ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা

 বান্দরবানে সাঙ্গু নদীর চর কেটে বালু নিয়ে বিদ্যুৎ উপ-কেন্দ্রের জমি ভরাটের অভিযোগ 

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান

প্রকাশিত: ১৭:৪১, ১২ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৭:৪২, ১২ জুন ২০২৫

 বান্দরবানে সাঙ্গু নদীর চর কেটে বালু নিয়ে বিদ্যুৎ উপ-কেন্দ্রের জমি ভরাটের অভিযোগ 

বান্দরবানের কুহালংয়ে সাঙ্গু নদীর চর কেটে বালু নিয়ে  বিদ্যুৎ উপ-কেন্দ্রের জমি ভরাটের করা হচ্ছে।

বান্দরবানে পাহাড় কাটার পর এবার সাঙ্গু নদীর চর থেকে বালু নিয়ে ভরাট করা হচ্ছে নির্মাণাধীন বালাঘাটা উপ-বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জমি । এতে এ বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন সৃষ্টি হয়ে অন্তত ১০০ পরিবারের বসত ঘর নদীতে বিলিন হওয়ার শংকা করছেন পাড়াবাসীরা। বৃহস্পতিবার (১২জুন) সকালে বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং  ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ড হেডম্যান পাড়া এলাকায় গিয়ে দুইটি ভেকু দিয়ে সাঙ্গু নদীর চরের দুইটি স্থান থেকে বালি ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়।


স্থানীয়রা জানান, গত ৪ দিন ধরে বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং  ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ড হেডম্যান পাড়া এলাকার সাঙ্গু নদীর চর থেকে অন্তত ৬ টি ট্রাক ও ২টি ভেকু দিনে-রাতে বালি উত্তোল করে নিয়ে যাচ্ছে এক দল লোক।তারা  প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে  সরাসরি বাঁধা দিতে সাহস পাচ্ছেন না। এরই মধ্যে চরটি থেকে প্রায় ১ লাখ ঘন ফুটেরও বেশি বালু সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নদী চরের যে দুইটি স্থান থেকে বালি তোলা হচ্ছে ওই জায়গার মালিক চাই চা থোয়াই মারমা ও উচিনু মারমা'র বলে জানান স্থানীয়রা।


বালু উত্তোলনে নিয়োজিত ভেকু চালক মো. সুমন জানান, সম্রাট নামে এক ব্যাক্তির নির্দ্দেশে বালু উত্তোলন করছেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জ্বল বড়ুয়া বলেন, তাদের পাড়াটি সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী ও নিচু এলাকা। প্রতি বর্ষা মৌসুমে নদীতে পাহাড়ি ঢল এলে তলিয়ে যায় পাড়াটি। এই অবস্থায় নদীর চরটি কেটে ফেলা হলে চলতি বর্ষা মৌসুমেই ভাঙন সৃষ্টি হয়ে নদীর গর্ভে পাড়াটি বিলিন হওয়ার শংকা করছেন। ফলে সাঙ্গু নদীর চরটি রক্ষায় প্রশাসনের হস্থক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

নদীর চরটির মালিক দাবি করা চাইচা থোয়াই মারমা জানান, ৩৫ হাজার টাকা চুক্তিতে বালাঘাটা এলাকার নাজিম নামে এক ব্যাক্তিকে বালি তোলার অনুমতি দিয়েছেন। তবে নদীর চর থেকে বালি উত্তোন বা বিক্রি করা যে অপরাধ তা তার জানা ছিল না।

এই বিষয়ে মো. নাজিম উদ্দীন জানান, নদীর চর থেকে বালি উত্তোলন করে বিদ্যুৎ উপ-কেন্দ্রের জমি ভরাটের বিষয়ে জানা নেই তার। তবে ঠিকাদারের সাথে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ভরাটের জন্য সম্রাট নামে এক ব্যক্তির চুক্তি হয়েছে বলে শুনেছি।

এবিষয়ে হোসেইন মোহাম্মদ সম্রাট জানান, বিদ্যুৎ উপ-কেন্দ্রটি ভরাটের দরপত্র আহব্বানের সময় তিনি ৩য় লোএস্ট ছিলেন। পূর্ববর্তীরা বালির পরিবর্তে পাহাড় কেটে মাটি দেয়ায় তাদের চুক্তি বাতিল হলে বর্মাতনে তিনিই বালু সর্বরাহ করছেন।

এছাড়া এলাকায় উন্নয়ন কাজ হলে ওই এলাকা থেকেই সকলেই বালু নিয়ে কাজ করেন বলে জানান তিনি।
বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্রতা (ইউএনও) মারুফা সুলতানা খান হীরামনি বলেন, নদীর চর থেকে বালু উত্তোলনের সাথে সম্রাট নামে এক ব্যাক্তির সংশ্লিষ্টতার খবর পেয়েছি।এছাড়া আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করতে ঘটনাস্থলে তিনি যাচ্ছেন।


উল্লেখ্য, গত ২৮ মে  বান্দরবান সদর উপজেলার বালাঘাটা বাকিছড়া, থোয়াইংগ্যা পাড়া এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে মো. নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ২৯ মে বান্দরবান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফা সুলতানা খান হীরামণি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। পরে একই অপরাধে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আরও ২টি মামলা দায়ের করা হয়।

শিহাব

×