ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্রতিদিন হাসপাতালে আসছে ১০০ শিশু রোগী, গড়ে ভর্তি প্রায় তিনশত

ময়মনসিংহে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা, অস্থির জনজীবন

শেখ আব্দুল আওয়াল, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ১৭:১২, ১১ জুন ২০২৫

ময়মনসিংহে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা, অস্থির জনজীবন

ছবিঃ জনকণ্ঠ

ময়মনসিংহে গত চার দিন ধরে তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ। পবিত্র ঈদ-উল-আযহার আগের দিন থেকে বৃষ্টির দেখা নেই। জেলা জুড়ে বিরাজ করছে মৃদু তাপপ্রবাহ। গরমের কারণে জনজীবন অস্বস্তিতে পড়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছে না। গরমে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। শুধু মানুষই নয়, গরমে হাঁসফাঁস করছে পশুপাখিরাও।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রোদ আর গরমে অন্যান্য দিনের তুলনায় রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা। বন্ধ রয়েছে হাটবাজারের বেশিরভাগ দোকানপাট। জরুরি প্রয়োজনে বাড়ি থেকে যারা বের হয়েছেন, গরমে তাদের করুণ অবস্থা। মানুষজন পথের ধারে গাছতলায় ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। গবাদিপশু গাছের ছায়ায় বেঁধে রাখলেও গরমে হাঁসফাঁস করছে। এদিকে প্রচণ্ড গরমে মাঠের কাজে গিয়ে টিকতে পারছেন না দিনমজুর ও কৃষকরা।

গফরগাঁও উপজেলার ষোলাহসিয়া গ্রামের কৃষক নুরু মিয়া বলেন, "এখন আমনের বীজতলা তৈরির সময়। সকালে বীজতলার জমিতে পানি দিয়েছি। পাওয়ার টিলার নিয়ে সেই জমি চাষ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বেশি রোদ আর গরমে জমিতে বেশিক্ষণ টিকতে পারিনি। এখন পাওয়ার টিলার নিয়ে ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছি।"

একই এলাকার দিনমজুর ফজলুল হক জানান, "আমি পাশের এক কৃষকের লেবু ক্ষেতে নিড়ানি দেওয়ার কাজে গিয়েছিলাম। কাজে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই জামা-লুঙ্গি ঘামে ভিজে গেছে। প্রচণ্ড গরমে জমিতে আর কাজই করা হয়নি আমার।"

নগরীর নতুন বাজারের ফল ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, "বেশ কিছু গেরস্ত বাড়িতে ধান কিনে রেখেছি। সেই ধান গুদামে আনার জন্য গতরাতে বেশ কয়েকজন ভ্যানচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু আজকে মাত্র একজন ভ্যানগাড়ি নিয়ে এসেছে। সেও বাজারের অদূরের একজনের বাড়ি থেকে সামান্য কিছু ধান গুদামে আনতে পেরেছে। গরমে সে আর টিকতেই পারেনি। আমার ব্যবসাও ঈদের পর থেকে অনেকটা থমকে গেছে।"

ভ্যানচালক আবুল কালাম বলেন, "সকালে গাড়িতে করে ফার্নিচার নিয়ে আসছি, কিন্তু তীব্র গরমে গাড়ি চালাতে খুব কষ্ট হয়েছে। এত গরমে কাজ করা খুব কঠিন। তবুও গাড়ি নিয়ে বের হতে হয়, কাজ না করলে খাব কী?"

সুতিয়ালী গ্রামের অটোরিকশা চালক নজরুল ইসলাম বলেন, "ঈদের সময় সাধারণত রাস্তায় যাত্রী বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু গরমের কারণে এবার ঘটেছে উল্টো ঘটনা। গরমে রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা। মানুষ ঘর থেকে বেরই হচ্ছে না। ফলে আমাদের আয়-রোজগার কমে গেছে।"

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জমশেদ আলম জনকণ্ঠকে বলেন, "ঈদের পর থেকে প্রতিদিন প্রায় একশো শিশু চিকিৎসা নিতে আসছে। বর্তমানে গড়ে প্রায় ৩শ’ রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে, আবার কেউ ছুটি নিয়ে চলে যাচ্ছে।"

আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে ময়মনসিংহ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সহকারী ইনচার্জ মোঃ এমদাদুল হক জনকণ্ঠকে জানান, "গতকাল জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আজ জেলা জুড়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ফলে গরম অনুভূত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় একই পরিস্থিতি বিরাজমান থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ১৩ জুন বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে।"

ইমরান

×