ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ বাড়ছে

নকলায় হলুদ চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছে কৃষকর

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১০ নভেম্বর ২০১৬

নকলায় হলুদ চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছে কৃষকর

রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর ॥ এবার কৃষি ও শস্যসমৃদ্ধ অঞ্চল শেরপুরের নকলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হলুদ চাষাবাদ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে এলাকার বেশ কিছু প্রান্তিক চাষী হলুদ চাষে লাভবান হয়ে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। অনুর্বর জমিতে, কম পুঁজিতে ও নামমাত্র শ্রমে অধিক মুনাফা হওয়ায় এলাকার অনেকেই এখন হলুদ চাষে উৎসাহ হয়ে উঠছেন। জানা যায়, নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা, চরঅষ্টধর, বানেশ্বর্দী, গণপদ্দী ও উরফা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শত বছর আগ থেকেই কৃষকরা হলুদ চাষ করে আসছেন। স্বল্পব্যয়ে অধিক মুনাফা পাওয়ায় উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নেও হলুদ চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। এ বছর উপজেলায় ৫শ’ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে হলুদ চাষ করা হয়েছে। তাছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে বাড়ির আঙিনায় নিজেদের ব্যবহারের জন্য আরও প্রায় ১শ’ একর জমিতে হলুদ চাষ করেছেন কৃষক। এবার উপজেলার চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা, চরঅষ্টধর ও বানেশ্বর্দী ইউনিয়নেই হলুদের চাষ হয়েছে বেশি। তাছাড়া ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার ২৫ জন সদস্যের সবাই হলুদ চাষ করেছেন। লাভ বেশি পাওয়ায় ওই সংস্থার চাষীরা দিন দিন ওই মশলাজাতীয় ফসলের চাষ বাড়াচ্ছেন। আশানুরূপ দাম পাওয়ায় নকলা অঞ্চলে আগামীতে হলুদ চাষীর সংখ্যা ও পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে। অন্যদিকে উৎপাদিত হলুদে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হয় আশপাশের জেলাগুলোয়। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে উন্নত জাতের ডিমলা ও সুন্দরী হলুদ চাষ করা হলেও দেশীয় জাতের হলুদই বেশি চাষ করা হয়। সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে হলুদ রোপণ করা হয়। অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে হলুদ তোলা হয়। রোপণের আগে আড়াআড়ি ৪ থেকে ৫টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করে রোপণ করতে হয়। লাঙল দিয়ে ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার গভীর করে লাইন টেনে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি অন্তর চোখসহ হলুদের দানা রোপণ করে মাটি চাপা দিতে হয়। গজানো গাছ মাটির ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি উপরে উঠে এলে কোদাল দিয়ে অনেকটা আলু ক্ষেতের মতো মাটি দিতে হয়। তাছাড়া ৬ মাসের এ মশলাজাতীয় ফসলে সর্বোচ্চ ২ বার নিড়ানি দিতে হয়। জমি তৈরি, রোপণ, নিড়ানি ও ফসল তোলা ছাড়া আর কোন খরচ নেই। জমি তৈরি থেকে তোলা পর্যন্ত প্রতি কাঠায় (৫ শতাংশ) খরচ হয় সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা। মঙ্গলবার সরেজমিনে গেলে বানেশ্বর্দী এলাকার হলুদ চাষী মেহেদি হাসান জানান, প্রতি কাঠায় বীজ হলুদ লাগে ২০ থেকে ২২ কেজি এবং উৎপাদন হয় ৮ থেকে ১২ মণ। বর্তমান বাজার মূল্য শুকনা প্রতি কেজি ২শ’ থেকে ২২০ টাকা এবং কাঁচা হলুদ প্রতি মণ ৪৮০ থেকে ৫২০ টাকা। ফলে বর্তমান দাম অনুযায়ী প্রতি কাঠায় লাভ থাকে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা, যা অন্য কোন কৃষিপণ্যে সম্ভব নয়। কেল্লির মোড় এলাকার নাজিমউদ্দিন বলেন, তার ১ একর জমিতে ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি আশা করছেন ৭৫ থেকে ৮৫ হাজার টাকার হলুদ পাবেন। তিনি বলেন, আগামীতে কমপক্ষে আরও ২ একর জমিতে হলুদ চাষ বাড়াবেন। এছাড়া স্থানীয় ফিরোজ মিয়া ও রইছ উদ্দিন এবং পার্শ্ববর্তী চরকৈয়া গ্রামের রুহুল আমিন, গুঞ্জুর মিয়া ও বকুল মিয়াসহ বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বল্প ব্যয়ে, স্বল্প শ্রমে হলুদ চাষে লাভবান হওয়ার কথা। এ বিষয়ে নকলা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ বলেন, এ বছর উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শসহ আনুষঙ্গিক সেবার কারণে এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে ৫শ’ একর এবং নিজের ব্যবহারের জন্য আরও প্রায় ১শ’ একর জমিতে হলুদ চাষ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। অনুর্বর জমিতে হলুদ চাষ হওয়ায় জমির যেমন সুষ্ঠু ব্যবহার হচ্ছে, পাশাপাশি লাভবান হচ্ছেন চাষিরাও। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে হলুদ চাষ। কারণ এখন হলুদ চাষে জীবনকে রঙিন বা স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন অনেকেই।
×