ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জয়পুরহাটের আলু এখন বিদেশে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬

জয়পুরহাটের আলু এখন বিদেশে যাচ্ছে

তপন কুমার খাঁ, জয়পুরহাট ॥ আবহাওয়া অনুকূলে থাকা ও মূল্য বেশি পাওয়ায় জয়পুরহাটের আলু চাষীরা ব্যাপকভাবে আলু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আলু চাষের জমি প্রতি বছর বাড়ছে জয়পুরহাট জেলায়। জয়পুরহাটের আলু উন্নতমানের হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে যেমন চাহিদা বাড়ছে দেশের বাইরেও তেমন রফতানি হচ্ছে। আলু উৎপাদন অধিক মাত্রায় হওয়ায় জেলা আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণও বাড়ছে। কয়েক বছর আগেও জয়পুরহাট জেলায় ৬টি হিমাগার থাকলেও বর্তমানে ১৭টিতে উন্নীত হয়েছে। যার ধারণক্ষমতা লক্ষাধিক টন। যদিও এই জেলায় এখনও আলু বীজ সংরক্ষণের জন্য কোন হিমাগার বা বিজাগার নির্মিত হয়নি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি বছর আলু চাষের আওতায় ৪১ হাজার হেক্টর জমি নেয়া হয়েছে। গতবার থেকে জমির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১ হাজার হেক্টর। এভাবে আলু চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। আলু চাষ শুরু হয় মধ্য অক্টোবর থেকে এবং তা মাঠ থেকে তোলা শেষ হয় জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত। আলু চাষের পর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আলু চাষীরা আশাতীত ফলন পেতে শুরু করেছে। মধ্য নবেম্বরে আলু বাজারে আসতে শুরু করলে তা বাজারে ৮০/৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় শুরু হয়। বর্তমানে সে আলু বাজারে ৩৫/৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মধ্য ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমির আলু কৃষক উঠিয়ে নিয়ে বাজারে বিক্রি করেছে। যার পরিমাণ ১ লাখ ৬০ হাজার মে. টন। এই পরিমাণ আলু কৃষকরা আশাতীত মূল্য পাওয়ায় তারা বেজায় খুশি। জানুয়ারি মাসজুড়েই কৃষকরা তাদের অবশিষ্ট জমির আলু জমি থেকে উঠাবে এমনটাই কৃষি বিভাগ হিসাব করে রেখেছে। ৪১ হাজার হেক্টর জমি থেকে এবার আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে সোয়া ৮ লাখ মে. টন। এই বিপুল পরিমাণ আলু সংরক্ষণের জন্য মাত্র ১৭টি হিমাগার রয়েছে। যার ধারণ ক্ষমতা লক্ষাধিক টন। জেলায় প্রায় ১১ লাখ জনগোষ্ঠীর প্রতিদিনের খাদ্য হিসাবে যে পরিমাণ আলু ব্যবহার হয় তার পরিমাণ প্রায় ২ লাখ টন। বাদবাকি প্রায় ৪ লাখ টন আলু ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে জেলার বাইরে যায়। এ পরিমাণ আলুর কিছু অংশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও রফতানি শুরু হয়েছে। জয়পুরহাট জেলার কালাই, ক্ষেতলাল, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট সদর, পাঁচবিবি উপজেলা আলু উৎপাদনের উপযোগী মাটি থাকলেও কালাই ও ক্ষেতলাল উপজেলার বেশি জমিতে আলু উৎপাদন হয়। আলু উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের কুসুমসরা গ্রামের আলু চাষী বেলায়েত হোসেন, বেলাই গ্রামের আনিছুর রহমান, শুভঙ্কর সরকার, উদয়পুর গ্রামের আব্দুর রহিম, সাখাওয়াত হোসেন, পুনট বাজারের আজিজার রহমান, মমতাজ হোসেন, ক্ষেতলার উপজেলার বড়তারা গ্রামের মজির উদ্দিন, মামুদপুর ইউনিয়নের সন্নাসতলা এলাকার সৈয়দ আলী সঙ্গে কথা বললে তারা জানায় আলু উৎপাদনের অনুকূল আবহাওয়া এবং পোকা মাকড়ের আক্রমণ না থাকা ও বিক্রয়মূল্য আশাতীত পাওয়ায় তারা আলু চাষের দিকে বেশি করে ঝুঁকছে। আলমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ারুজ্জামান নাদিম জানায়, আলু চাষে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল এবং কালাই এলাকার কৃষক ব্যাপকভাবে অংশ নেয়। আলুর বিক্রয় বাজারের পরিসর বাড়লে কৃষকরা আলু চাষের প্রতি বেশি আগ্রহী। অপরদিকে আলু ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত মৃণাল কুন্ডু জানায় জয়পুরহাটে ব্যাপকভাবে আলু চাষ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হচ্ছে তেমন কৃষকরাও লাভবান হচ্ছে। ফলে কৃষক প্রতি বছরই আলু চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। ব্যবসায়ীরা কৃষকদের চাহিদামতো মূল্য দিতেও কুণ্ঠাবোধ করছেন না। তারপরও আলু ব্যবসায়ীরা এই ব্যবসার প্রতিও কৃষকদের মতোই আগ্রহী হয়ে পড়েছে। সরাসরি প্রতিদিন হাজার হাজার মন আলু শত শত ট্রাকে জেলার বাইরে ব্যবসায়ীরা পাঠাচ্ছে। আলু চাষের সঙ্গে হাজার হাজার কৃষক যেমন জড়িত আছে তেমনি হাজার হাজার ক্ষেতমজুর আলু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে। আলু পরিবহনের জন্য দিনমজুর শ্রমিক গোডাউনে হিমাগারে ও ট্রাকে আলু উত্তোলন কাজে নিয়োজিত। এই জেলায় শতাধিক আলু ব্যবসায়ী শুধু আলু ব্যবসার সঙ্গেই জড়িত আছে। জয়পুরহাটে যে পরিমাণ আলু বর্তমানে উৎপাদিত হচ্ছে তার বাজারমূল্য ২৪শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি কেজি আলু ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রয় করেই এ পরিমাণ টাকা পাওয়া যাচ্ছে।
×