
ছবিঃ জনকণ্ঠ
সুদিন ফেরেনি চট্টগ্রামের চন্দনাইশের চামড়া ব্যবসায়ীদের। সরকারি ধার্য্য করা দামে চামড়া বিক্রি হলে লাভবান হবেন ব্যবসায়ীরা। চামড়া নেয়ার পথে চাঁদার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। চামড়ার প্রকৃত মূল্য নিয়ে শংকায় তারা। এই সুযোগে মধ্য সর্ত্বভোগীরা ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, ঢাকার আড়তদার ও ট্যানারি সংশ্লিষ্টদের কাছে চামড়া পৌঁছিয়ে নায্যমূল্য নিয়ে শংকায় রয়েছেন। সরকারি ধার্য্যকৃত মূল্যে চামড়া বিক্রি করতে না পারলে লোকসানেই বিক্রি করে বাড়ি ফিরতে হবে ব্যবসায়ীদের।
গত ৭ জুন কোরবানির গরুর চামড়া প্রকারভেদে ৪’শ থেকে ৬’শ টাকায় ক্রয় করেছেন চন্দনাইশের ১৫ জনের অধিক চামড়া ব্যবসায়ী। তাদের মতে, প্রতিটি চামড়া ক্রয়ের পর ২’শ টাকার লবণ, প্রতিটি চামড়া ডেকোরেশন খরচ, শ্রমিক মজুরীসহ ২’শ টাকা প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যয় হয়। পাশাপাশি ক্রয়কৃত চামড়া ঢাকার হেমায়েতপুর নিয়ে যেতে ১ হাজার পিচ চামড়ার গাড়ি ভাড়া ২৫ হাজার, ২ দিকে চামড়া উঠানো এবং নামানোর খরচ প্রতিপিচ ২০ টাকা, আড়ত খরচ ৫০ টাকাসহ প্রতিটি চামড়ার মূল্য ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া দর অনুযায়ী প্রতিটি চামড়ার মূল্য ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রয় করা গেলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। তবে ১৫ ফুটের ছোট, কাটা ২০ শতাংশ চামড়া বাদ দিয়ে ঢাকার ব্যবসায়ীরা চামড়া ক্রয় করে থাকেন।
চামড়া সংগ্রহের ১০ দিন পর প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রির জন্য ঢাকা নেয়ার পথে গত ১৭ জুন রাত ১১ টায় হাইওয়ে পুলিশ পটিয়া ভাইয়ের দিঘী পাড় এলাকায় চামড়ার গাড়ি আটক করে ৩৪’শ টাকা আদায় করার পর রাত ২ টার সময় গাড়িটি ছেড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন চন্দনাইশ হাশিমপুর বড় পাড়ার চামড়া ব্যবসায়ী মো. হানিফ। সড়কে এ ধরণের চাঁদাবাজি থেকে মুক্তি চেয়ে প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
একই এলাকার ব্যবসায়ী আবদুর রশীদ বলেছেন, তিনিসহ চন্দনাইশের ১০ জনের অধিক চামড়া ব্যবসায়ী রয়েছে। এ সকল ব্যবসায়ীরা চলতি মৌসুমে ১৫ হাজারের অধিক চামড়া সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে গত ২/১ দিন ধরে ঢাকার হেমায়েতপুরে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে হানিফ ২ হাজার পিচ, মনির আহমদ ৩ হাজার পিচ, বশির আহমদ ১ হাজার পিচ চামড়া সংগ্রহ করে ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন বলে জানান।
ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, সরকারের মূল্য নির্ধারণে মাঠ পর্যায়ে তারা বাড়তি দামে চামড়া ক্রয় করেছেন। কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাড়তি মূল্য দিচ্ছেন না। আর পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও সরকার তো চামড়া কিনে না। ট্যানারি মালিকরা যেভাবে দাম দেবে সেভাবেই চামড়ার বেচাকেনা করতে হবে।
চন্দনাইশ পৌরসভা ও হাশিমপুর বড়পাড়া আজ ১৮ জুন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোরবানি ঈদের পর থেকে দীর্ঘ ১০/১২ দিন এসব এলাকার চামড়া ব্যবসায়ীরা প্রক্রিয়াজাত করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। আজ ১৮ জুন সে সকল প্রক্রিয়াজাত করা চামড়া বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা হেমায়েতপুরে। তবে তারা শংকায় রয়েছেন নায্যমূল্যে চামড়া বিক্রয় করতে পারবে কিনা ?
ব্যবসায়ী মনির আহমদ বলেছেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দামের তুলনায় অনেক কম দামে বিক্রয় করতে হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া। মূলত ট্যানারি মালিক-আড়তদারদের সিন্ডিকেট এই চামড়ার দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। সিন্ডিকেটের কারণে তারা পুঁজি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। অধিকাংশ চামড়াই ৫শ’ থেকে ৮শ’ টাকার মধ্যে ক্রয় করেছেন। খরচসহ ১ হাজার টাকার উপরে দাম পড়েছে প্রতিটি চামড়ায়। ফলে প্রতিটি চামড়া ১২’শ থেকে ১৩’শ টাকায় বিক্রয় করতে না পারলে লোকসানে পড়বেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।
আলীম