ এগিয়ে নিতে ইতোমধ্যে মহাসড়কের দু’ধারে থাকা গাছপালা কেটে পরিষ্কার করে ফেলা হচ্ছে। চলছে জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম। অবকাঠামো নির্মাণের প্রক্রিয়াও চলছে সমান গতিতে। অর্থাৎ এলাকাজুড়ে চলছে নির্মাণযজ্ঞ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে সড়কের উভয়পাশে ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য পাঁচ দশমিক ৫০ মিটার প্রশস্ত পৃথক লেন থাকবে। এটিও দেশে প্রথম। সড়ক যোগাযোগ খাতের মেগা এই প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ২৫২ কোটি টাকারও বেশি; যা শেষ হবে ২০১৯ সালে। মহাসড়কে ইতোমধ্যে অটোরিক্সাসহ ধীরগতির ও অনুমোদনহীন যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সরকার। উচ্চ আদালতের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে। যদিও কঠোরভাবে এর কোন কিছুই কার্যকর হচ্ছে না। এমন বাস্তবতায় অনেক আগে থেকেই সরকারের পক্ষ থকে বলা হচ্ছিল, মহাসড়কগুলোর পাশে ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য পৃথক লেন নির্মাণ করা হবে। যার ধারাবাহিকতায় এ প্রকল্পের সঙ্গে ধীরগতির লেন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলো। যোগাযোগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু ব্যবহার করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসমূহে যাতায়াত দ্রুততর, নির্বিঘœ ও সহজতর করা এবং অঞ্চলের অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়নের জন্য যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন (ইকুরিয়া-বাবুবাজার) লিংক সড়কসহ মাওয়া এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা মহাসড়ক উভয়দিকে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৩ মে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ২৫২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। বর্তমানের দুই লেন থেকে চার লেনে সড়কটি উন্নীত করা হবে। মাঝ বরাবর থাকবে পাঁচ মিটার প্রশস্ত মেডিয়ান। ভবিষ্যতে এ মেডিয়ান ব্যবহার করে মেট্রোরেল নির্মাণ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। এছাড়া নতুন এ প্রকল্পে থাকছে ৬টি ফ্লাইওভার, চারটি রেলওয়ে ওভারপাস, ১৫টি আন্ডারপাসসহ তিনটি ইন্টারচেঞ্জ। এসব সুবিধা সংযোজনের ফলে মহাসড়কটি একটি এক্সপ্রেসওয়েতে রূপান্তরিত হবে। সড়কের দু’পাশে বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে সবুজায়ন করা হবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা জানিয়েছেন, মহাসড়কটি হবে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। সড়কের কোথাও ট্রাফিক ক্রসিং না থাকার ফলে যানবাহন নিরবচ্ছিন্ন ও নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারবে। মেগা প্রকল্পটি সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন-পশ্চিমের আওতাধীন ১৭ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন এবং ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নসহ সড়ক ও জনপথ অধিদফতর বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা এবং দেশের পূর্বাঞ্চলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন নিরাপদ, সময় সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক হবে। পদ্মা সেতু লিংক রোড চার লেনে উন্নীত করার কাজ সম্পন্ন হলে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে আগত যানবাহনগুলো যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন হয়ে সহজে ও স্বল্প সময়ে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করতে পারবে। এক নজরে প্রকল্প ॥ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রকল্পটির নাম দেয়া হয়েছে ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার-লিংক সড়কসহ) মাওয়া পর্যন্ত এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা অংশ ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ চার লেনে উন্নয়ন প্রকল্প। গত বছরের মে মাস থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুরসহ চার জেলা মিলিয়ে প্রকল্পের অবস্থান। মূলত দুই প্যাকেজে এই মহাসড়কের নির্মাণ কাজ হবে। প্যাকেজ এক-১৭ ইবিসি যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিংক সড়কসহ) মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত কাজ করবে। এছাড়া প্যাকেজ-২ এর কাজ করবে ২০ ইবিসি। পাঁচ্চর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করবে তারা। প্রকল্পের জন্য ইতোমধ্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে ২৪ দশমিক ৮৮ হেক্টর জমি। পুরো প্রকল্পে সেতু ৩১টির মধ্যে রয়েছে পিসি গার্ডার ২০টি এবং আরসিসি ১১টি। এর মধ্যে বড় সেতু : ধলেশ্বরী-১ সেতু (২৫৮ দশকি পাঁচ মিটার), ধলেশ্বরী-২ সেতু হবে (৩৮২ দশমিক পাঁচ মিটার)। এ ছাড়াও আড়িয়াল খাঁ সেতু (৪৫০ দশমিক পাঁচ মিটার)। এছাড়াও প্রকল্পে ছয়টি উড়াল সড়কের অবস্থান হবে আবদুল্লাহপুর, হাঁসারা, শ্রীনগর, কদমতলী, পুলিয়াবাজার ও সদরপুর। চারটি রেলওয়ে ওভারপাসের মধ্যে থাকছে জুড়াইন, কুচিয়ামোরা, শ্রীনগর ও আতাদি। যাত্রাবাড়ী, তেঘরিয়া ও ভাঙ্গা পয়েন্টে থাকবে তিনটি ইন্টারচেঞ্জ। প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে ২৪ দশমিক ৮৮ হেক্টর। গত ১৭ নবেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করে বলেন, পদ্মা সেতু এবং এক্সপ্রেসওয়েটির নির্মাণ কাজ একই সময়ে শেষ হবে। মহাসড়কে কোন ট্রাফিক সিগন্যাল থাকবে না। ফলে যানবাহন নিরবচ্ছিন্নভাবে দ্রুত চলাচল করতে পারবে। মন্ত্রণালয়ের সচিব (সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ) এমএএন সিদ্দিক বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার দিন থেকেই মহাসড়কটি ব্যবহার করা যাবে। এটি হবে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। আশা করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রকল্পের মহাসড়ক অংশ দিয়ে চলবে দ্রুতগতির গাড়ি। ধীরগতি বা লোকাল যানবাহনের জন্য থাকবে আলাদা লেন। লোকাল যানবাহন নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া এ মহাসড়কে উঠতে পারবে না। প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাছপালায় ভরা ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের এখন ভিন্ন চেহারা। প্রকল্পের বিভিন্ন অংশে গাছ কেটে মাটি ফেলা হচ্ছে। কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া, রাজেন্দ্রপুর ও আবদুল্লাহপুরসহ মাওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে ধোলাইরপাড়, জুরাইন হয়ে পোস্তগোলা ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে জরিপ কার্যক্রম চলছে।
×