ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রায়পুরে কিশোরী বধু সামিয়ার জীবন ক্ষতের গল্প!

নিজস্ব সংবাদদাতা, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ১৭:৩২, ১১ জুন ২০২৫

রায়পুরে কিশোরী বধু সামিয়ার জীবন ক্ষতের গল্প!

ছবিঃ সংগৃহীত

একজন কিশোরী গৃহবধূ। বয়স মাত্র ১৮। কোলে সাত মাসের শিশু। চোখে ভবিষ্যতের স্বপ্ন নয়, কেবল আতঙ্ক, লজ্জা আর ক্ষোভ। এই বয়সেই ঘর আর ভালোবাসার আশ্রয় হারিয়ে হাসপাতালে আশ্রয় নিতে হয়েছে সামিয়া আক্তারকে। কারণ, তিনি তার স্বামীর জন্য এক লাখ টাকা এনে দিতে পারেননি।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার এক হৃদয়বিদারক ঘটনা এটি। সামিয়া আক্তার—উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের খাসেরহাট বাজারের হাওলাদার বাড়ির পুত্রবধূ। মাত্র দেড় বছর আগে তার বিয়ে হয় সাহাবুদ্দিন হাওলাদারের সঙ্গে। কয়েক মাসের সংসারজীবন ভালো চললেও এরপর থেকে শুরু হয় নির্যাতন। প্রথমে মানসিক, পরে শারীরিক। এবং এখন—নৃশংসতা।

গত সোমবার (৯ জুন) বিকেলে সামিয়াকে ঘরে আটকে রেখে মারধর করা হয়। তারপর দা দিয়ে তার মাথার চুল কেটে দেন স্বামী সাহাবুদ্দিন। কারণ? হত্যামামলা থেকে বাঁচতে সাহাবুদ্দিন তার শ্বশুর, প্রবাস ফেরত আবদুল গনির কাছ থেকে আরও এক লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। এর আগেও দু’লাখ টাকা আদায় করেছেন তিনি। এবার না পেয়ে সেই ক্ষোভ গিয়ে পড়ে সামিয়ার উপর।

চিকিৎসাধীন সামিয়া বুধবার দুপুরে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “ও বলে, টাকা দে, না হলে তোকে শিখায়া দিমু। আমি ছোট একটা বাচ্চা নিয়ে কী করতাম? মাথার চুল কেটে দিল দা দিয়ে!”

চোখে পানি ধরে রাখতে পারেন না সামিয়ার বৃদ্ধ দাদি। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিবেশী নারী বলেন,
“এত কষ্ট কেউ নিজের বোনের সাথেও করে না। সামিয়া শুধু গরিব ঘরের মেয়ে বলেই তার এই অবস্থা।”

ঘটনার পর স্থানীয় পুলিশ ও সামিয়ার বাবার সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করা হয়। তবে সাহাবুদ্দিন ও তার বোন আসমা এখন পলাতক।

এই ঘটনার গভীরে গেলে উঠে আসে আরও ভয়ঙ্কর এক রাজনৈতিক ছায়া। গত ৭ এপ্রিল খাসেরহাট ও চরবংশীতে বিএনপি ও কৃষকদলের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে স্পেনপ্রবাসী যুবদল নেতা সাইজুদ্দিন নিহত হন। সেই মামলার আসামিদের তালিকায় রয়েছে সাহাবুদ্দিনের নামও। এ মামলাতেই বাঁচতে সে শ্বশুরের কাছ থেকে টাকা তুলছিল। এই রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হয়ে গেছে এক নিরীহ কিশোরী স্ত্রী।

শাশুড়ি জাহানারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “আমি বৃদ্ধ মানুষ, প্রতিবাদ করলে আমাকেও ছাড়ে না। ছেলেমেয়ে যা করত, আমি বাধা দিলেও মারধর করত। এখন যা হয়েছে, এর বিচার হওয়া উচিত।”

রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, “ঘটনাটি আমার জানা ছিল না। এখনই জানলাম। খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মারিয়া

×