
ছবিঃ সংগৃহীত
পৃথিবীর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রা। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার বালিগাঁও বাজারে শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেল ৪টায় দেখা গেল এক অনন্য দৃশ্য। হৃষিকেশ বাড়ি নামক স্থান থেকে শুরু হওয়া রথযাত্রা রূপ নেয় হাজারো মানুষের আনন্দ-উৎসবে। লাল, হলুদ, নীল রঙে সাজানো রথ, শঙ্খধ্বনি আর ঢোলের শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো বাজার।
পুরো এলাকা যেন হয়ে ওঠে এক ধর্মীয় মিলনমেলা। নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশু নির্বিশেষে সবাই অংশ নেন রথ টানার এই মহান আনন্দযাত্রায়। শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানই নয়, এটি যেন হয়ে ওঠে বাঙালি সনাতন সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল বহিঃপ্রকাশ। পাণ্ডববর্জিত সময়েও যাঁরা রথযাত্রার মতো উৎসব ধরে রেখেছেন, তাঁরা এ দেশের সংস্কৃতির এক গৌরবময় ধারক।
রথযাত্রার এই আয়োজন সফল করতে দীর্ঘদিন ধরে নিরলস পরিশ্রম করে আসছেন বালিগাঁও রথযাত্রা উদযাপন কমিটির সদস্যরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সভাপতি সংকর্ষণ পাবন দাস, সহ-সভাপতি ভগবান চৈতন্য দাস, সাধারণ সম্পাদক সজিব মণ্ডল, এবং প্রচার সম্পাদক সচিসূত প্রেমময়। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন অমেশ্বর শ্রীনিবাস দাস। এছাড়াও অনুষ্ঠানে কমিটির অন্যতম সদস্য নিতাই শীলসহ বহু স্বেচ্ছাসেবক উৎসব সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
স্থানীয়দের মতে, “বছরের পর বছর ধরে আমরা এই রথযাত্রা আয়োজন করে আসছি। একদিকে ধর্মীয় অনুভূতির প্রকাশ, অন্যদিকে প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে মিলেমিশে উৎসব উদযাপনের অপূর্ব সুযোগ—এই রথ আমাদের সেই ঐক্যের প্রতীক।”
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা ভক্তরা রথের সামনে ফুল, নারিকেল, কলা ও ধূপ-ধুনুচি উৎসর্গ করেন। একদিকে যখন ধর্মীয় আচারের পরম্পরা রক্ষা হয়, অন্যদিকে সংস্কৃতির স্রোতধারায় গা ভাসিয়ে দেয় জনসাধারণ।
বালিগাঁওয়ের এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, “আমার দাদারাও এই রথ টেনেছেন। আমি ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। এটা আমাদের বেঁচে থাকার এক অনুভূতি। এই রথ শুধু কাঠের গড়া নয়, আমাদের বিশ্বাস, ভালোবাসা আর পরিচয়ের প্রতীক।”
রথযাত্রা উপলক্ষে বালিগাঁও বাজার ও আশপাশের এলাকা সুশোভিত করা হয় বিভিন্ন আলোকসজ্জা ও ব্যানারে। পথজুড়ে ছিল কীর্তন ও ধর্মীয় সংগীতের আয়োজন। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীরা নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার দিকটিও নিশ্চিত করেন।
রথযাত্রা শেষে স্থানীয় মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মীয় আলোচনা, প্রসাদ বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। এই উৎসবটি শুধুমাত্র ধর্মীয় গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়, এটি সময়ের পরিক্রমায় হয়ে উঠেছে বালিগাঁওবাসীর সামাজিক সংহতির অন্যতম স্তম্ভ।
ইমরান