
বিয়ানীবাজার-শেওলা-জকিগঞ্জ সড়কটি এখন মরণফাঁদে পরিণত
সিলেটের সীমান্তবর্তী জনপদ জকিগঞ্জের সঙ্গে সিলেট শহরের যোগাযোগ রক্ষাকারী বিয়ানীবাজার-শেওলা-জকিগঞ্জ সড়কটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ছোট-বড় গর্তে বেহাল ২২ কিলোমিটার রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করছে। এতে ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। এক দশকের বেশি সময় ধরে কোনো সংস্কার না হওয়ায় শেওলা-জকিগঞ্জ রোড মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। বর্ষায় গর্তে জমে থাকা পানি আর কাদার কারণে যানবাহন আটকা পড়ে একদিকে যেমন ঘটছে দুর্ঘটনা, অপরদিকে সড়কে তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট। আবার শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালির দাপটে রাস্তায় চলা দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।
স্থানীয়দের মতে, রাস্তাটি শুধু জকিগঞ্জ নয়, কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজারসহ পুরো পূর্ব সিলেট অঞ্চলের মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ যাতায়াতের পথ। অথচ বছরের পর বছর ধরে সেটা যেন দেখার কেউ নেই। এ ব্যাপারে উপসহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম জানান, ২কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ চলছে। ২মাস পূর্বে শুরু হওয়া এই কাজ চলতি মাসেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে এটাকে প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তাদের মতে রাস্তাটির বেহাল দশা দেখে বুক কাঁপে। প্রতিদিন এই পথে শিক্ষার্থী, রোগী, কর্মজীবী মানুষ চলাচল করে। একজন অসুস্থ রোগী যদি সময়মতো হাসপাতালে না পৌঁছায়, তার মৃত্যুর দায় কে নেবে? স্থানীয় বাসিন্দারা মানুষের দুঃখ-দুর্দশার স্থায়ী সমাধানে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।
সিলেট জেলা বিএনপির ১ম সহসভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন এলাকার উন্নয়ন বঞ্চনার ফিরিস্তি তুলে ধরে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন সংশ্লিষ্টরা কাজ না করলে দুই উপজেলার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি মাঠে আন্দোলনে নামবে। সীমান্তবর্তী উপজেলা হলো জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট। উন্নয়ন বঞ্চিত এ দু’উপজেলা নিয়ে সংসদীয় সিলেট-৫ আসন। গত ১৭ বছরে দুই উপজেলায় কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। যে কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত দুই অঞ্চলের মানুষ। অবস্থাদৃষ্টে বলা চলে ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেব কোথা’। বেহাল অবস্থার কারণে বর্তমানে সড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগ হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে দ্রুত সড়ক মেরামতের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
এ ইস্যুতে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতেও যোগাযোগ করেও ফলপ্রসূ না হওয়ায় এবার আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। মামুনুর রশিদ বলেন, জেলা সদর থেকে প্রায় ১০০ কি.মি দূরে জকিগঞ্জ এবং কানাইঘাটেরও দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। জেলা সদর হতে এমন দূরবর্তী উপজেলা বাংলাদেশের অন্য কোথাও খুব কমই আছে। গত ২০২২ সালের বন্যার পর এই দুই উপজেলার ছোট-বড় সব রাস্তার অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে পড়ে। প্রধান সড়কগুলোর সমস্যাও নাজুক। উপজেলার প্রত্যেকটি রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করছে। এছাড়াও উপজেলা ও পৌর এলাকার সকল ফিডার রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দ ও গর্ত তৈরি হয়ে অবস্থা বেহাল ধারণ করেছে। কানাইঘাট উপজেলার চিত্র আরও ভয়াবহ। জেলা সদরের সঙ্গে কানাইঘাট উপজেলার যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা গাজী বুরহান উদ্দিন সড়কটি যেনো নরকের পথ হয়ে আছে।
এসব সড়কে আওয়ামী লীগের আমলে কোনো ধরনের উন্নয়ন হয়নি। এরপরও বন্যায় আরেক দফা ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। সম্পূর্ণ রাস্তায় বড় বড় গর্ত ও খানা-খন্দকে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়া কানাইঘাট-দরবস্ত রাস্তা, গাছবাড়ি-হরিপুর রাস্তা, কানাইঘাট-সুরইঘাট রাস্তা, চতুল-সুরইঘাট-বড়বন্দ রাস্তাসহ উপজেলা ও পৌর এলাকার প্রত্যেকটি ফিডার রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। রাস্তাগুলোতে প্রতিদিন নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাগামী কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। বিশেষ করে ডেলিভারি ও জটিল রোগীদেরকে নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ নেই। বিএনপি গণমানুষের দল হিসেবে জনগণকে এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু কার্যকরী কোনো ফল পায়নি।
উপজেলার সুরমা, কুশিয়ারা ও লোভা নদীর ভাঙনের ফলে ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, রাস্তাঘাট, বসতভিটা হুমকির সম্মুখীন রয়েছে। ইতোপূর্বে নদীভাঙনে অনেক কিছু হারিয়েছে উপজেলাবাসী। লোভা, সুরমা ও কুশিয়ারা দুই তীরের অংশগুলো এখন অরক্ষিত। সেখানে নতুন বাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি পুরাতন বাঁধ মেরামত এখন সময়ের দাবি।