ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চুরির অপবাদ দিয়ে শিকলে বেঁধে যুবককে রাতভর নির্যাতন

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজবাড়ী

প্রকাশিত: ১৫:২৪, ১১ জুন ২০২৫

চুরির অপবাদ দিয়ে শিকলে বেঁধে যুবককে রাতভর নির্যাতন

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে চুরির অপবাদ দিয়ে মোঃ আমিন মোল্যা (২৬) নামে এক যুবককে শিকলে বেঁধে রাতভর নির্যাতন ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে খেজুরের কাঁটাবিদ্ধ করা হয়েছে।

তিনি বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের খোর্দ্দরামদিয়া গ্রামের মোমিন মোল্যার ছেলে। আমিন ভ্যান চালিয়ে ও ডাবের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বর্তমানে তিনি রাজবাড়ী জেলা কারাগার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে খোর্দ্দরামদিয়া গ্রামে গিয়ে নির্যাতনের ১৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, শিকলে বেঁধে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করা হচ্ছে, বিশেষ করে পায়ে। মারধর করছেন লাল চাঁদ খান, কোরবান শেখ এবং খেজুরের কাঁটা বিদ্ধ করছেন তরিপ খান। পাশে ১০-১৫ জন দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউ বাধা দেয়নি।

আমিন মোল্যার বাবা মোমিন মোল্যা বলেন, “গত ২৯ মে রাত ১২টার দিকে নয়ন, ঠান্ডু, তুহিনসহ চারজন আমার বাড়িতে আসে। তারা বলে, আমিন রাতে শাহজাহান খানের বাড়িতে পেঁয়াজ চুরি করতে গিয়েছিল, তবে কেউ তাকে ধরতে পারেনি। আমিন বাড়ি ফিরলে তাকে জিজ্ঞাসা করি—তুমি কি চুরি করতে গিয়েছিলে? সে তখন আমার সঙ্গে শাহজাহানের বাড়িতে শুনতে যায়। সেখানেই লাল চাঁদ খান, কোরবান শেখ, তরিপ খান, জহির শেখ, মারুফসহ লোকজন ঠান্ডু খানের বাড়িতে তাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর শিকলে বেঁধে রাতভর নির্যাতন করে। আমি ভয়ে বাড়ি চলে আসি। রাতে দুইবার এবং সকালে একবার আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। বলে, গিয়ে ছেলেকে নিয়ে আসো। আমি বলি, তোরা তো ছেলেকে মেরেই ফেলেছিস, আমি নিতে পারবো না। আমি গরিব ভ্যানচালক, তাই তো তোরা ছেলেকে এভাবে মারলি। ভয়েই তখন ছেলেকে জিম্মায় নিতে পারিনি।”

তিনি আরও বলেন, “আমার ছেলের বউয়ের মামলায় ওয়ারেন্ট ছিল। সেই সুযোগে তারা থানা পুলিশকে খবর দিয়ে আমিনকে সোপর্দ করে। পরে পুলিশ তাকে আদালতে চালান দিলে তিনি কারাগারে পাঠানো হন। এখন তিনি কারা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। আমি নির্যাতনকারীদের বিচার দাবি করছি।”

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আমিন মোল্যা একজন গরিব মানুষ। তাকে এভাবে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি, কারণ চুরির সময় কেউ তাকে হাতেনাতে ধরতে পারেনি। প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদও করতে পারেনি।

ঠান্ডু খান বলেন, “স্যান্ডেল ও গামছা পাওয়া যায়। আমি ও আরও তিনজন তাদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিই। পরে আমিন আমাদের বাড়িতে শুনতে এলে লোকজন তাকে ধরে মারধর করে। আমি তাকে মারধর ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু একা কিছু করতে পারিনি।”

তবে অভিযুক্ত শাহজাহান খানের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এ সময় শাহজাহানের স্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমি বাড়িতে ছিলাম না। পেঁয়াজ চুরি করতে এসেছিল, তখন আমার ছোট ছেলে সুমন দেখে ফেললে সে গলা চেপে ধরে পালিয়ে যায়। পরে সে আমাদের বাড়িতে শুনতে এলে লোকজন তাকে ধরে মারধর করে।”

বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জামাল উদ্দিন বলেন, “লোকজন আমিন মোল্যাকে ধরে চৌকিদারসহ থানায় নিয়ে আসে। আমরা দেখি তার বিরুদ্ধে একটি ওয়ারেন্ট রয়েছে। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। তবে চুরির ঘটনা বা নির্যাতনের বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

রাজবাড়ী জেলা কারাগারের জেল সুপার মোঃ এনামুল কবির বলেন, “আমিন কারা হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর এখন ওয়ার্ডে আছেন।”

সজিব

×