
ঈদের ছুটিতে গুলিস্তানের শহীদ মতিউর পার্ক ছিল বিনোদনপ্রেমীদের পদচারণায় মুখর
পবিত্র ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটিতে দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে উপচেপড়া ভিড় দেখা দিয়েছে। এই প্রথমবার ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে টানা ১০ দিনের ছুটি পেয়েছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। গত ৫ জুন থেকে শুরু হওয়া এই ছুটি চলবে আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত। ১০ দিনের টানা ছুটিতে দেশের পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম পরিলক্ষিত হচ্ছে। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে এই পদচারণা, যা চলবে আগামী শনিবার পর্যন্ত। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে আছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই আগত পর্যটকরা উত্তাল সাগরে গোসলে মত্ত হয়ে আছেন। ঢেউয়ের সঙ্গে করছেন মিতালি। প্রচ- তাপপ্রবাহের কারণে একটু স্বস্তি খুঁজতে শত শত পর্যটক গোসলে মত্ত হয়েছেন। বিশেষ করে শিশু-কিশোর বয়সীরা সৈকতের বেলাভূমে আমুদে সময় কাটাচ্ছে। তারা বালিয়াড়িতে মাখামাখিতে ব্যস্ত রয়েছে। সৈকতের শূন্য পয়েন্ট থেকে দুইদিকে পর্যটকের পদচারণায় বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। যেন দীর্ঘদিন পরে প্রাণের স্পন্দন ফিরেছে কুয়াকাটায়। ছাতা বেঞ্চিতে বসে সাগরের নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করছেন তারা। আবার কেউ শিশু সন্তানদের সঙ্গ দিচ্ছেন।
দীর্ঘ সৈকতের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরছেন শত শত পর্যটক। খাজুরার মোহনা থেকে গঙ্গামতী লেক পর্যন্ত প্রকৃতির এই সৌন্দর্য অবলোকন করছেন আগতরা। সোমবার বিকেল থেকে পর্যটকের চাপ বেড়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত শতকরা ৯০ ভাগ হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট বুকিং রয়েছে। তবে বিচঘেঁষা হোটেলগুলো পর্যটকে পরিপূর্ণ রয়েছে। তারকা ও আধুনিক সেবা সংবলিত হোটেলগুলোতেও শতভাগ গেস্ট রয়েছে।
রাঙ্গামাটি ॥ পবিত্র ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটিতে রাঙ্গামাটির দৃষ্টিনন্দন মনোলোভা পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। পাহাড়ঘেরা কাপ্তাই হ্রদের তীরে গড়ে উঠা পর্যটন স্পটগুলো আগে থেকেই পর্যটক বরণের জন্য নানা সাজে সজ্জিত হয়ে আছে। হ্রদবেষ্টিত পাহাড়ি শহর রাঙ্গামাটি এখন পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। রাঙ্গামাটি শহরের বেশকিছু পর্যটন স্পট ঘুরে দেখা গেছে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। রাঙ্গামাটির অন্যতম আকর্ষণীয় ডিয়ার পার্ক, ঝুলন্ত ব্রিজ, পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক, সুভলং ঝরনা, চাকমা রাজার বাড়ির কামান, গাঙ সাবারাং, বার্গী লেকভ্যালি, বেরাইন্না, বরগাঙ, রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্ট, আসাম বস্তি-কাপ্তাই সংযোগ সড়ক অন্যতম। দৃষ্টিনন্দন এই স্পটগুলো ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে।
গত ৩ দিন রাঙ্গামাটিতে প্রচ- গরম অনুভূত হচ্ছে। রোদের তীব্রতা উপেক্ষা করে সারাদিন কাপ্তাই হ্রদ ও সুবলং ঝরনায় গা ভিজিয়ে শরীর শীতল করার চেষ্টা করছেন ভ্রমণকারীরা। এবার ঈদের বেশি ছুটি এখনো হাতে থাকায় আরও পর্যটকের সমাগম হ্রদমুখী হবে বলে প্রত্যাশা স্থানীয় পর্যটন উদ্যোক্তাদের। অন্য বছর ঈদ উপলক্ষে ৪-৫ দিনের সরকারি ছুটি থাকলেও এবারই প্রথম ১০ দিনের টানা ছুটি পেলেন সরকারি চাকরিজীবীরা। এতে ঈদ উদ্যাপন ছাড়াও দেশের বিভিন্ন পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে পর্যটন মৌসুমের চেয়ে এবার পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। ইতোমধ্যে পর্যটকদের মানসম্মত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্নের কথাও জানান পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম ॥ এবার ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি। ছুটির আনন্দ উপভোগে চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ পতেঙ্গা, ফয়’স লেকে ঘুরে বেড়িয়েছেন উৎফুল্লচিত্তে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে নানা বয়সী মানুষ ঈদের দ্বিতীয় দিন রবিবার থেকে সমুদ্র সৈকতসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িয়েছেন। ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিন রবিবার ও তৃতীয় দিন সোমবার ছিল পতেঙ্গা সৈকত, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ও ফয়’স লেকে ভিড়। রবিবার দুপুরের পর থেকেই সৈকত এলাকায় হাজার হাজার মানুষ সমবেত হতে শুরু করে। সন্ধ্যার পরও যা অব্যাহত ছিল। সোমবার ও মঙ্গলবার পতেঙ্গা সমুদ্র দর্শনে অনেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন।
পশু কোরবানি ও অতিথি আপ্যায়নে যেসব মানুষ ঈদুল আজহার দিন বের হতে পারেননি তারা কয়েকদিন পর সপরিবারে বের হয়েছেন শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে। তবে বরাবরের মতো এবারও পতেঙ্গা সৈকতে যাওয়া-আসায় পরিবহন বিড়ম্বনায় পড়ে দর্শনার্থীরা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং গাড়ির সংকটের কারণে সৈকতে আসা দর্শনার্থীরা ঈদের ছুটিতে প্রতিদিনই সমস্যায় পড়েছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ঈদের ছুটির প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের ঢলে মুখরিত ছিল পতেঙ্গা।
শেরপুর ॥ ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে শেরপুরের গারো পাহাড়ি এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। মঙ্গলবার পর্যন্ত ঈদের তিনদিন পরও গারো পাহাড়ের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী অবকাশ এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা ইকোপার্কে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর অবস্থা দেখা গেছে। পাহাড়ের সবুজ গাছগাছালি আর মায়াময় ছায়ার পাশাপাশি নান্দনিক স্থাপনা ও রাইডে দর্শনার্থীদের মাতামাতি এক ভিন্ন আবহের সৃষ্টি করেছে। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ভিড় জমাচ্ছেন প্রকৃতির সান্নিধ্যে ঈদ আনন্দ উৎসবে।
ফলে প্রচ- গরম ও তপ্ত রোদও পর্যটকদের এই আনন্দ উৎসবে বাধা হতে পারেনি। মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ঈদের চতুর্থ দিনে গজনী অবকাশ কেন্দ্র হয়ে ওঠেছে ভ্রমণপিপাসুদের মিলনমেলা। ঈদের দিন বিকেল থেকেই কেন্দ্রে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। গরম ও রোদ উপেক্ষা করে দর্শনার্থীরা গজনীতে ঘুরছেন। বিশেষ করে তরুণদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
ভোলা ॥ ঈদের ছুটিতে দ্বীপ জেলা ভোলার বিনোদন স্পটগুলোতে এখন ভ্রমণপিপাসুদের উপচেপড়া ভিড়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঈদ করতে বাড়িতে আসা বিভিন্ন বয়সী মানুষ ও দর্শনার্থীদের আনা-গোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে ভোলার বিভিন্ন পর্যটন স্পট । সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদের লম্বা ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়তি আনন্দ উপভোগ করতে ভোলার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে সব বয়সী মানুষের ঢল নেমেছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ঈদ আনন্দে মেতে উঠছে শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী মানুষ। কেউ ভোলার মেঘনা নদীর উত্তাল ঢেউ আর নদীর তীরে বসে নির্মল ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করছেন।
সিলেট ॥ ৬ দিন বন্ধ থাকার পর পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্র। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত ৩০ মে থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ৬ জুন থেকে উপজেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির সদস্যগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া কিছুটা অনুকূলে থাকায় সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোতে উপস্থিতির হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঈদের দিন থেকে পর্যটকরা ছুটে আসছেন সিলেটে।
মাগুরা ॥ ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে মাগুরার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড় জমেছে। শহরের নোমানী ময়দান, নবগঙ্গা নদীর তীর, সিরিজদিয়া ইকোপার্ক, পারনান্দুয়ালী পৌরপার্ক, মহম্মদপুর রাজা সীতারাম রায়ের রাজবাড়ি, শ্রীপুরের মুজদিয়ার কবি কাদের নেওয়াজের বাড়ি কবি ভবন প্রভৃতি স্থানে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে দর্শকদের ভিড় জমেছে। প্রতিদিন এসব স্থানে দর্শকদের ব্যাপক ভিড় দেখা যাচ্ছে।
বরিশাল ॥ পবিত্র ঈদুল আজহার টানা ১০ দিনের ছুটিতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বরিশালের সবকটি বিনোদন কেন্দ্র। পরিবার-পরিজন নিয়ে মানুষ ছুটেছেন এসব বিনোদন কেন্দ্রে। উপভোগ করছেন ঈদের আনন্দ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। দর্শনার্থীদের পদচারণায় নগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্র উৎসবমুখর জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। ঈদের দিন বিকেল থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত নগরীর ঐতিহ্যবাহী বেলস্ পার্ক, প্লাটেন পার্ক, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, স্বাধীনতা পার্ক, ত্রিশ গোডাউন, শহরের পাশে চরবাড়িয়া নদীর পাড়ের বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।