
ছবি:সংগৃহীত
প্রায় ১৭ বছর পর গাজীপুরের শ্রীপুরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা রেলওয়ে চত্বরের মুক্তমঞ্চে কর্মী সমাবেশ করেছেন। এতদিন চত্বরটি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দখলে ছিল। অনেক চেষ্টা করেও বিএনপির কর্মীরা রেলওয়ে চত্বরের মুক্তমঞ্চে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারেননি।
শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে শ্রীপুর পৌর বিএনপির আয়োজনে রেলওয়ে চত্বরের মুক্তমঞ্চে ১, ২ এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সরকারের বাইরে থাকা অবস্থায় যেসব নেতাকর্মীরা নির্যাতন-অপমান ও জেল-জুলুম সহ্য করে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে বাকিদের পেছনের সারিতে রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। রেলওয়ে চত্বরের মুক্তমঞ্চে তৃণমূল বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মী এ দাবি করেন। গ্রাম থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নেতা নির্বাচনে ওই নীতি অনুসরণের দাবি তোলেন তারা। এতে ত্যাগীদের মনোবল বৃদ্ধি এবং ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীরা নতুন উদ্যমে উৎসাহিত হবেন বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা।
১৭ বছর পর এবারই প্রথম শ্রীপুর পৌর বিএনপি রেলওয়ে মুক্তমঞ্চে সভা করার সুযোগ পেয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
কর্মী সমাবেশ উপলক্ষে নির্ধারিত ওই তিনটি ওয়ার্ডের নেতাকর্মী ছাড়াও পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে রেলওয়ে চত্বরের মুক্তমঞ্চে জড়ো হন। এর আগে তাঁরা শহরের প্রধান সড়কে কর্মী সমাবেশের সফলতা ও স্বাগত জানিয়ে মিছিল করেন। বিকেল ৪টা থেকে শুরু হয় কর্মী সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা।
শ্রীপুর পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির সরকারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন ও প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বেপারীর সঞ্চালনায় কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপি নির্বাহী কমিটির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এস এম রুফকুল ইসলাম বাচ্চু।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার দেশটাকে নরকে পরিণত করেছিল। দেশে বাক স্বাধীনতা বলে কিছু ছিল না। লুটপাট, দখল, দুর্নীতিতে দেশটাকে নিঃস্ব করা হয়েছে। এই শ্রীপুরেও তারা স্বৈরতন্ত্র চালিয়েছে। গত ১৭ বছরে তারা বিএনপির নেতা-কর্মীদের স্বাধীনভাবে মাঠে নামতে দেয়নি। রাস্তায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে বের হলেও তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।
কর্মী সমাবেশে দলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপির নিরীহ নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র রেলওয়ে চত্বরের মুক্তমঞ্চে কর্মসূচি পালন করতে চাইলেও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী ও পুলিশ বাধা দিয়েছে। উপজেলার যেকোনো স্থানে বিএনপি তথা অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কোনো সমাবেশ করার খবর পেলে তারা পুলিশ বাহিনী দিয়ে হামলা করেছে।
তারা বলেন, তাদের খারাপ পরিণতির মধ্য দিয়ে জুলুম-নির্যাতনের অবসান হয়েছে। দেশের মানুষ সত্যিকারের স্বাধীনতার স্বাদ পাচ্ছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা এই রেলওয়ে চত্বরের মুক্তমঞ্চে জড়ো হতে পারছেন। এ দেশের মাটিতে আওয়ামী লীগের কবর হয়ে গেছে। দেশের মানুষ আর কখনো তাদের এই মাটিতে স্থান দেবে না।
পতিত সরকারের দোসররা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সাথে মিশে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। নেতাদেরকে এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী দিনের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।
শ্রীপুর পৌর বিএনপির সদস্য সচিব বিল্লাল হোসেন বেপারী বলেন, দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রতি এ সমাবেশ থেকে যে বার্তাটি দেওয়া হচ্ছে তার অন্যতম প্রধান বার্তা হল—মাদক, চাঁদাবাজ ও সামাজিক অপরাধমুক্ত কর্মীদের চিহ্নিত করে কমিটি গঠন করা হবে। এজন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, সাধারণ মানুষের প্রতি বার্তা হলো—১৭ বছরের অনিয়ম, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপিকে সহযোগিতা করা। পাশাপাশি দলনেতা তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে বিএনপির পাশে থাকার আহ্বান জানানো হয়।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন
শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও দলের নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য পীরজাদা মাওলানা এস এম রুহুল আমীন, শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল মোতালেব, সদস্য সচিব খায়রুল কবির মণ্ডল আজাদ, সাবেক সভাপতি সিরাজ উদ্দিন কাঁইয়া, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোসলেহ উদ্দিন মৃধা, মোক্তারুল করিম শামীম, অ্যাডভোকেট জাফর সরকার, এস এম মাহফুল হাসান হান্নান, অ্যাডভোকেট কবির হোসেন, আবুল হোসেন প্রধান, সাইফুল হক মোল্লা, এস এম জাবেদ, বিল্লাল হোসেন, রেজাউল করিম খোকন, খোকন প্রধান প্রমুখ।
মারিয়া