ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

৫ দশকের অবহেলার পর এলাকাবাসীর স্ব-অর্থে রাস্তা মেরামত

মিজানুর, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ৫ জুলাই ২০২৫

৫ দশকের অবহেলার পর এলাকাবাসীর স্ব-অর্থে রাস্তা মেরামত

ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কালীগঞ্জ ও নুনখাওয়া ইউনিয়নের মাঝামাঝি প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি কাঁচা রাস্তা, যেটি স্থানীয়ভাবে ‘শাহেবগঞ্জ-চরকাঠগিরী সংযোগ সড়ক’ নামে পরিচিত। স্বাধীনতার পর ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এই রাস্তাটি আজ পর্যন্ত কোনো সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আসেনি। দুই ইউনিয়নের সীমান্তে হওয়ায় দায়িত্ব গ্রহণে দ্বিধা এবং অবহেলার কারণে বছরের পর বছর হাজারো মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে শত শত শিক্ষার্থী, রোগী, শ্রমজীবী ও বৃদ্ধ মানুষ যাতায়াত করেন। বর্ষার সময় কাদা এতটাই জমে যায় যে চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাস্তাটি পঁচিশ থেকে তিরিশ সেন্টিমিটার পর্যন্ত কাদা ও জলমগ্ন থাকে, যা হেঁটে চলা ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। অথচ এই রাস্তাটির পাশেই অবস্থিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা এবং একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, যেখানে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী ও শতাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। দীর্ঘদিনের এই দুরবস্থা আর সহ্য করতে না পেরে এবার এলাকাবাসী স্ব-অর্থে উদ্যোগ নিয়ে রাস্তাটি মেরামত করেছে।

শাহেবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ও নুনখাওয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক খাইরুজ্জামান (৬৫) বলেন, “জন্ম থেকে দেখে আসছি, এই রাস্তায় কখনো সরকারি বরাদ্দ আসেনি। সব সময় জনগণই জোটবদ্ধ হয়ে সংস্কার করেছে।”

অন্য এক স্থানীয় বাসিন্দা ও অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হুমায়ুন কবীর বলেন, “প্রাথমিক থেকে অনার্স পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি, কিন্তু কোনো চেয়ারম্যান বা মেম্বারকে এই রাস্তায় সংস্কার করতে দেখিনি। সবকিছুই এলাকার মানুষের অর্থায়নে হয়েছে।”

মোটরসাইকেল চালক রবিউল ইসলাম জানান, “এই রাস্তায় বাইক চালানো মানে প্রতিদিন দুর্ঘটনার ঝুঁকি নেওয়া। যাত্রীদের জন্যও এটা খুব কষ্টকর।”

স্থানীয় মাওলানা মকবুল হোসেন বলেন, “আমাদের শিশু ও বৃদ্ধরা রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে পড়ে যায়। তাই প্রতিবারের মতো এবারও নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে মাটি ও কিছু খোয়া ফেলে রাস্তাটি সমান করেছি, যেন অন্তত স্কুল-কলেজে যাওয়া যায়।”

বিশেষভাবে লক্ষণীয়, রাস্তার পশ্চিম পাশে পাকা এবং পূর্ব পাশে সিসি ঢালাই করা হলেও মাঝের প্রায় এক কিলোমিটার অংশ এখনো কাঁচা ও কর্দমাক্ত। যেন উন্নয়নের মাঝে এক 'অনুন্নয়নের ফাঁক' থেকে গেছে।

দুই ইউনিয়নের সীমান্তে হওয়ায় কেউই পুরোপুরি দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নয়।

কালীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুকুল চন্দ্র বাবু বলেন, “আমি দুবার মেম্বার হয়েছি, কিন্তু চেয়ারম্যান কখনোই এই রাস্তায় বরাদ্দ দেননি।”

নুনখাওয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কাশেমের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কালীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম প্রধান বলেন, “শাহেবগঞ্জের ২ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের জন্য আমরা এলজিইডি অফিসে বরাদ্দ চেয়েছিলাম, তবে তারা মাত্র এক কিলোমিটার কাজ করেছে। আমি আর কী করতে পারি?”

অন্যদিকে, নুনখাওয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, “রাস্তাটি দুই ইউনিয়নের মধ্যবর্তী হওয়ায় সমস্যা হয়েছে। তবে আরডিআরএস কর্তৃপক্ষ আগামী অর্থবছরে হিরিং রাস্তা করার জন্য বরাদ্দ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।”

নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিব্বির আহমেদ বলেন, “রাস্তাটির বিষয়ে এখন জানলাম। জনপ্রতিনিধি বা এলাকাবাসী যোগাযোগ করলে এবং বরাদ্দ পাওয়া গেলে আগামী অর্থবছরের শুরুতেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

রিফাত

×