
ঈদের মাত্র একদিন বাকি। সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। তারই মাঝে ঘরমুখো মানুষের ঢল সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। আবহাওয়ার দুর্বিষহ অবস্থা, অতিরিক্ত ভাড়া, সময়সূচীর বিশৃঙ্খলা আর চাপা উত্তেজনায় এবার ঈদের লঞ্চযাত্রা যেন দুর্ভোগের আরেক নাম।
এই চরম ভোগান্তির মধ্যেই ঘটলো এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দুজন শিশু সহ এক নারী রেলিং ধরে লঞ্চে উঠতে গিয়ে সরাসরি নদীতে পড়ে যান। মুহূর্তেই চারপাশে হৈচৈ পড়ে যায়। সৌভাগ্যবশত, লঞ্চের স্টাফরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের উদ্ধার করেন। কিন্তু এত বড় ঘটনার পরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিআইডব্লিউটিএ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এক প্রত্যক্ষদর্শী অভিযোগ করেন, “ওরা টাকা খায়, এসব দেখে না। এই দুর্ঘটনাটা রেলিংয়ের অবহেলার কারণেই হয়েছে।”
সকাল থেকে সদরঘাটে ছিল উপচে পড়া ভিড়। কেউ ভেবেছিলেন নির্ধারিত সময়ে লঞ্চ ছাড়বে, কেউ বা গাদাগাদি ভিড়ে ঠেলাঠেলি করে লঞ্চে উঠেছিলেন। কিন্তু সময় মতো লঞ্চ ছাড়েনি বেশিরভাগই। যাত্রী না পেয়ে কিছু লঞ্চ কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত ছাড়েনি, আবার অতিরিক্ত যাত্রী তোলার আশায় পূর্ণ লঞ্চেও ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত দেরি। এতে যাত্রীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন, প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে একপর্যায়ে লঞ্চ ম্যানেজারদের সঙ্গে হাতাহাতির পরিস্থিতিও তৈরি হয়।
একজন ক্ষুব্ধ যাত্রী বলেন, “আমরা সকাল ৮টা থেকে এসেছি। এখন বাজে ১০টা। বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কেউ বলে যমুনা লঞ্চ যাবে, কেউ আবার বলে বুকিং লাগবে। কোনো ঠিক নাই!”
শিডিউল বিপর্যয়ের অন্যতম উদাহরণ ছিল এমভি ফারহান থ্রি ও এমভি ফারহান এইট লঞ্চ। অতিরিক্ত যাত্রী তোলা ও বিলম্বের কারণে কোস্টগার্ড অভিযান চালায়। যদিও কোনো জরিমানা বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তবুও তারা জোর করে লঞ্চ ছাড়াতে বাধ্য করে। অবশেষে যাত্রা শুরু হলে যাত্রীরা হাততালি দিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেন।
কোস্টগার্ড জানায়, নদীপথে টহল বাড়ানো হয়েছে, স্পিডবোট দিয়ে নজরদারি করা হচ্ছে যাতে কোনো দুষ্কৃতিকারী ঈদের ভিড়ে নাশকতা করতে না পারে। যাত্রীদের জন্য হটলাইন নম্বরও দেওয়া হয়েছে, যাতে যে কোনো সময় অভিযোগ জানানো যায়।
তবে এবারের ঈদে সড়কপথে যাত্রার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় লঞ্চ মালিকরা যাত্রীসংখ্যা নিয়ে অসন্তুষ্ট। অনেক যাত্রীই আবহাওয়া ও ভোগান্তি এড়াতে বিকল্প পথ বেছে নিয়েছেন।
সব মিলিয়ে, এবারের লঞ্চযাত্রা হয়ে উঠেছে এক দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা। ঈদ মানেই আনন্দ, কিন্তু সেই আনন্দের যাত্রা যদি হয় ঝুঁকিপূর্ণ আর অনিশ্চিত, তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?
মিমিয়া