ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

লেকের জলাবদ্ধতা নিরসনে পাইপ স্থাপনে বাধা, শিক্ষকদের অস্ত্র দিয়ে ধাওয়া

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা

প্রকাশিত: ১৭:০৫, ২২ জুন ২০২৫

লেকের জলাবদ্ধতা নিরসনে পাইপ স্থাপনে বাধা, শিক্ষকদের অস্ত্র দিয়ে ধাওয়া

আমতলী উপজেলার বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের লেকের জলাবদ্ধতা নিরসনে পাইপ স্থাপন করতে গেলে ভূমিদস্যু বাবুল মিয়া ও তার লোকজন বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, আগামী ২৬ জুন এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ওই পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটাতেই বাবুল মিয়া ও তার সহযোগীরা পানি নিষ্কাশনের পাইপ স্থাপনে বাধা দেয়।

রবিবার দুপুরে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইপ স্থাপন করতে গেলে বাবুল মিয়া ও তার লোকজন কলেজের শিক্ষক ও পৌরসভার কর্মীদের ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে।

জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে আলহাজ্ব মকবুল আহম্মেদ মৃধা আমতলী পৌরসভার কালিবাড়ী এলাকায় বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। কলেজের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে একটি লেক নির্মাণ করা হয়। দুই মাস আগে স্থানীয় ভূমিদস্যু বাবুল মিয়া পানি নিষ্কাশনের পথ বালুর বস্তা দিয়ে আটকে দেন, যার ফলে লেকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং কলেজের পরিবেশ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

রবিবার পৌর প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশিদের নেতৃত্বে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইপ স্থাপনের কাজে গেলে বাবুল মিয়া, তার ছেলে হাসিব মিয়া, সোয়েব মিয়া, স্ত্রী রিনা বেগম, শ্বাশুড়ি আলেয়া বেগমসহ ১০-১২ জন মিলে বাধা দেয় এবং শিক্ষক ও পৌরসভার কর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে তারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে। খবর পেয়ে আমতলী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মার্জিয়া, ঝুমুর ও মারিয়া বলেন, লেকের জলাবদ্ধতায় শ্রেণিকক্ষে পঁচা দুর্গন্ধে টিকতে কষ্ট হয়। দ্রুত পানি নিষ্কাশন করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তারা।

কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বসির উদ্দিন, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, কবির হোসেন, উত্তম কুমার কর্মকার ও মাকসুদুর রহমান বলেন, পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগে বাধা প্রদান এবং শিক্ষকদের ওপর হামলার চেষ্টা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। তারা দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

সহকারী অধ্যাপক মোঃ বাছির উদ্দিন ও মিজানুর রহমান বলেন, ২৬ জুন এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ওই পরীক্ষায় প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটাতে এ হামলা চালানো হয়েছে।

বাবুল মিয়ার স্ত্রী রিনা বেগম ধারালো অস্ত্র দিয়ে শিক্ষকদের ধাওয়া দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “লেকের পানি আমার জমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে ক্ষতি হয়, তাই বাধা দিয়েছি।” তিনি বলেন, “আমার জমির ওপর দিয়ে কোনো পাইপ বসাতে দেব না।”

পৌর প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশিদ বলেন, “কলেজের জমির ওপর দিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইপ বসানো হচ্ছিল। কিন্তু বাবুল মিয়া ও তার লোকজন বাধা দিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলার চেষ্টা চালায়, ফলে কাজ বন্ধ করতে হয়।”

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোছাঃ ফেরদৌসি আক্তার বলেন, “বাবুল মিয়া কলেজের জমি দখল করে পানি নিষ্কাশনের পথ আটকে দিয়েছে। ২৬ জুনের এইচএসসি পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটাতে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।”

আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মোঃ রোকনুজ্জামান খাঁন বলেন, “কলেজের লেকের জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌরসভা থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

সজিব

আরো পড়ুন  

×