ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

ধীরে ধীরে জমে উঠছে সাপাহারের আম বাজার, দাম তুলনামূলক কম

নাসির হায়দার, সাপাহার, নওগাঁ

প্রকাশিত: ২০:৫৬, ১৫ জুন ২০২৫

ধীরে ধীরে জমে উঠছে সাপাহারের আম বাজার, দাম তুলনামূলক কম

প্রচন্ড গরম ও ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁকডাকে বেশ জমে উঠেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ আম বাজার নওগাঁর সাপাহার আমের হাট। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে থাকা বেপারী, পাইকার এবং ব্যবসায়ীদের মুখর পদচারণা লক্ষ্য করা গেছে পুরো সাপাহার জুড়েই। প্রশাসন কতৃক নির্ধারিত ওজন ও আমের কোয়ালিটি নিয়ে আম চাষী ও বেপারীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থাকলেও বাজারে হিমসাগর, ল্যাংড়া, নাক ফজলি, ব্যানানা ম্যাংগো এবং আম্রপালি বাজারে বিক্রি হচ্ছে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়া বাজারে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেজিতে আম ক্রয়-বিক্রয়ের নির্দেশনা দেওয়া হলেও পুরোপুরি মানা হচ্ছে না সেই নির্দেশনা। কোথাও ৫২ কেজিতে নেওয়া হচ্ছে এক মণ আবার কোথাও ৫০ অথবা ৫১ কেজিতে। দাম এবং বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়েও ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। 

রোববার (১৫ জুন) নওগাঁর সাপাহার আমের হাট ঘুরে দেখা যায়, সাপাহার জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে শুরু করে সাপাহার-নজিপুর আঞ্চলিক সড়কের গোডাউনপাড়া মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়কের দুই পাশে বসেছে আমের হাট। পাখি ডাকা ভোর থেকে দিনব্যাপী কেনাবেচা চলে এই হাটে। সূর্য ওঠার আগে থেকে চাষিরা ভ্যান, ভটভটি এবং অটোরিকশায় ক্যারেট সাজিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারে নিয়ে আসছেন বিভিন্ন জাতের আম। সাথে সাথে বাড়তে থাকে ক্রেতার উপস্থিতিও। প্রশাসন থেকে কেজিতে আমি ক্রয় করতে বললেও ব্যবসায়ী এবং পাইকাররা সিন্ডিকেট করে ৫২ কেজিতে ১ মণ  হিসেবে ক্রয় করছেন বলে অভিযোগ আম চাষিদের। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য বিভাগীয় বাজারে এখন আমের চাহিদা ততটা নেই বলে বাজার কিছুটা কম এবং লোকসানের মুখে আছেন বলে দাবি পাইকার, বেপারী এবং ব্যবসায়ীদের। 

রোববার সাপাহার আমের হাটে প্রতি মণ হিমসাগর ১২০০-১৬০০ টাকা, ল্যাংড়া ৮০০-১৫০০ টাকা, নাক ফজলি ১২০০-১৫০০টাকা, ব্যানানা ম্যাংগো ২৮০০-৩৫০০টাকা, হাড়ি ভাংগা ১৫০০-২৫০০ টাকা এবং আম্রপালি ১৮০০-৩২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় এ বছর ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। যা থেকে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৩৪ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাজারে আম বিক্রি করতে আসা বিক্রেতা সাপাহার মাইপুর গ্রামের আমচাষি জালাল বলেন, অন্যের ৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আম্রপালি আমের বাগান করেছি। এ বছর আমের দাম অনেক কম। গত বছর যে আম ৪২০০-৪৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি সে আম এ বছর ২০০০-২৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে । এ দামে আম বিক্রি করে কীটনাশক খরচ ই উঠবে না। লেবার খরচ তো বাদ দিলাম।

কানসাট থেকে আসা আম ব্যবসায়ী  বাবু বলেন, কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করেই ৫২ কেজি নেওয়া হয়। ক্যারেটের সকল আম এক সাইজের হয় না। যার কারণে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে কারও কাছ থেকে ৪৮ আবার কারও কাছ থেকে ৫০ কেজি নিয়ে থাকে। ওজন ৫২ তেই নির্দিষ্ট না। 

সাপাহার উপজেলা আম আড়ৎদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন রিফাত বলেন, এ বছর তুলনামূলক ফলন কম হলেও আমের সাইজ অনেক ভালো হয়েছে। সারাদেশ থেকে ব্যবসায়ী এবং বেপারীরা ইতোমধ্যে আসতে শুরু করেছেন। আশা করা যাচ্ছে এ বছর ৫-৬ হাজার কোটি টাকার আম কেনাবেচা হবে।'

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশনা অনুযায়ী কেজিতে আম ক্রয়ের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং কানসাটের ব্যবসায়ীরা ৫০ থেকে ৫২ কেজিতেই মণ হিসেবে আম ক্রয় করছেন। যার কারণে এ বাজারে আম ক্রয় করতে আসা অন্য ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ছেন। তাই ওজনের বিষয়টি যদি সারাদেশে একই রকম রাখা হয়, তাহলে ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধা হয়। বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে বলেও তিনি দাবী করেন।

 

রাজু

×