ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

পেশোয়ারে জঙ্গী হামলা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

পেশোয়ারে জঙ্গী হামলা

আবার পাকিস্তানে জঙ্গীবাদ রক্ত ঝরাল। এবার তার শিকার শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষার্থী। আধুনিক শিক্ষা বরাবরই জঙ্গীবাদের কাছে অসহনীয় ও বিপজ্জনক। তারা পছন্দ করে শিক্ষার আলো নয়, অজ্ঞানতার অন্ধকার। শিশুর মুখের হাসি দেখতে তারা চায় না, চায় সে হাসি নিভিয়ে দিতে। বুধবার পেশোয়ারে জঙ্গীদের নির্বিচার গুলিবর্ষণে কমপক্ষে ২১ নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছে। সামরিক ধরনের জ্যাকেট পরিহিত তরুণ বয়সী জঙ্গীরা গ্রেনেড ও এ্যাসল্ট রাইফেল হাতে বাচাখান বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি ও বোমা হামলা চালিয়ে এ হত্যাকান্ড ঘটায়। গত বছরও পেশোয়ারে নৃশংস জঙ্গী হামলা চালানো হয়। ওই হামলার পর বাংলাদেশের সব সীমান্ত এলাকা, বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কঠোর নজরদারির আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। পাকিস্তানে জঙ্গীরা এখন সক্রিয়। পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা বাংলাদেশকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে। ভূ-রাজনৈতিক কারণেই পাকিস্তানী রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা এতে ইন্ধন দিয়ে আসছে। লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্যরা ভারতীয় জাল রুপির যে ব্যবসা চালিয়ে আসছে তাতে বাংলাদেশকে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রানজিট হিসেবে। ইতোমধ্যে ভারতীয় জাল রুপিসহ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে গত ৫ বছরে অর্ধশতাধিক পাকিস্তানী নাগরিক গ্রেফতার হয়েছে। পেশোয়ারে জঙ্গী হামলা আবারও বিশ্বব্যাপী সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। মাত্র কিছুদিন আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁর এক ভাষণে অত্যন্ত স্পষ্ট করেই বলেছেনÑ পাকিস্তানই সন্ত্রাসবাদের স্বর্গ। ওবামার ভাষণে আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের দাবিকে ছাপিয়ে উঠে আসে সন্ত্রাসবাদের কথা। তিনি মনে করেন, আগামী এক দশকে আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই এই অস্থিরতা চলবে। সন্ত্রাসবাদীদের নতুন স্বর্গ হয়ে উঠবে পাকিস্তান। আল কায়েদা এবং আইএস যে সরাসরি আমেরিকার বিপদের কারণ হতে পারে, সেই শঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি। বিগত কয়েক দশকের বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, পাকিস্তান ও সন্ত্রাসবাদ ক্রমান্বয়ে সমার্থক হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বিগত কয়েক বছর ধরে দেশটির জঙ্গীবাদী কর্মকা- পরিচালনার পরিধি বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বার বার বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। ভারতও অনেক দিন ধরেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করে আসছে। এটা সত্য যে, পাকিস্তানের অধিকাংশ সন্ত্রাসী হামলা ও উপদলীয় খুন ধর্মীয় মতাদর্শ-উদ্বুদ্ধ। তালেবান ও অন্য জঙ্গীগোষ্ঠীগুলো ‘ইসলামের’ নামে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায়। এর উল্লেখযোগ্য নজির হচ্ছে, নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান আগের মতো এবারও এক ফেসবুক পোস্টে এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে, তাদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। দারিদ্র্য, বেকারত্ব, জিহাদের কল্পনা ও ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে তরুণরা আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীতে পরিণত হচ্ছে। মসজিদ ব্যবহার করে ধর্মব্যবসায়ীরা উপদলীয় ঘৃণা ছড়াচ্ছে, সহিংসতা উসকে দিচ্ছে। জঙ্গীবাদ পাকিস্তানের মাদ্রাসা ও মসজিদে ছায়া বিস্তার করেছে। এর বিরুদ্ধে প্রবল বিশ্বচাপ বজায় রাখার বিকল্প নেই। দেশে-দেশে যাতে তারা জঙ্গীবাদের ছায়া বিস্তার করতে না পারে সেজন্য সজাগ সতর্ক থাকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবেÑ এটাই সময়ের দাবি।
×