ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অনুমোদনের জন্য একনেকে উঠছে আজ

বিদ্যুত নিরবচ্ছিন্ন করতে নেয়া হচ্ছে ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১০ নভেম্বর ২০১৬

বিদ্যুত নিরবচ্ছিন্ন করতে নেয়া হচ্ছে ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

আনোয়ার রোজেন ॥ বিদ্যুতের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করতে সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে জাতীয় গ্রিড ব্যবস্থার। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়েছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৮২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। সরকার ও দাতাসংস্থা জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (কেএফডব্লিউ) যৌথ অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এর মাধ্যমে দেশের গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুত সরবরাহ সক্ষমতা বাড়বে। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আজকের সভায় উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেড। পরিকল্পনা কমিশন এবং বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সিস্টেম লস রোধের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহে প্রয়োজন যান্ত্রিক ত্রুটিমুক্ত ও উন্নত বিদ্যুত উপকেন্দ্র। অথচ দেশের বেশিরভাগ বিদ্যুত উপকেন্দ্রের যন্ত্রপাতির (ইকুইপমেন্ট) কর্মক্ষমতা শেষ হওয়ার পথে। আবার নতুন স্থাপিত বিদ্যুত কেন্দ্রের কারণে আগের উপকেন্দ্রগুলোকে নিতে হচ্ছে ওভারলোড (সক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত চাপ)। ফলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য সিস্টেম লস রোধ ও ২০২১ সালের মধ্যে সব নাগরিকের বিদ্যুত সুবিধা নিশ্চিত করতে নতুন কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি পুরনো কেন্দ্রগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘এনার্জি এফিশিয়েন্সি ইন গ্রিড বেইজড পাওয়ার সাপ্লাই প্রজেক্ট’ বাস্তবায়ন করছে পিজিসিবি। জানা গেছে, এ প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ১ হাজার ২৫৩ কোটি ১১ লাখ টাকা দেবে সরকার। প্রকল্প সহায়তা হিসেবে জার্মান দাতাসংস্থার কাছ থেকে পাওয়া যাবে ১ হাজার ২৪২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আর বাকি ৪৮৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকার জোগান দেবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা পিজিসিবি। দেশের ৬ বিভাগের ১৭ জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। যে সব এলাকায় গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুত সরবরাহ উন্নয়ন করা হবে সেগুলো হচ্ছে- ঢাকা বিভাগের ঢাকা, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও রাজবাড়ী জেলা। এর মধ্যে ঢাকার সাভার ও ধামরাই উপজেলা, গাজীপুরের শ্রীপুর, কালিগঞ্জ ও রাজেন্দ্রপুর উপজেলা, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ ও ভুলতা উপজেলা, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা এবং রাজবাড়ী সদর উপজেলায় গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় রয়েছে সিলেট বিভাগের সিলেট জেলা, রংপুর বিভাগের দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলা, খুলনা বিভাগের ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা। বরিশাল বিভাগের বরিশাল ও পিরোজপুর জেলা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী ও কুমিল্লা জেলাও প্রকল্পের আওতাধীন। সূত্রমতে প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- ৮২ কিলোমিটার ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, ৯৫ কিলোমিটার ১৩২ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন স্থাপন, ৪৬ কিলোমিটার ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইনের দ্বিতীয় সার্কিট স্ট্রিংগিং তৈরি। এছাড়া ১৫০ কিলোমিটার ১৩২ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন রি-কনডাক্টরিং করা হবে। প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুতের পৃথক ইন-আউট লাইন নির্মাণ, আলাদা উপকেন্দ্র নির্মাণ ও আপগ্রেডেশন এবং বিদ্যমান উপকেন্দ্রও সম্প্রসারণ করা হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) মতে, ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বর্তমানে এটি ১৪ হাজার ৫৩৯ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। এতে মাথাপিছু বিদ্যুতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭১ কিলোওয়াট। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৬ শতাংশ মানুষ বিদ্যুত সুবিধা পাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ নবায়ণযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে আসছে ৪৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুত। এছাড়া ভারত থেকে আরও ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে। বর্তমানে ৩৩টি স্থায়ী বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণাধীন। চলতি বছরের শেষের দিকে কুইক রেন্টাল বিদ্যুত ছাড়াই ১৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের আশা করছে সরকার। সূত্র জানায়, বর্তমান বিদ্যুতের চাহিদা, উৎপাদন ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রস্তাবিত প্রকল্পের ব্যাপারে ইতিবাচক মত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (ভারপ্রাপ্ত) জুয়েনা আজিজ বলেন, বর্তমান বিদ্যুত উপকেন্দ্রগুলোর যান্ত্রিক দুর্বলতায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এগুলোর সংস্কার, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন প্রয়োজন। গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুত সরবরাহে দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পটি ২৩০ কেভির। বিদ্যমান ১৩২ কেভি বিদ্যুত সঞ্চালন সিস্টেমের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে প্রকল্পটি বিদ্যুত সরবরাহে নির্ভরযোগ্যতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিদ্যুতের বর্তমান চাহিদা, উৎপাদন ও ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপটে প্রকল্পটি ইতিবাচক হতে পারে বিবেচনায় একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।
×